ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এনডিএ নেতাদের প্রতি মোদির নির্দেশ

সবার আস্থা অর্জন করুন

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ২৭ মে ২০১৯

সবার আস্থা অর্জন করুন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটিতে বসবাসরত সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলমান সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর এই প্রথম সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেন মোদি। রবিবার ভারতীয় পার্লামেন্টের সেন্ট্রাল হলে এনডিএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন মোদি। পাশাপাশি বিজেপি সরকারের মূলমন্ত্র সবকা সাথ, সবকা বিকাশের সঙ্গে এবার ‘সবকা বিশ্বাস’ যোগ করেন তিনি। মোদি বলেন, এবার আমাদের আগের মূল মন্ত্রের সঙ্গে ‘সবকা বিশ্বাস’ বা সবার আস্থা অর্জনে কাজ করতে হবে। খবর এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টাইমস ও দ্য হিন্দু অনলাইনের। মোদি বলেন, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমরা আমাদের বিশ্বাস করে না। এবার আমাদের মুসলিমদের আস্থা অর্জনে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। ভারতের পূর্বের সরকারগুলো মুসলিম সম্প্রদায়ের বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণা করেছে উল্লেখ করে মোদি বলেন, ভারতের গরিব মানুষের মতো মুসলমানদের বিশ্বাস নিয়ে দীর্ঘদিন ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। তা এখনই বন্ধ করতে হবে। বিরোধী শিবিরের দিকে আঙ্গুল তুলে মোদি বলেন, এত দিন গরিবদের যেভাবে ঠকানো হয়েছে ঠিক একইভাবে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এসব না করে সংখ্যালঘু ছেলে মেয়েদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দিকে নজর দিলে ভাল হতো। এনডিএর নবনির্বাচিত এমপিদের উদ্দেশে মোদি বলেন, আমি আশা করব আপনারা দীর্ঘদিনের এই প্রথা ভেঙ্গে দেবেন। আমাদের ভারতের সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জনে কাজ করতেই হবে। গত সরকারের আমলের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে মোদি বলেন, আমরা যেভাবে ভারতের দরিদ্র লোকদের সঙ্গে অন্যান্য দলের প্রতারণা করার প্রথা দূর করেছি ঠিক সেভাবে সংখ্যালঘুদের ঠকানোও বন্ধ করতে হবে। আর এ জন্যই গরিবরা ব্যাপকভাবে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। নির্বাচনের ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিভেদের দেয়াল ভেঙ্গে মানুষে মানুষে যোগাযোগ তৈরি করেছে বলে মত দেন তিনি। আগামী সরকারের চলার পথ বাতলে মোদি বলেন, এই এনডিএ সরকার আগামীতে দুইভাবে অগ্রসর হবে। প্রথমে আমরা আঞ্চলিক আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে সচেষ্ট হব। এরপর জাতীয় সমস্যা সমাধান করব। এর আগে শনিবার রাতে নরেন্দ্র মোদি বিজেপি ও এনডিএর সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হন। এরপর ভারতের সংবিধানের সামনে মাথা নুইয়ে প্রণাম করেন তিনি। মুসলমানরা বিজেপিকে ভোট দেয় না ধরে নিয়েই দলটির হিসেব কষা হয়। বিজেপি নেতারাও মুসলমানদের ভোট মিলবে না ধরে নিয়েই অঙ্ক কষেন। শনিবার সকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে নতুন সরকার গঠনের দাবি জানাতে যাওয়ার আগে মোদি প্রতিজ্ঞা করেন, এবার তাদের (মুসলিমদের) বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। ২০১৪ সালে সংসদ ভবনে ঢোকার সময় সিঁড়িতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করেছিলেন মোদি। ২০১৯ সালে সংবিধানে মাথা ছুঁইয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানকে সাক্ষী রেখে আমরা প্রতিজ্ঞা করছি যে সব বর্গের মানুষকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। ধর্ম-জাতির ভিত্তিতে কোন ভেদাভেদ হবে না। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ এবং তার সঙ্গে সবকা বিশ্বাস আমাদের মন্ত্র হবে। গত পাঁচ বছরে সংখ্যালঘুদের ওপর ভারতের গোরক্ষক বাহিনীর হামলার ঘটনায় বারবার মোদির দিকে আঙ্গুল উঠেছে। লোকসভা ভোটের সময় প্রখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ‘টাইম’ মোদিকে ডিভাইডার ইন চীফ তকমা দিয়েছিল। কিন্তু এবার মোদির কথা শুনে বিজেপি নেতাদের মনে হয়েছে, তিনি এখন বিজেপির ‘সংখ্যালঘু-বিরোধী’ তকমা ঝেড়ে ফেলতে চান। এবারের নির্বাচনে ৩০৩ আসনে বিজেপির এবং ৩৫৩ আসনে এনডিএর জয়কে বিজেপি প্রধান অমিত শাহ ‘প্রচন্ড বহুমত’ আখ্যা দিয়েছেন। শনিবার অমিত শাহ বলেন, এই ফল দেখে মনে হচ্ছে ভারতের আপামর জনতা মোদির গত সরকারের কাজের প্রতি আস্থা রেখেছে। তিনি বলেন, মোদিজির সঙ্গে আমি কুড়ি বছর ধরে কাজ করছি। তিনি অত্যন্ত কাজ পাগল মানুষ। এই কুড়ি বছরে আমি তাকে কোনদিন ব্যক্তিগত ছুটি নিতে দেখিনি। মোদিজি দিনে অন্তত ১৮ ঘণ্টা কাজ করেন।
×