ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আকিব শিকদার

রঞ্জু, একটা হাতিয়ার...

প্রকাশিত: ১৩:২৫, ২৫ অক্টোবর ২০১৯

রঞ্জু, একটা হাতিয়ার...

মিছিলটা হয়েছিলো প্রায় তিনশো গজ লম্বা। টানা পাঁচ দিন খেটেখোটে লোক জড় করেছিলে। বিপক্ষ দলের সামনে ইজ্জত রাখা চাই। গলিটা দখলে নিয়ে সাজালে প্যান্ডেল। ঝাঝালো ভাষণে জনপদ কাঁপিয়ে স্বার্থক জনসভা। নেতা তোমাকে কাছে ডেকে পরিপাটি চুলগুলো আঙুলে উলোঝুলো করে দিয়ে বললো- “বেটা বাঘের বাচ্চা, তোর মতো কেজো ছেলে আগে দেখিনি, একেবারে বিপ্লবী চে গুয়েভারা।’ তুমি বাহবা পেয়ে গলে গেলে রঞ্জু। বুঝলে না, ছোটদের বগলবন্দী রাখতে বড়রা এমন প্রশংসার ফাঁদ প্রায়ই পাতেন। পার্টি অফিসে প্রতিদিন কতো কাজ, কতো পরিকল্পনা। নেতারা তোমায় পিতার মতোই ¯েœহ করে। গোলটেবিল বৈঠকে জ্বালাময়ী আলোচনায় রক্ত গরম। বাঁধা এলে অস্ত্র নেবে, প্রয়োজনে প্রাণ দেবে। অফিসের গোপন ঘরে নেতারা গলা ভেজাতে ভেজাতে তোমাদের হাতে বুতল দিয়ে বলে- ‘নে বাবারা, খা... শুধু খেয়াল রাখবি যেন হুষ ঠিক থাকে।’ ভেবে দেখেছোকি রঞ্জু, তাদের ছেলেরা এসব নোংরা জল ছোবার কথা কল্পনাও করতে পাড়ে না। মায়েরা পড়ার টেবিলে গরম দুধে গ্লাস ভরে রাখে। কালো কাচ আটা পাজারু গাড়ি থামলো রাস্তাতে। জানালার কাচ খুলে নেতা হাত বাড়িয়ে দিলেন হাজার টাকার দুটো নোট। বললেন- ‘রঞ্জু... ঝাপিয়ে পর বাবা, মান সম্মানের বেপার।’ তুমি ঝাঁপিয়ে পরলে পেট্রোল-বোমা আর ককটেল হাতে। দুদিন পর তোমার ঠিকানা হলো সরকারি হাসপাতালের নোংড়া বিছানা। হাত দুটু উড়ে গেছে, দু’পায়ের হাঁটুঅব্দি ব্যান্ডেজ। একবারও ভাবলে না, তিনি তোমার কেমন বাবা! তার সম্পত্তির ভাগ পাবে? তার কালো কাচের পাজারুটা তোমাকে দেবে? দেবে মখমল বিছানো বেডরুমে ঘুমানোর অনুমতি? তার সম্মান রাখবে তুমি! তার ছেলে বিদেশে পড়ে, নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে; সে তো ঝাঁপিয়ে পড়ে না! তোমার হোষ কবে হবে রঞ্জু! তুমি ছিলে তাদের স্বার্থের হাতিয়ার, কাটা তোলার কাটা। তোমার মা হাসপাতালে গরাগরি দিয়ে কাঁদে, বাপ কাদে বাড়ান্দায়। সেই নেতারা, তোমার পাতানো বাবারা, একবারও তো দেখতে এলো না! বলি রঞ্জু, তোমাদের হুশ কবে হবে!
×