ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোরে ঢাবি ছাত্রী সুমাইয়া হত্যার মূল আসামিসহ গ্রেফতার ৪

প্রকাশিত: ১৬:১৩, ২৫ জুন ২০২০

নাটোরে ঢাবি ছাত্রী সুমাইয়া হত্যার মূল আসামিসহ গ্রেফতার ৪

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ নাটোরে শহরের হরিশপুর এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া খাতুনকে হত্যার ঘটনায় মূল আসামি সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক এবং শ্বশুর জাকির হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার ভোর রাতেজেলা পুলিশের বিশেষ অভিযানে নাটোরের সীমান্ত এলাকা বাঘা থেকে মোস্তাককে এবং শ্বশুর জাকির হোসেন কে নন্দীগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরআগে মামলা দায়েরের রাতেই নিহতের শ্বাশুড়ী ও ননদকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং এ এসব তথ্য তুলে ধরেন পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা। পুলিশ সুপার আরও জানান, নিহতের মা বাদি হয়ে মামলা দায়েরের পর ঐ রাতেই অভিযান চালিয়ে পুলিশ নাটোর শহরের হরিশপুর এলাকার বাড়ি থেকে শাশুড়ি সৈয়দা মালেকা ও ননদ জাকিয়া ইয়াসমিন জুথিকে গ্রেফতার করে। তখন থেকে পলাতক ছিলেন সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক ও শ্বশুর জাকির হোসেন। আাসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের আটটি ইউনিট কাজ করে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, শহরের বলাড়িপাড়া এলাকার প্রখ্যাত ইসলামী বক্তা মরহুম সিদ্দিকুর রহমান যশোরীর মেয়ে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রী সুমাইয়া মাস্টার্স পরীক্ষা সম্পন্ন করে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সুমাইয়ার পড়াশোনা ও চাকরি নিয়ে স্বামী ও শশুড় বাড়ির লোকজন নিয়মিত তাকে নির্যাতন করতো। সোমবার সকালে নির্যাতনের পর সুমাইয়া আত্মহত্যা করেছে দাবি করে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায় তারা। পরে পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সোমবার (২২জুন) রাত ১ টায় হত্যা মামলা রেকর্ড করে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এদিকে, থানায় অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, শশুর বাড়ি থেকে চাহিদামত টাকা না পাওয়ায় বেকার মোস্তাক বেপরোয়া হয়ে উঠে। বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য বার বার চাপ দেয়। কিন্তু বাবার মৃত্যূর পরে সুমাইয়া তার স্ট্রোকে আক্রান্ত মায়ের কাছে টাকা না চেয়ে নিজেই কিছু একটা করার চিন্তা করছিল। এজন্য তিনি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ারপ্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সুমাইয়াকে হত্যার পরে এটি আত্ম হত্যার ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করে সুমাইয়ার শ্বশুরবাড়ীর লোকজন। সুমাইয়ার চাচা আহাম্মদ আলী জানান, বড় ভাইয়ের মত্যুর পরে সুমাইয়া তার অত্যাচারের ঘটনা তাঁকে বলেতো। কারণ সুমাইয়ার মা নুজহাত সুলতানা স্ট্রোকের রোগী। মেয়ের খারাপ কিছু সংবাদ থেকে মায়ের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় সুমাইয়া তার নির্যাতনের কাহিনী বাড়িতে বলতো না। আহাম্মদ আলী বলেন সুমাইয়া ৭ মাসের গর্ভবতী ছিল। মোস্তাকের অত্যাচারে সে সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করে। এসময় সুমাইয়ার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। তার পরেও স্বামীর সাথেই সংসার ও সুখী হতে চেয়েছিল। তিনি ভাতিজি হত্যার বিচার দাবি করেন। নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে জানান, শাশুড়ী তার বিছানার ওপরে সুমাইয়াকে পড়ে থাকতে দেখে নাটোর হাসপাতালে নিয়ে যান। তার আগে কি ঘটেছিল তা তারা জানেননা। সুরতহাল রেপার্টে তার গলায় ফাঁসের দাগ পাওয়া গেছে। এছাড়া দৃশ্যমান আর কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
×