ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ে

কষ্টার্জিত জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০১:১০, ৮ মে ২০২৪

কষ্টার্জিত জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

তিন উইকেট শিকারি সাইফউদ্দিনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন সতীর্থরা

একটা সময় ক্রিকেট ময়দানে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে বাংলাদেশের। তবে এখন জিম্বাবুয়ের অবস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাজুক। গত দুইবার (২০১৯ ও ২০২৩) ওয়ানডে বিশ^কাপ খেলতে পারেনি তারা। এ ছাড়া টি২০ বিশ^কাপে অংশ নিতে পারেনি ২০২১ সালে এবং এবারও তারা বিশ^কাপের বাছাই থেকে বাদ পড়েছে। সেই দলের বিপক্ষে বিশ^কাপের আগে ৫ ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলাটাকে খুব বেশি উপকারী ভাবতে পারেনি কেউ।

কিন্তু সেই জিম্বাবুয়ে দলই মঙ্গলবার সিরিজের তৃতীয় টি২০তে পরাজয়ের চোখ রাঙানি দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত মাত্র ৯ রানের লড়াকু হার দেখেছে বাংলাদেশের কাছে। কষ্টার্জিত এই জয়ে অবশ্য দুই ম্যাচ বাকি রেখেই ৫ ম্যাচের টি২০ সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকার সুবাদে জিতে নিয়েছে টাইগাররা। এদিন চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৫ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই করে ৯ উইকেটে ১৫৬ রানের বেশি করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। 
র‌্যাঙ্কিং এবং সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও ভালোভাবে সফল হবে সেটাই প্রত্যাশিত সবার। ব্যাটার-বোলাররাও নিজেদের শানিয়ে তুলে আত্মবিশ^াসী হয়ে উঠবেন সেই ভাবনাই কাজ করেছে। তা ছাড়া টি২০ বিশ^কাপ দল চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে কয়েকজনের ফর্মে ফেরা, ফিটনেস দেখার বিষয়গুলোও আছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে পারেনি বাংলাদেশ দল। ফর্মের সঙ্গে সংগ্রাম করতে থাকা ব্যর্থ লিটন কুমার দাসের ওপরেই টানা ভরসা করতে হয়েছে।

অথচ বিকল্প ওপেনার হিসেবে তরুণ বাঁহাতি পারভেজ হোসেন ইমনকে নেওয়া হলেও টানা দুই ম্যাচে ব্যর্থ লিটনকেই এদিন খেলানো হয়েছে। স্থায়ী অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে বাঁহাতি নাজমুল হোসেন শান্তও সেই মিছিলে যোগ দিয়েছেন। টপঅর্ডারে এ দুজনের একটানা ব্যর্থতার কারণে দলগতভাবেই চাপ সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ দলের। বছরের শুরুতেই চট্টগ্রামের এই উইকেটে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) বেশ রান হয়েছে এবং দেশী-বিদেশী ক্রিকেটারে পূর্ণ দলগুলোর বোলিং লাইন ও ব্যাটিং লাইন বেশ গোছানো ছিল।

বর্তমানে জিম্বাবুয়ে দলের অবস্থা এর চেয়েও নাজুক। কারণ এর আগে ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ড ও কিছুদিন আগে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে সিরিজ হেরেছে তারা। সেই দলটির বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচেই টপঅর্ডারে লিটন-শান্ত ব্যর্থ হয়েছেন এবং কম লক্ষ্য তাড়ায় বেশ লড়াই করতে হয়েছে। 
টস বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজে। প্রথম দুই টি২০তে বাংলাদেশ টস জিতে আগে ফিল্ডিং করেছে আর সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে তৃতীয় ম্যাচে টস জিতেছে জিম্বাবুয়ে। দুই পরিবর্তন নিয়ে নামে বাংলাদেশ- শরিফুল ইসলামের বদলে তানজিম হাসান সাকিব এবং শেখ মেহেদি হাসানের জায়গায় তানভীর ইসলাম সুযোগ পেয়েছেন। তবে শুরুতে এদিনও ব্যাটিংয়ে নেমে জিম্বাবুয়ে বোলারদের সামনে রান তুলতে গিয়ে নাজেহাল হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা।

এরপরও অবশ্য পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৪২ রান উঠেছে মূলত তাওহিদ হৃদয়ের আক্রমণাত্মক মেজাজে। তার আগেই লিটন ১৫ বলে ২ চারে ১২ এবং নাজমুল হোসেন শান্ত ৪ বলে ৬ রানে সাজঘরে ফিরেছেন। নবম ওভারে তানজিদ হাসান তামিমও ২২ বলে ১ চার, ১ ছয়ে ২১ রানে বিদায় নেন। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে তাওহিদ ও জাকের আলী অনিক রানের গতি বাড়িয়ে ভালো একটি সংগ্রহে নিয়ে গেছেন। ৮৭ রানের জুটি গড়েন তারা মাত্র ৫৭ বলে।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটি চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি। ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৩৮ বলে ৩ চার, ২ ছক্কায় ৫৭ এবং জাকের ৩৪ বলে ৩ চার, ২ ছক্কায় ৪৪ রানে সাজঘরে ফেরেন। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৫ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ব্লেসিং মুজারাবানি দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রানে ৩টি উইকেট নেন তিনি। ১৪টি ডট করেছেন তিনি। 
জবাব দিতে নেমে জিম্বাবুয়ের টপঅর্ডার আগের দুই ম্যাচের মতোই ধসে পড়ে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে তারা। বাঁহাতি স্পিনার তানভীর বোলিং শুরু করেছেন এবং তার সঙ্গে তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন দুর্দান্ত বোলিং করেন। ধুঁকতে ধুঁকতে ১৪.১ ওভারে ৮ উইকেটে ৯১ রান করে দ্রুতই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে সফরকারীরা।

শুধু ওপেনার তাদিওয়ানাশে মারুমানি ২৬ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ৩১ রান করেন এবং জনাথন ক্যাম্পবেল মাত্র ১০ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ২১ রানে বিদায় নেন। তবে এরপরই ঘুরে দাঁড়ায় জিম্বাবুয়ে, বিধ্বংসী ব্যাটিং করেন ফারাজ আকরাম। তিনি ১৯ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ ওভারে ২১ রান প্রয়োজন ছিল জিম্বাবুয়ের।

প্রথম বলে উইকেট নিলেও সাইফউদ্দিন পরের দুই বলে বাউন্ডারি হজম করে শঙ্কায় ফেলেন বাংলাদেশকে। তবে শেষ পর্যন্ত ওই ওভারে ১১ রান নিতে পেরেছে জিম্বাবুয়ে। ৯ উইকেটে ১৫৬ রানে থামে তারা। সাইফউদ্দিন সবচেয়ে খরুচে ৪ ওভারে ৪২ রান দিয়ে এবং ৩ উইকেট নিয়ে সফলতমও। এ ছাড়া লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন ৩ ওভারে ৩৮ রানে ২টি, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দীর্ঘদিন পর বোলিং করে ১ ওভারে ১ রানে একটি উইকেট নেন।

×