ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

হলুদ পদ্ম

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

হলুদ পদ্ম

আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার সুশোভিত রূপ মাধুর্যে আমরা মুগ্ধ, বিমোহিত। গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে নগর, বন্দর, শহরে শাপলার চমৎকার নান্দনিকতায় জাতীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়া এক গৌরবদীপ্ত পুষ্পিত সংযোজন। খালে-বিলে, পুকুরে, জলাশয়ের পাঁকে জন্ম নেয়া এই এশিয়ান প্রজাতিটি নানা রঙের সুষমায় প্রকৃতির এক অনন্য বৈভব। এর পাশাপাশি হাল্কা সুবাসিত মিষ্টি গন্ধের পদ্ম তার অনুরাগীর মন ভরাতে এক অপার মহিমায় নিজেকে পূর্ণ করে। এই চিরায়ত পদ্মের স্বাভাবিক রঙের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দেশে ফুটেছে এক ভিন্ন মাত্রার হলুদ পদ্ম। পৌরাণিক উপাখ্যানে নীল পদ্মের কল্পকাহিনী আমাদের যে অতলান্ত রূপসাগরে নিয়ে যায় সে তো পুষ্পিত পদ্মের নীলাভ রূপ সম্ভার। সেখানে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে হলুদ রঙের নবতর পদ্মের অনন্য বৈভব। যা মূলত উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের গবেষণার জন্য এক অভাবনীয় সংযোজন। ধারণা করা হচ্ছে নতুন প্রজাতির এই হলুদ পদ্ম গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথ পাড়ি দিলেই তা বাংলাদেশে তার নবজন্মের অবস্থান জানান দিতে সময় নেবে না। আর উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ এই নতুন হলুদ পদ্ম হবে পুষ্পিত বিশ্বের বৈচিত্র্যিক রঙের অন্য মাত্রার নন্দিত অবয়ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার ধারণা দেন, আমরা একটি মর্যাদাপূর্ণ নামে এই হলুদ পদ্মকে সম্ভাষণ জানাব। নৈসর্গিক বৈভবে জন্মানো এই নতুন প্রজাতি ফুলের শুভ আগমনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এই হলুদ পদ্মের বসতি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণগ্রাম বিলে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের গবেষকরা সেখানে গেছেন প্রকৃতির অবারিত দানের প্রস্ফুটিত এই হলুদ পদ্ম পর্যবেক্ষণে। বলা যায় এশিয়ান চিরায়ত গোলাপি, নীল, সাদা পদ্মের থেকে আলাদাভাব ফুটে ওঠা এই হলুদ পদ্মের মূল নিবাস কোথায় তাও অজানা। আমেরিকান লোটাসের বংশ বিস্তার কি কুমিল্লার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিলে তার নতুন আস্তানা তৈরি করেছে? তবে ড. রাখহরি সরকার দ্বিমত পোষণ করে বলেন, সেই ফুলের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে এখানকার হলুদ রঙের পদ্মের অনেকখানিই অমিল। বর্ণ এবং পাপড়ির সংখ্যায়ও রয়েছে রকমফের। তবে উন্মুখ বিজ্ঞানীরা ভাবছেন- দেখা যাক নতুন এই হলুদ পদ্ম কতখানি আলাদা বৈশিষ্ট্যে অন্যদের সঙ্গে নিজের ফারাক তৈরি করেছে? নিজস্ব প্রজাতির যে মৌলিক পুষ্পিত সমাহার সেখানে সে কতটাইবা ভিন্ন স্বগোত্রীয়দের থেকে? গত বছর সেপ্টেম্বরে এই নতুন প্রজাতির হলুদ পদ্মের খোঁজ পাওয়া যায়। এর আগে নতুন ফোটা এই বিরল প্রজাতির হলুদ পদ্ম ছবিসহ পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগে। এ ছাড়া ইংল্যান্ডের হারবেরিয়ান জাদুঘরে কিউ গার্ডেনেও প্রযুক্তির সহায়তায় পৌঁছে দেয়া হয়। বিদেশেও এ পদ্ম নিয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধান চলছে। অনিন্দ্য সুন্দর এই হলুদ পদ্মটি অসংখ্য পাপড়ির সমাহারে সবুজ পাতা ভেদ করে মাথা উঁচু করে যেন সবাইকে তার আগমন বার্তা জানান দিচ্ছে। যদি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে হলুদ পদ্মটি এক নতুন প্রজাতির উপস্থিতি গবেষকদের উপহার দিতে পারে তাহলে এটি হবে বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদ। নামকরণ করা হবে তখনই- সেই অপেক্ষায় উন্মুখ দেশ ও জাতি।
×