ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদপুরে ৪৮ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি ৩২ শহীদের গণকবর

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

চাঁদপুরে ৪৮ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি ৩২ শহীদের গণকবর

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁদপুর, ২৫ ডিসেম্বর ॥ স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউয়িনের প্রসন্নপুর ও কাইথরা (আহম্মদ নগর) গ্রামে পাক বাহিনীর গুলিতে নিহত ৩২ শহীদের কবর। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়লগ্নে ৯ ডিসেম্বর সকালে তারা শহীদ হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে শহীদ পরিবারের লোকদের খোঁজ খবর ও আর্থিক সহযোগিতা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপরে শহীদ পরিবারের খোঁজ খবর এবং শহীদদের গণকবরগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যার ফলে কিছু কবরের চিহ্ন নেই এবং গণকবরের উপরে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি ওই এলাকা ঘুরে শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে এসব চিত্র ও তথ্য জানা গেছে। আহম্মদনগর পাটওয়ারী বাড়িতে রয়েছে একসঙ্গে ৯জনের গণকবর। ওই বাড়ির ১১জন শহীদ হন। বাকি দু’জনকে অন্য গ্রামে সমাহিত করা হয়। পাশেই আরেকটি গণকবরে সমাহিত হন বেশ কয়েকজন। এভাবে দুই গ্রামে ৩২ শহীদকে সমাধিত করা হয় ৯ ডিসেম্বর। এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান বলেন, ৮ ডিসেম্বর যখন বিজয়ের খবর আসছিল, তখন মুক্তিযোদ্ধারা অনেক স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন। ওইদিনই বিকেলে কুমিল্লা লাকসাম এলাকা থেকে প্রায় ২শ’ পাকবাহিনী ও স্থানীয় এবং আগত রাজাকাররা খিলাবাজার এলাকায় কাইথরা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে অবস্থান নেয়। রাতে তারা বাড়ির লোকদের বের করে দিয়ে বিভিন্ন বাড়িতে অবস্থান নেয়। পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের টের পায়। পরদিন সকালে তারা যখন ওইসব বাড়ি থেকে বের হয়ে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ের সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখন তাদরকে লক্ষ্য করে মুক্তিযোদ্ধার ৩ থেকে ৪ রাউন্ড গুলি করে। এতে পাকবাহিনীর একজন সদস্য গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ে। এরপরই তারা অবস্থানরত বাড়িগুলো আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে এবং বাড়ির লোকদের গুলি করে হত্যা করে। তাদের গুলিতে ৩২জন শহীদ হন এবং প্রায় ৫০জন গুলি খেয়ে গুরুতর আহত হন। তিনি আরও বলেন, পাকবাহিনী হত্যাযজ্ঞে চালিয়ে ধীরে ধীরে ডাকাতিয়া নদী পার হয়ে দক্ষিণ থেকে সড়ক দিয়ে না গিয়ে ফসলি জমি দিয়ে হেঁটে চলে যায়। পরে আমরা গুলিত শহীদ নারী, পুরুষ ও শিশুদের সমাহিত করার ব্যবস্থা করি। আর ৩ জন হিন্দু ধর্মের শহীদকে দাহ করা হয়। আহম্মদনগরের পাটওয়ারী বাড়ির শহীদ পরিবারের কালাগাজীর ছেলে কোরবান আলী বলেন, তিনি নিজেও গুলিবৃদ্ধ হয়ে ছিলেন। যার চিহ্ন এখনও রয়েছে। তাদের বাড়ির ১১জন শহীদ হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে বঙ্গবন্ধু তাদের আর্থিক সহায়তা করলেও দীর্ঘ ৪৮ বছর তাদের কেউ খোঁজ নেয়নি। বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের নিকট আবেদন শহীদদের গণকবরগুলো যেন সংরক্ষণ করা হয়। একই বাড়ির আরেক শহীদের সন্তান আবুল খায়ের পাটওয়ারী বলেন, বর্তমান সরকার শহীদ পরিবারগুলোকে বিভিন্ন সযোগ-সুবিধা দিলেও আমরা সবকিছু থেকে বঞ্চিত। আমাদের দুটি গ্রামে এত বড় ধরনের গণহত্যা হলেও কবরগুলো সংরক্ষণ হয়নি। আমাদের প্রজন্মের পরে শহীদদের কোন চিহ্ন আর থাকবে না। তাই সরকারের কাছে আবেদন শহীদদের স্মৃতি যেন সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়।
×