ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পৃথিবীকে রক্ষায় জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর চার প্রস্তাব

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ২ অক্টোবর ২০২০

পৃথিবীকে রক্ষায় জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর চার প্রস্তাব

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় সুনির্দিষ্ট চার দফা প্রস্তাব পেশ করে বিনিয়োগের সময় ‘টেকসই ভবিষ্যত’ নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকালে) নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের সাইডলাইনে ভার্চুয়াল জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে দেয়া বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান। ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জরুরী পদক্ষেপ’ শীর্ষক এই ইভেন্টে প্রধানমন্ত্রী তার প্রথম প্রস্তাবে বলেন, পৃথিবী এবং আমাদের রক্ষার জন্য বিনিয়োগের সময় টেকসই ভবিষ্যতের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তার দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গবেষণার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বৃহত্তর গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং জাতীয় পর্যায়ে আইন-কানুন জোরদার করা এবং নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া জীববৈচিত্র্য রক্ষার মূল পদক্ষেপ। তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, জেনেটিক রিসোর্স এবং ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানের প্রকৃত মালিকদের জন্য বিশ্বব্যাপী সুফল বাটোয়ারার প্রবেশাধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। চতুর্থ প্রস্তাবে তিনি বলেন, প্যারিসের (সনদ) লক্ষ্য অর্জন আমাদের বিলুপ্তি এবং টিকে থাকার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করতে পারে। আমাদের অবশ্যই সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের জন্য জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জরুরী পদক্ষেপের বিষয়ে ‘সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি আন্তঃনির্ভরশীল বিশ্বে বাস করি, যেখানে পৃথিবী গ্রহের প্রতিটি প্রজাতি আমাদের বাস্তুসংস্থানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তিনি উল্লেখ করেন, ডব্লিউডব্লিউএফ এবং লন্ডন জিওলজিক্যাল সোসাইটির মতে, ১৯৭০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বন্য প্রাণীর সংখ্যা গড়ে ৬৮ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ মিঠা পানির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিঠা পানির জীববৈচিত্র্য বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত হারে হ্রাস পাচ্ছে, বৈশ্বিক জলাভূমির ৮৫ শতাংশ ইতোমধ্যে শিল্প বিপ্লবের পরে হারিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ১৯৭০ সাল থেকে মিঠা পানির স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, উভচর, সরীসৃপ ও মাছের সংখ্যা প্রতি বছর গড়ে ৪ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়িয়ে তুলছি এবং ফলস্বরূপ, কোভিড-১৯ এর মতো ‘জুনটিক’(প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত) রোগের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান ক্রিয়াকলাপ অব্যাহত রাখা হলে আমরা কেবল অন্যান্য প্রজাতির বিলুপ্তির কারণই হচ্ছি না, মূলত আমরা মানবজাতিরও চূড়ান্ত বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সরকারপ্রধান আরও বলেন, জীববৈচিত্র্য সম্পর্কিত কনভেনশন বাস্তবায়নের জন্য আইন প্রণয়নকারী অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আমাদের সংসদ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি এ্যাক্ট, ২০১৭ পাস করেছে। তার সরকার দেশের মোট স্থলভাগের ৫ শতাংশের বেশি এবং সামুদ্রিক জলভাগের প্রায় ৫ শতাংশ অঞ্চলকে ‘সংরক্ষিত ও পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের কথা বিশ্বসভায় তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের প্রথম দিকেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আদেশ কার্যকর করেন।
×