ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুতের ওভার বিলিংয়ে জড়িতদের শাস্তির সুপারিশ করছে টাস্কফোর্স

প্রকাশিত: ২২:৩২, ৩ জুলাই ২০২০

বিদ্যুতের ওভার বিলিংয়ে জড়িতদের শাস্তির সুপারিশ করছে টাস্কফোর্স

রশিদ মামুন ॥ গ্রাহক ভোগান্তি রোধে ওভার বিলিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করতে যাচ্ছে সরকার গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্সের কাছে বিতরণ কোম্পানি বুধবার ওভার বিলিংয়ের সব তথ্য পাঠিয়েছে। টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা বলছেন রবিবার বিদ্যুত বিভাগের কাছে প্রতিবেদন দেয়া হবে। টাস্কফোর্সের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে বিতরণ কোম্পানির কাছে ৭৬ হাজার গ্রাহক ওভার বিলিংয়ের শিকার হয়ে আবেদন করেছে। এর বাইরে কয়েক লাখ গ্রাহক ওভার বিলিংয়ের শিকার হয়েছে। বিতরণ কোম্পানির কাছে গেলেও গ্রাহকদের নানা ভাবে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রাহক। এই প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার টাস্কফোর্স গঠন করে বিদ্যুত বিভাগ। সাতদিনের মধ্যে এই টাস্কফোর্সের রিপোর্ট দেয়ার কথা ছিল। পাওয়ার সেল থেকে টাস্কফোর্সের রিপোর্টটি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। পাওয়ার সেল সূত্র বলছে, কতগুলো বিলে অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং কতগুলো ঠিক করা হয়েছে প্রাথমিকভাবে এ তথ্য নেয়া হয়েছে। এছাড়া অভিযোগের বাইরেও কতটি ওভারবিলিং হয়েছে সেই তথ্যও চাওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি বিতরণ কোম্পানি এই তথ্য বুধবার বিকেলের মধ্যে পাওয়ার সেলের কাছে পাঠিয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন, প্রতিবছর জুনে অর্থবছর শেষ হলে বিতরণ কোম্পানি বিল আদায়ের লক্ষ্য পূরণের জন্য গ্রাহকের উপর নিপিড়ন চালায়। সারা বছর বিতরণ কোম্পানির যে বিদ্যুত চুরি হয় তা হিসেব করে প্রত্যেক গ্রাহকের বিলে অল্প অল্প করে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এভাবে বছর শেষে ব্যালেন্সশিট মেলানো হয়। এবার বিতরণ কোম্পানি পরপর তিন মাস একই কাজ করতে গিয়ে গ্রাহকের ৩০০ ভাগ পর্যন্ত বিল বেশি করায় বিষয়টি সকলের নজরে এসেছে। জানা গেছে, বিদ্যুত বিভাগের সঙ্গে বছরের শুরুতে প্রত্যেকটি বিতরণ কোম্পানি কি পারফর্মেন্স ইন্ডিকেটর (কেপিআই) চুক্তি করে। বার্ষিক কর্মসম্পাদনের এই চুক্তিতে কি কি করতে হবে সেই বিষয়ে একটি গাইড লাইন থাকে। কেপিআইতে বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানির জন্য সাতটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এই সাতটি লক্ষ্যের তিনটি হচ্ছে বিদ্যুত বিল আদায় সংক্রান্ত। এর প্রথমটিতে বলা হয়েছে সিস্টেম লস হ্রাস করতে হবে, দ্বিতীয়টিতে রয়েছে বকেয়া বিল আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং চতুর্থটিতে বলা হচ্ছে আয় বৃদ্ধি এবং ব্যয় হ্রাসের ব্যবস্থা। এই তিনটি ধারার প্রত্যেকটিই বিল আদায় সংক্রান্ত। কোনভাবে বিল আদায় ঝুলে গেলে এই তিন লক্ষ্য পূরণ হবে না। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে পারফর্মেন্স ঠিক রাখতে বিতরণ কোম্পানি বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রথমে কত ইউনিট বিদ্যুত তারা বিক্রি করেছে আর কত ইউনিটের বিল আদায় হয়েছে তার একটি হিসেব করে। বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গিয়েই এই হিসেব ঠিক করে। এবার মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে হিসেবের মারপ্যাঁচে অল্প অল্প করে অনাদায়ী বিল প্রত্যেক গ্রাহককে ভাগ করে দেয়া হয়। এতে বিতরণ কোম্পানির লক্ষ্য পূরণ সহজ হলেও সামগ্রিকভাবে গ্রাহক ঠকতে থাকে। জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, কেপিআই করা হয়েছে চুরি বন্ধ করার জন্য। তাদের গ্রাহকের গলায় ছুরি ধরে পয়সা আদায় করার জন্য নয়। তিনি বলেন, কেপিআই বাস্তবায়ন করতে হবে তাই বলে বছরের শেষে এসে ওভার বিলিং করা যাবে না। তিনি বলেন, আমরা শুধু এবার নয় ভবিষ্যতের জন্যও একটি ব্যবস্থা করতে চাই যাতে গ্রাহক হয়রানি আর কখন এভাবে না হয়। টাস্কফোর্সের রিপোর্ট দিতে আরও দুই চার দিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সরকার ওভার বিলিংয়ের বিষয়ে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়াতে গ্রাহকের কাছে ওভার বিলিংয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) মঈন উদ্দিন এবং ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান। তবে অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলো এখন নিজেদের ভুল স্বীকার করেনি। সরকার বলেছে গ্রাহকের কাছে এজন্য দুঃখ প্রকাশ করে সাতদিনের মধ্যে সকলের বিল ঠিক করে দিতে হবে। যারা এরমধ্যে বিতরণ কোম্পানির কাছে গিয়েছে তাদের সকলের বিল ঠিক করে দেয়া হচ্ছে। আর যারা বিল জমা দিয়ে দিয়েছে তাদের আগামী মাসের বিলের সঙ্গে বিষয়টি সমন্বয় করা হবে।
×