ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মানবতার জয় হোক

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ২০:৫০, ৫ মে ২০২৪

মানবতার জয় হোক

.

গ্রীষ্মের খরতাপে অতিষ্ঠ জনজীবন। ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যাচ্ছে বছর। গরমের তীব্রতার কাছে হার মানছে সবকিছু। গরম থেকে বাঁচার সব রকম চেষ্টাই যেন এখন ব্যর্থ। কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে বাইরে তো বের হতেই হবে। পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য নিম্ন আয়ের মানুষজনকে পথেই কাজ করতে হয়। প্রচন্ড গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে।

মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়ছেন কেউ। আশার বিষয় হচ্ছে- মানবতা জাগ্রত হচ্ছে পদে পদে, পথে পথে। পথচারী এসব নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তি, মালিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বাড়ির বাইরে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করেছেন বাড়ির মালিক। ধানম-ি, গুলশানসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে এসব দৃশ্য। আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে পথের পাশে ঠান্ডা পানি, শরবত বিলি করছেন অনেকে। রাজশাহীর এক মেয়ে ব্লগার বর্না শরবত, ঠান্ডা পানি মাথার ক্যাপ নিয়ে শ্রমজীবীসহ পথচারীদের বিলি করতে দেখা গেছে। ঢাকার রামপুরায় সুজুকির ডিলারবাইকার্জ প্যারাডাইজতাদের শো-রুমের বাইরে প্রায়ই শরবত বিলি করছে। এমনকি মসজিদ কর্তৃপক্ষও পথচারীদের মাঝে শরবত দিচ্ছে। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি তৈরি করেছে বিশ্রামাগার। সেখানে ত্রিপল টানিয়ে পাখার বাতাস, ঠান্ডা পানির ব্যবস্থাসহ ছায়ায় তাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকেই নেমেছে সহযোগিতা করতে। মানবতার এক বিরল ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে দেশে। সেই করোনার সময় থেকে এসব দৃশ্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। আর বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে এসব মানবিক কর্মকান্ড প্রচারের কারণে অনেক মানুষ তাতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এবং অল্প সামর্থ্য নিয়েও সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।

চলুন পাশে থাকি: দেশের এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে আপনি আমি সবাই যার যার সামর্থ্যমতো এগিয়ে আসতে পারি। আপনি যে রিকশায় চড়েছেন, নামার সময় তাকে এক বোতল ঠান্ডা পানি বা জুস কিনে দিতে পারেন। অথবা তাকে এক প্যাকেট স্যালাইন আর এক বোতল পানি কেনার টাকা দিয়ে দিলেন। এভাবে প্রতিদিন বা / দিন পরপর আপনি সাহায্য করতে পারেন। বন্ধুরা একসঙ্গে উদ্যোগ নিয়ে পথের ধারে শরবত বা পানির বোতল কিনে দিতে পারেন শ্রমজীবীদের। বাসার সামনে পানির ব্যবস্থা করতে পারেন, যাতে পথচারীরা শুধু পানি খাওয়াই নয়, মাথায় বা চোখে-মুখে পানি ছিটাতে পারেন।

সাবধানতা : এতকিছুর মাঝেও একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অনেকে ঠান্ডা শরবত খাওয়াতে গিয়ে তাতে বরফ দিয়ে রাখছেন। এত গরমে এমন বরফ শীতল পানি কিন্তু তাদের উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হবে। ঠান্ডা লেগে জ্বর চলে আসতে পারে। তাই বরফ না দিয়ে শুধু ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন। এই সময়ের ঠান্ডা জ্বর খুব মারাত্মক, কাশি থেকে নিউমোনিয়া পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। পানিটা যেন বিশুদ্ধ হয় তা খেয়াল রাখবেন। উপকার করতে গিয়ে যেন তা অপকার হয়ে না যায়। পথচারীরা যারা পানি পান করবেন বা চোখে-মুখে ছিটাবেন, তারা সতর্ক থাকবেন যেন পানিটা নষ্ট হয়ে না যায় বা অতিরিক্ত খরচ হয়ে অপচয় না হয়।

তবে গাছের বিকল্প নেই। আগেরদিনের বাড়িগুলোতে গাছ লাগানোর জন্য অনেক জায়গা রাখা হতো। এখন আর তা নেই। তাই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকছে না। ছাদে গাছ লাগান। ঘরে বা বারান্দায়ও ইনডোর প্লান্ট লাগাতে পারেন। বাড়ির মালিকেরা সামনে অন্তত একটা বড় গাছ লাগান। এক সময় আমাদের দেশ ছিল নাতিশীতোষ্ণ। তাকে আবার আমাদেরই ফিরিয়ে আনতে হবে।

 

×