ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাটিংয়ে আফগানদের চেয়েও পিছিয়ে

চ্যালেঞ্জ আছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরও

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৩ জুলাই ২০২০

চ্যালেঞ্জ আছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরও

মোঃ মামুন রশীদ ॥ টেস্ট ক্রিকেটে সর্বশেষ কিছু সিরিজে অত্যন্ত বাজে সময় কেটেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। আর দলগতভাবে বাজে পারফর্মেন্সের কারণে লজ্জাজনক কিছু হারের শিকার হতে হয়েছে। ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সেও খুব বেশি উজ্জ্বল কিছু নেই। এমনকি জিম্বাবুইয়ে-আফগানিস্তানের চেয়েও গত দুই বছরের টেস্ট ব্যাটিংয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ দল। সেই দলটি এখন ৪ মাস ক্রিকেটের বাইরে। এই বছর আর টেস্ট খেলার সুযোগ আর নেই, সবগুলো সিরিজ স্থগিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ টেস্ট ক্রিকেট থেকে সবমিলিয়ে ১১ মাস দূরে থাকতে হবে বাংলাদেশ দলকে। আর এই বিরতি যে আরও সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ানোটাই স্বাভাবিক। ব্যাটসম্যানদের আবার ছন্দে ফিরতে হলে সংগ্রাম করতে হবে। কারণ করোনাভাইরাসের প্রকোপে অনুশীলনও করতে পারেননি কেউ। টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের কাছে বড় ইনিংস প্রয়োজন হয় যে কোন দলেরই। আর যদি বোলিং বিভাগটা বিশ্বসেরা ও দুর্দান্ত হয় সেক্ষেত্রে হয়তো ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপটা একটু কম থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দলের জন্য ব্যাটিং-বোলিং আর ফিল্ডিং এ তিনটি বিভাগেই ভাল কিছু করা জরুরী। কারণ তিন বিভাগের কোনটিতেই বাংলাদেশ দল বিশ্বসেরা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে আবারও টেস্ট ক্রিকেটে পেসারদের দাপট ফিরে এসেছে। সেখানে দেখা গেছে বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের দুর্গতি। টেস্টে গত দুই বছরের পেস বোলিংয়ে বিশ্বে সবার নিচে বাংলাদেশ। এই ঘাটতিটা পূরণ করতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। কারণ ব্যাটিং বিভাগটা অনেকখানিই অভিজ্ঞ বোলিং বিভাগের চেয়ে। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে আছেন তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান (২৯ অক্টোবর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সেখানে বোলিংয়ে এখন অনভিজ্ঞরা চেষ্টা করছেন নিজেদের প্রমাণ করতে। কিন্তু অভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে কোন টেস্টে ভাল করার জন্য অবশ্যই টপঅর্ডারদের ভাল কিছু করতে হয়। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে শীর্ষ ৫ ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত গড়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১২টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে ৯ নম্বরে। অর্থাৎ পেস বোলিংয়ের মতো ব্যাটিংয়েও যথেষ্ট লড়াই করার পরিস্থিতিতে আছে বাংলাদেশ। পরিস্থিতিটা ২০১৬, ২০১৭ পর্যন্ত বেশ ভালই ছিল। বাংলাদেশের টপঅর্ডাররা বেশ ভালই করেছিলেন। কিন্তু গত দুই বছরে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইনআপের টপঅর্ডাররা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। ব্যাটিংয়ের হিসেব আসলে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকে আফগানিস্তান-জিম্বাবুইয়ের থেকেও। গত দুই বছরে ১৫ টেস্টে ওপরের সারির টাইগার ব্যাটসম্যানরা ২৯.১৯ গড়ে রান করেছেন। বাংলাদেশের নিচে আছে অবশ্য অন্যতম শক্তিধর দল দক্ষিণ আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় টপঅর্ডাররা। প্রোটিয়া শীর্ষ ৫ ব্যাটসম্যান ২১ ম্যাচে ২৮.৮৬ গড়ে আর ক্যারিবীয় শীর্ষ ৫ ব্যাটসম্যান ১৫ ম্যাচে ২১.৭১ গড় রান করতে পেরেছেন। বাংলাদেশের টপঅর্ডারে এমন নাজুক পরিস্থিতির কারণটা আরও স্পষ্ট হয়ে গেছে টপঅর্ডারে নিয়মিত পজিশনের অদল-বদলের মধ্য দিয়ে। নিয়মিতভাবে ৫ ব্যাটসম্যানকে একসঙ্গে খেলানো যায়নি। ইনজুরি, বিশ্রাম আর নিষেধাজ্ঞার কারণে সাকিব নিয়মিত ছিলেন না টেস্ট দলে। তামিমও চোট আর বিশ্রামের জন্য কয়েক সিরিজে দলের বাইরে ছিলেন। এছাড়া পারফর্মেন্সের অভাবে বাদ পড়েন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ফলে মুশফিক, মুমিনুল ছাড়া কেউই নিয়মিত খেলতে পারেননি। এটাই শীর্ষ ৫ ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং গড়ে প্রভাব ফেলেছে। এখন টানা বিরতি শেষে টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে তাই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের। উন্নতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছে মুশফিক, মুমিনুল ও তামিমদের জন্য। এ দুই বছরে শীর্ষ ৫ ব্যাটসম্যানের পারফর্মেন্সে সেরা নিউজিল্যান্ড ৪০.৫৮ গড় নিয়ে আর ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ২৪ টেস্টে ৪০.১৫ গড়ে রান করে দ্বিতীয়।
×