ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিনা সুদে কৃষিঋণ

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বিনা সুদে কৃষিঋণ

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ সময়ের মিছিলে নিরন্তর এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারও দেশের এই নিয়ামক সূচকটিকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় এনে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করছে। কৃষিতে আধুনিকায়নের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে যন্ত্রনির্ভর কৃষি উপকরণকে যেভাবে উদ্যোগী কৃষকদের হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে, তাও দেশের এক সম্ভাবনাময় এগিয়ে যাওয়া। চাষাবাদে প্রাসঙ্গিক সব ব্যবস্থাপনাকে কৃষি উপযোগী করে তুলতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছে। কৃষকের আর্থিক অসচ্ছলতার বিষয়টি সুবিদিত। ঋণ নেয়া ছাড়া কৃষকদের কোন উপায় থাকে না। ঋণের সঙ্গে কাঁটার মতো বিঁধে থাকে সুদের ব্যাপারটি। জীবনভর ঋণের বোঝা টানতে টানতে ক্লান্ত, অবসন্ন কৃষক তার উত্তরাধিকারের কাঁধে সেই বোঝা চাপিয়ে মৃত্যুবরণ করে। দেশের তেমন দুর্দশা এখন আর নেই বললেই চলে। তবে সমস্যা জর্জরিত দরিদ্র কৃষককুল সব ধরনের বিপরীত অবস্থাকে আয়ত্তে এনেছে সেটাও একেবারে ঠিক নয়। সরকার প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি উপকরণের সঙ্গে স্বল্পসুদে ঋণই শুধু নয়, কৃষিতে শ্রমমজুরিও নানামাত্রিকে বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। কৃষিতে বিপ্লব এসেছে সরকারী প্রণোদনা ও সংশ্লিষ্টদের অদম্য কর্মস্পৃহায়, যা বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির এক নতুন যুগ। যে নবযুগ দেশের সীমানাকে পার করে বহির্বিশ্বেও তার অভাবনীয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পৌঁছে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বলয়ে। ধান উৎপাদনে আমরা সারাবিশ্বে চতুর্থ। সবজির ফলনে তৃতীয় এবং মাছ চাষেও চতুর্থ স্থানে নিজেদের অবস্থান শক্ত করা আজ দেশের জন্য গৌরবের বিষয়। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। কৃষিপণ্য তার বাজারকে অবারিত করছে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব একেবারে যুগান্তকারী। সরকার কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে কৃষি ঋণের সুদও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় দিতে কর্মসূচী প্রণয়ন করছে। এক সময়ের স্বল্প সুদের ঋণের জায়গায় বর্তমানে সুদবিহীন কৃষি ঋণের কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কৃষক শুধু ঋণের টাকাই প্রতিষ্ঠানকে ফেরত দেবে। সুদ নিয়ে আর ভাবতে হবে না। এতে কৃষক অনেক ধরনের বিপন্ন অবস্থা থেকে রেহাই পাবে। যেমন সময়মতো কৃষিঋণ সুদসমেত ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমার ব্যাপারটি ছিল দৃষ্টিকটু। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ঋণ শোধ করতে না পারায় কৃষকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা গ্রামবাংলার কৃষি অর্থনীতির এক দুর্ভোগ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেয়া এই কর্মপ্রকল্পটির লক্ষ্যমাত্রায় থাকছে তিন ফসলী জমিকে চার ফসলিতে উন্নীত করে উৎপাদন দ্বিগুণ করা। যা কৃষকসহ গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। সমৃদ্ধ কৃষকরা ভিআইপি, সিআইপির মতো এআইপির মর্যাদায় ভূষিত হবেন। তবে বিশেষ নজরদারিতে রাখা বাঞ্ছনীয় কৃষিপণ্যের স্থানীয় বাজারজাতকরণে। মূল শ্রমজীবী কৃষকরা যাতে তাদের ন্যায্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয়। সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি বাণিজ্যের আগ্রাসনে পড়ে কৃষি শ্রম যেন তার মর্যাদাকে হারিয়ে ফেলতে না পারে। সব ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প যেন যথার্থ জনবান্ধব হতে পারে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া অত্যন্ত জরুরী। কৃষি ব্যবস্থাকে সাশ্রয় আর আধুনিকায়নের আলোকে গৃহীত প্রতিটি কর্মসূচী যেন যথার্থ উৎপাদকদের অনুকূলে যায়।
×