ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসীদের বীমা ও প্রণোদনা

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ৪ আগস্ট ২০১৯

প্রবাসীদের বীমা ও প্রণোদনা

প্রবাসী কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি এবং জাতিসংঘের তাগিদে অবশেষে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের জন্য বাধ্যতামূলক জীবনবীমা ব্যবস্থা ও আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি। এ দুটো পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে বর্তমান সরকারের জনকল্যাণমুখী নীতির যথার্থ প্রতিফলন। ইতোমধ্যে প্রবাসীদের জীবনবীমার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে নীতিমালা। প্রবাসীদের সামর্থ্যরে বিষয়টি বিবেচনা করে দুই লাখ ও পাঁচ লাখ টাকা বীমা অঙ্কের জন্য প্রিমিয়ামও নির্ধারণ করা হয়েছে বেশ কম, যথাক্রমে এক হাজার ও দুই হাজার ৯২৫ টাকা। জীবনবীমা কর্পোরেশনের পাশাপাশি বেসরকারী বীমা কোম্পানিকেও দেয়া হবে এই দায়িত্ব। দাবি আদায় নিশ্চিতের জন্য বীমা কোম্পানিগুলোকে আধুনিক, গতিশীল, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা হবে। এর পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীদের বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণে উৎসাহিত করতে বছরে এক হাজার ডলার প্রতি দেয়া হবে ২ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধা, যেটি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সাল থেকে জাতিসংঘ প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের অধিকার সংরক্ষণে জীবনবীমা (ইন্স্যুরেন্স) করার জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে। প্রবাসী কলাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী জেনেভায় এ সম্পর্কিত জাতিসংঘ কনভেনশনে অনুসমর্থন দিয়েছেন বাংলাদেশের পক্ষে। ফলে প্রবাসী কর্মীদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন ধরনের বীমা করার পথ সুগম হয়েছে। আরও যা আশার কথা তা হলো এর জন্য আপাতত নতুন করে অর্থ বরাদ্দের আবশ্যকতা নেই। প্রবাসী কল্যাণ তহবিলে বিদেশে কর্মরতদেরই প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা পড়ে আছে। বিদেশে কোন কর্মী মৃত্যুবরণ করলে আপাতত এই তহবিল থেকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। যা হোক, প্রবাসীদের জন্য বীমা চালু করা হলে প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসনসহ নানা ক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে। মনে রাখতে হবে যে, প্রবাসী কর্মীরা নানা দেশে নানারকম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। তাদের প্রতিনিয়ত কষ্টার্জিত অর্থেই দিন দিন সচল ও সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে বর্তমানে প্রায় ৯৬ লাখ বাংলাদেশী অভিবাসী হিসেবে বিশ্বের ১৬০টি দেশে কর্মরত আছেন। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি, এক কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। অনেকে বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস ও আয়-উপার্জন করছেন। অনেকে নিবন্ধনের বাইরেও দালাল ও মানবপাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। এর বাইরেও বিদেশের বাজারে নিত্যনতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হওয়ায় প্রতিবছর চার-পাঁচ লাখ কর্মী যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত অর্থে দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হচ্ছে দিন দিন। এক হিসাবে হোম রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। পোশাক রফতানির পরেই এর অবস্থান। সেক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বীমা ব্যবস্থা এবং কষ্টার্জিত প্রেরিত অর্থের বিপরীতে প্রণোদনা দেয়া হলে তারা উৎসাহিত ও উপকৃত হবেন অবশ্যই।
×