ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ভুতুড়ে বিলের দায় কার!

প্রকাশিত: ১৯:৩৪, ৭ জুলাই ২০২০

ভুতুড়ে বিলের দায় কার!

সারাদেশ করোনা সংক্রমণে বিপর্যস্ত, দিশেহারা। অবরুদ্ধতার কঠিন আবর্তে দেশের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় নেমে আসে স্থবিরতা। করোনা দুর্যোগে বাড়তি বিপত্তি ছিল পানি, গ্যাস এবং বিদ্যুত বিল প্রদানের ক্ষেত্রে। যথাসময়ে বিল দিতে না পারা গ্রাহকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুত কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। দেরিতে বিল পরিশোধে বাড়তি কোন টাকাও দিতে হয়নি সাধারণ গ্রাহকদের। বিদ্যুতের ব্যাপারে এমনও বলা হয়েছিল ন্যূনতম টাকা না থাকলেও বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে না। করোনা সঙ্কটকালে মানুষের ভোগান্তিকে আমলে নিয়েই সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হলেও বাস্তবে অগ্রহণযোগ্য চিত্রও উঠে এসেছে। ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে গ্রাহকদের হয়রানির নানা ঘটনার। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত গ্রাহকদের অতিরিক্ত বিদ্যুত বিলের চাপে হয়রানির দুঃসহ চিত্রও উঠে এসেছে। গ্রাহকরাই এই বাড়তি বিলের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে অভিযোগ করলে কর্তৃপক্ষ তৎপর হয়। তবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ মূলত সব দায়ভাগ চাপাচ্ছে অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর। অতিরিক্ত বিদ্যুত বিলের ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণও ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। প্রথম পদক্ষেপে অতিরিক্ত বিল সংশোধন করে গ্রাহকদের হয়রানি কমার ব্যবস্থা নিয়েছে বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ। সরকার গঠিত টাক্সফোর্স সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের চিহ্নিত করার পদক্ষেপও নিয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক উর্ধতন নির্বাহীদের নির্দেশ ছাড়া এমন অতিরিক্ত বিল কিভাবে তৈরি করা হয় তা নিয়েও প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ। অধস্তনদের ওপর পুরো দায়ভাগ চাপালে আসল সত্য ধামাচাপা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে। ন্যক্কারজনক ভুতুড়ে বিলের অপতৎপরতায় ৩০০ কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় এনেছে সরকার গঠিত টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চার কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেয়া হয়। কয়েকজন মিটার রিডারকেও বরখাস্তের সুপারিশ এসেছে। তাছাড়া অভিযুক্ত সবাইকে কারণ দর্শাও নোটিসও দেয়া হয়েছে। তবে এই অতিরিক্ত বিলের দায়ভাগ শেষ পর্যন্ত কার ওপর বর্তাবে সে ব্যাপারে এখনও টাস্কফোর্স কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি। আরও বিস্ময়কর খবর খোদ বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রীর বাসা এবং প্রতিষ্ঠানেও ভুতুড়ে বিল এসেছে। সারাদেশে কত গ্রাহক এমন বিল পেয়েছেন তেমন হিসাব এখন পর্যন্ত নেই। এই মুহূর্তে দেশে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখ। তার মধ্যে মাত্র ৪ লাখ গ্রাহক ভুতুড়ে বিল থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। বাকিদের সংখ্যা এখনও হিসাব করা যায়নি। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, গত ৪ মাসে তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সেখানে কি করে এই অতিরিক্ত বিল আসতে পারে তা ধারণার বাইরে। এমনকি প্রতিমন্ত্রীর বাসায়ও গিয়েছে অতিরিক্ত বিল। এমনটি হওয়ার কোন যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। দেশের বিদ্যুত বিতরণের প্রতিষ্ঠানেরই যদি এমন বেহাল দশা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ কি মাত্রায় শোচনীয় পরিস্থিতির আবর্তে পড়ছে তা সহজেই অনুমেয়। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের বাসায়ও বিদ্যুত বিলের এমন নয়ছয় অবস্থা দৃশ্যমান হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের মূল কর্তৃপক্ষও এমন হঠকারী বিলের আওতাভুক্ত হয়েছে। দেশে ছয়টি বিদ্যুত বিতরণ সংস্থা হয়েছে। প্রতিটির বিরুদ্ধে এই বাড়তি বিলের অভিযোগ আছে। কারোর বিরুদ্ধে তিন শ’ গুণ বেশি বিল করার অভিযোগও উঠে এসেছে। দেখা যাক টাস্কফোর্স শেষ অবধি তার প্রতিবেদনে যথার্থ অভিযুক্তদের কিভাবে চিহ্নিত করে। এমন চরম অব্যবস্থাপনার একটি সঙ্গত এবং বিধিসম্মত সুরাহা হওয়া অত্যন্ত জরুরী। দোষীদের যথাযথ শাস্তিও বাঞ্ছনীয় বৈকি।
×