ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চশিক্ষায় ভর্তি

প্রকাশিত: ২০:৪০, ১৩ অক্টোবর ২০২০

উচ্চশিক্ষায় ভর্তি

করোনা মহামারীর কারণে এবারে কোন পরীক্ষা ব্যতিরেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ঢালাওভাবে পাস করিয়ে দেয়া হয়েছে। ১ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও লকডাউনসহ সমূহ সংক্রমণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অবশ্য এর ফল ভাল নাকি মন্দ তা নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। প্রকৃত অর্থে মেধাবীরা পরীক্ষা আদৌ অনুষ্ঠিত না হওয়ায় কিছুটা হলেও হতাশ হয়েছে। কেননা উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হতে গেলে এবং বিদেশেও শিক্ষার জন্য ভর্তিচ্ছু হলে উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এমনকি চাকরির বাজারেও এর মূল্যায়ন করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রক অবশ্য বলেছে, জেএসসি ও এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে এইচএসসির ফল। তা হলেও এটা তো সত্যি যে, ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে। তা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত কাজটি যত সহজ ভাবা হচ্ছে তত সহজ হবে না। উদাহরণত বলা যায়, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ কলেজের চেয়ে ভিন্ন। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। ফলে কারিগরি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে জটিলতা দেখা দিতে পারে। যাই করা হোক না কেন, নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে যে, মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন কোন ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি না হয়। তদুপরি যোগ্য ও মেধাবীরা যাতে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সুযোগ পায় সেদিকেও তাদের নজরদারি থাকতে হবে। প্রশ্ন রয়েছে এখানেও। চাইলেই সবাই ভর্তি হতে পারবেন কিনা! ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশনের (ইউজিসি) হিসাবমতে ৪৬টি সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সরাসরি ভর্তি করা ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ৬০ হাজারের মতো। বাকি আসন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজ, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যালসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৭টি। এগুলোর মধ্যে মুষ্টিমেয় সংখ্যক মানসম্মত, লেখাপড়ার খরচও ব্যয়বহুল, যা মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র অভিভাবকের আয়ত্তের বাইরে। আরও রয়েছে উন্মুুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ। সব মিলিয়ে উচ্চশিক্ষায় মোট আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ লাখের কাছাকাছি। অথচ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ১৩ লাখের বেশি। বাদবাকি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা যাবে কোথায়? ইউজিসি অবশ্য বলেছে, অতীতের অভিজ্ঞতায় তারা দেখেছে যে, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সব আসন পূরণ হয় না। ফলে শেষ পর্যন্ত ভর্তি নিয়ে সমস্যা তেমন তীব্র ও প্রকট হবে না। তবে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ আরও সম্প্রসারিত করা গেলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমাসহ উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের একটি সুব্যবস্থা হতে পারে। কেননা, দেশে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, শিক্ষা একটি অধিকার। এ থেকে বঞ্চিত করা যায় না কোন শিক্ষার্থীকে। করোনা মহামারীতে জাতীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হলেও সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা খাত। সংক্রমণের ভয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ক্লাসরুমে ফিরে যেতে পারেনি। এখনও পারছে না। ফলে বঞ্চিত হয়েছে ও হচ্ছে নিয়মিত পাঠ্যক্রম ও ব্যবহারিক কার্যক্রম থেকে। এতে স্বভাবতই শিক্ষার মানও নেমে গেছে অনেক নিচে- শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রযোজ্য। এই সমূহ ক্ষতি শিক্ষার্থীরা কিভাবে পুষিয়ে নেবে তা নিয়ে ভাবতে হবে শিক্ষা মন্ত্রকসহ নীতিনির্ধারক ও শিক্ষাবিদদের। তা না হলে পিছিয়ে পড়বে দেশ ও জাতি। পশ্চাৎমুখী হতে পারে অগ্রগতি ও উন্নয়ন। তদুপরি করোনাকে মোকাবেলা করেই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে চালিয়ে যেতে হবে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম।
×