ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ২৯ আগস্ট ২০১৯

বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দেশে এতদিন বিমান পরিবহনে হতাহত যাত্রীদের জন্য তেমন কোন ক্ষতিপূরণের আইন ছিল না। সে জন্য ইতোপূর্বে যেসব হতভাগ্য ব্যক্তি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে নিহত ও আহত হয়েছেন, তারা ক্ষতিপূরণ পেলেও আদৌ তা পর্যাপ্ত ছিল না; আন্তর্জাতিক বিধান অনুযায়ী তো নয়ই। সে অবস্থায় সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন, ১৯৯৯) আইন, ২০১৯-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। অতঃপর এটি আইনে পরিণত হলে বিমান পরিবহনে যদি কোন যাত্রী মারা যান বা আহত হন তাহলে ১১ লাখ এসভিআরের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল নির্ধারিত মান) সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ পাবেন। ক্ষতিপূরণ না দিলে সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থাকে অনধিক ১০০ কোটি টাকা অর্থদ- বা অনধিক ১০ বছরের কারাদ- ভোগ করতে হবে। উল্লেখ্য, সোমবার ২৬ আগস্ট এক এসভিআরের মূল্য ছিল এক দশমিক ৩৮ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশ মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী যখন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তখন তা দিতে হবে সমসাময়িক এসভিআর নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী। তদুপরি প্রথম ধাপের পরে দর কষাকষি করে নির্ধারণ করা হবে পরবর্তী ধাপের ক্ষতিপূরণ। খসড়া আইনের মাধ্যমে যাত্রী ও কার্গো পরিবহনের ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশের বিমান সংস্থাগুলোর দায়-দায়িত্বকে আনা হয়েছে আইনের আওতায়। অতঃপর মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর যত তাড়াতাড়ি এটি আইনে পরিণত হয় ততই মঙ্গল। উল্লেখ্য, মন্ট্রিল কনভেনশন না থাকায় অথবা প্রয়োগ না হওয়ার ফলে ২০১৮ সালে নেপালে সংঘটিত ইউএস বাংলার বিমান দুর্ঘটনার পর নিহত ও আহত যাত্রীরা যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাননি। কিছু ক্ষতিপূরণ পেলেও তার পরিমাণ ছিল খুব কম। আরও যা দুঃখজনক তা হলো, মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় নিরপেক্ষ ও যথাযথ তদন্তও সম্পন্ন হয়নি অদ্যাবধি। নেপালে ইউএস-বাংলার একটি বিমানের দুর্ঘটনার কবলে পড়া নিঃসন্দেহে দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। চার ক্রু ও ৬৭ যাত্রীসহ মোট ৭১ আরোহী নিয়ে ঢাকা থেকে যাত্রা করে নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ উড়োজাহাজটি। নিহত যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫১ জন। জীবিত ২০ জনকে উদ্ধার করা হয়, যাদের অনেকেই গুরুতর আহতাবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বিমান দুর্ঘটনা অবশ্য নতুন কোন ঘটনা নয়। বরং বিশ্বব্যাপীই ঘটছে বিমান দুর্ঘটনা। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসেও সব বিমান দুর্ঘটনার যে যথার্থ কারণ জানা যায়, তাও নয়। যেমন, বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো মালয়েশিয়ার একটি বিমানের আদৌ কোন ধ্বংসাবশেষ ও অন্তর্ধান রহস্য অদ্যাবধি জানা গেল না। কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ৩৪ বছর আগে ঢাকায় বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ৪৫ জন যাত্রী নিহত হয়েছিলেন। গত কয়েক বছরে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশী বিমানের ছোট-বড় অন্তত ৩৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে দুটি ছাড়া প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে ফ্লাইং ক্লাবসহ প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনা ও নিহতের সংবাদ আছে। কাঠমান্ডুুতে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের বিষয়টিকে আমরা নিছক দুর্ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করতে চাই। তবে তা নিশ্চিত করার জন্য অত্যাবশ্যক গঠিত তদন্ত কমিটির যথাযথ অনুসন্ধানসহ প্রতিবেদন। আর তাহলেই কেবল আগামীতে এ জাতীয় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতে পারে। একই সঙ্গে আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন, ১৯৯৯) আইন ২০১৯ জাতীয় সংসদে যথাসত্বর অনুমোদনের আহ্বান জানাই, যাতে নিহত ও আহত যাত্রীদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির পথ সুগম ও সহজসাধ্য হয়।
×