ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাকেরগঞ্জের শীতলপাটি

নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ, শত বছরের অনন্য স্মারক

জিয়াউল হক

প্রকাশিত: ২৩:১২, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

নিপুণ হাতের ছোঁয়ায়  সমৃদ্ধ, শত বছরের  অনন্য স্মারক

বরিশালের বাকেরগঞ্জে শীতলপাটি বোনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন গ্রামের নারীরা

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের  নৈপুণ্যের জন্য শত শত বছর ধরে বিখ্যাত। উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক এই শীতলপাটি। এই উপজেলায় এখনো এক হাজারের বেশি পরিবার এই শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দুচোখ যায় দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুরপাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয় এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা। এখনো এই সকল গ্রামে পাটিকর পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে উপজেলার এসব গ্রামগুলোপাটিকর গ্রামনামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা গেছে, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিন সেট আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ শিশুরা নানান রঙ্গের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয় পিওলাল পাটিকরের সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তার পরও করার কিছু নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে এখন গরম বেড়েছে অপরদিকে বৈশাখ মাস চলছে, দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতল পাটির চাহিদা থাকে তাই পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি ক্রয় করে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করছেন।

স্থানীয় পাটিকররা বলেন, আমাদের তৈরি শীতল পাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে আমাদের তৈরি শীতল পাটির চাহিদা কমে গেছে। তাই সরকারিভাবে বিদেশে শীতল পাটি রপ্তানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো থাকত। পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া উচিত বলেও তারা উল্লেখ করেন। নয়তো এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মাঝে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে নতুন নতুন ডিজাইনের শীতল পাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদেরকে সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

×