নক্ষত্রের অক্ষর
সুজন হাজারী
তুমি লিখছো আমি পড়ছি
দৃষ্টির ওপারে অবশিষ্ট মহেঞ্জোদারোর
আকাশে পোড়ারুটি চাঁদের প্রত্নলিপি
আগুনমুখে আলোর শিখা জ্বলে উজ্জ্বল
হৃদয় গহনে উদিত যৌবন জ্বালা।
আততায়ী সূর্যাস্তে সাবিত্রী সন্ধ্যায়
চন্দ্রমুখী বিস্তর নক্ষত্রের অক্ষরে
ফরমালিন মাখা ভালোবাসা
স্ট্যাটাসে পোস্ট দাও।
ম্যাসেসে নায়িকার প্রেম চুম্বন
নারদে ডাকে পাডুকোন পাডুকোন
ক্ষত্রিয় আগুনে পুড়ি তৃতীয় চুল্লিতে
মিথুনের নক্ষত্র অক্ষরে লিখি
একান্তের তুমি পাঠিকা।
** মৃত্যুকাহন
(চকবাজার ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণে)
শাহীন রেজা
মৃত্যুর ডানা আছে
গন্ধচিল একচোখা বকের মতো সে উড়ে যায়
নিমতলী থেকে নিশ্চিন্তপুর, রানা প্লাজা থেকে চকবাজার,
চুড়িহাট্টায়; দূরে আরও দূরে
হায়েনার হাসি নিয়ে বিভৎস ঠোঁটে
ছোবল মারে সে লোকালয়ে; মনুষ্য ডেরায়
এদেশে দেখেছি তাকে বহু বেশে বহু রূপে বহুবার
সত্তরে এসেছে সে ভয়াল গোর্কি, অতঃপর শূন্য উড়িরচর
অবশেষে আইলা আর দানব সিডর
ভেসে গেছে মানুষ পশু; ফেরারী বাতাস জুড়ে আতর লোবান
এছাড়াও দেখেছি তাকে মেঘনায় ডাকাতিয়া রূপে;
লাইজুর স্বপ্নহীন বিবর্ণ চোখে
বায়ান্ন কিংবা একাত্তরে তার সাজ ভিন্নতর
ব্যাপ্তি বিশাল; সমগ্র দেশ যেন এক নরকের পুরী
কুকুরে ছিঁড়েছে লাশ, খুবলে শকুনে
সেইসব ঘ্রাণ আজ স্মৃতি জাদুঘরে
দগদগে ঘা হয়ে দেখি আজ চোখের সমুখে;
চকবাজার যেন এক অগ্নিনদী
পুড়ে পুড়ে অঙ্গার আটাত্তর দেহ
ভাই ভগ্নি সন্তান কিংবা পিতা
অলংকার গলে গলে মায়ের শরীরে আর
সকল চিহ্ন পুড়ে একাকার কয়লা-কফিনে
অশ্রু শুকিয়ে কাঠ যেন দুই চোখ
বুকের অলিন্দ জুড়ে চৈত্রের খরাক্লিষ্ট বাতাস
মৃত্যু মৃত্যু
কতো আর অবুঝ আঁকা চেতন-সবুজে
কতো আর রাত্রি ঢাকা শোকের মাতমে
আমি আর চাই না সেই ভয়াল চুম্বন
আমার ভূ-ভাগে
চাই না আগর-ঘ্রাণ জোনাকির কালে : শোণিত-প্রবালে।
২২.০২.২০১৯
** ঋণ
মাহফুজ রিপন
রানাপ্লাজার ইট সুরকির ভেতর থেকে
ঘেটুপুত্র রোজ মা- মা বলে ডাক দেয়
সন্ধ্যায় বেদনার নীল আকাশ জলকে চলে
চোখের জলে ভাসিয়ে দাও পার্থ প্রদীপ-
আবেগের সঙ্গে চোখের জলজ সম্পর্ক।
জোরে হেসোনা ভেঙে যেতে পারে দেয়াল
অভিমানে নেমে যায় হতাশার বধির দুপুর।
মা- আয় আয় তৈ তৈ ডাকে এখনও কী ভোর আসে
জল দাও জল তৃষ্ণায় বুক ফেটে যায় মাদন আমার
চাপা ইটের তলায় পড়ে আছে পুত্র তোমার
বুকেতে পাথর জমা; মাথায় ঋণের বোঝা।
** একাকীর জোছনা
রেবেকা ইসলাম
তারপর সেই একই ব্যঞ্জন
একই স্বাদ, একই শব্দের স্বনন
বুকের দুর্ভেদ্য হৃৎপি-ের না শোনা কম্পন,
অবয়ব জুড়ে সেই দুর্বোধ্য জ্যামিতিক নকশা
চোখের তারায় পাথর স্তব্ধতা,
আগেও বোধগম্য হয়নি, এখন তো নয়ই,
বারান্দা ভিজে যায় জোছনার তীব্র আলোয়
ভেজে মরচে গ্রিলের ফাঁক ফোকর, কোণ
চৌকাঠে তীরবেগে আছড়ে পড়ে আলোর নেশা
স্তব্ধ অন্ধকার দেয়ালে দেখা যায় চমকপ্রদ আঁকিবুঁকি,
পাল্টে যায় শুনশান দেয়ালের মানচিত্র,
শুধু পাল্টায় না সেই অচ্ছুৎ মনের পরিসর,
আর কত? অর্ধেক জীবন তো পেরিয়ে এলাম
আকুল নদী একাই সাঁতার দিয়ে
কালো অন্ধকার হাতরিয়ে
কিংবা আলোর পাটাতনে একাকী শুয়ে।
** প্রেমিক
তানহিম আহমেদ
তোমার সান্নিধ্যে আমি প্রেমিক পুরুষ হয়ে উঠি-
কোনো ঘোর শ্রাবণের অঝোর বারিধারায়
যেভাবে ভরে ওঠে শুষ্ক নদী- ভরা দামোদর
সজীবতা ফিরে পায় ভাঙা প্রাণসঞ্চারী বটবৃক্ষ।
যেভাবে সন্ধ্যেরাতে বাতাসে মিলিয়ে যায় কর্পূর
নীরবে নেমে যায় হৃদয়ের অগভীর খনিগর্ভে
খোলা জানলার কাছে এসে থামে বৃষ্টিঝ—
আমি হয়ে উঠি তোমার একান্ত বাধ্যগত সহচর।
** মনস্কামনা
শ্যামসুন্দর সিকদার
এখানে কতেক নিত্য আগমন ঘটে-
ছুঁয়ে দেয় পবিত্রতা, দেয় ফুল জল
মনস্কামনায়, পান্ডা খুশি দক্ষিণায়;
বটবৃক্ষের কোমড় বেঁধেছে ভক্তেরা
লাল সুতোর ‘মানোত’ সফলতা পায়।
সিঁদুরে রঞ্জিত এই বটের শরীর
চিহ্ন রাখে বিশ্বাসের- সাক্ষী দেবতার।
থাকে সুতোর গিঁটেতে হাজারো ‘মানোত’!
আমি রাতে অমাবশ্যা তিথির সময়
চন্দ্র সূর্য সাক্ষী রেখে দেবো এক গিঁটে।
বাঁধবো মনের বৃক্ষে স্বপ্নের সুতোয়
আগুনের হাত; আর সব অন্ধকার,
যত অমঙ্গল- দূরে সরে যাবে; মৃত্যু
কিছুটা সময় দিবে রুখে, থাক লাল
সুতোর ভেতর বন্ধ বাংলাদেশ, আর
শনির কুদৃষ্টি আজ মুছবো নিঃশ্বাসে।
আমিও দিলাম গিঁটে সুতোর মালায়,
সাজানো দুর্ভাগ্য আর ষড়যন্ত্র সব
বিরত থাকুক- এই মনস্কামনায়
প্রার্থনা তোমার কাছে হে বৃক্ষ! সহায়
থাকো, নিরাপদে রাখো- এই বাংলাদেশ!
দুর্মুখের ক্ষয় হোক, জয় হোক আজ
লাল সুতোর প্রতিজ্ঞা! সত্য যদি হয়
চন্দ্র সূর্য তারা, আর এই দেশপ্রেম।
শীর্ষ সংবাদ: