ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

তালিকায় না থাকায় ইচ্ছামতো ব্যবহার

যশোরে শ’ শ’ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন

​​​​​​​সাজেদ রহমান, যশোর অফিস

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

যশোরে শ’ শ’ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন

.

যশোরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। এর কোনটিতে মানুষ বসবাস করছেন। আবার কোনটিতে ব্যবসা করা হচ্ছে। জরাজীর্ণ ভবনগুলোতে জীবনের ঝুঁকির আশঙ্কা থাকলেও কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। বহু পুরাতন এসব ভবনের পলেস্তারা ছাদ খসে পড়লেও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় নাম না থাকায় ভবনগুলো মানুষ নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করছে। এমন একটি ভবনের নাম হলো ড্রিমডেল। যশোর পৌরসভার নম্বর ওয়ার্ড ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের নিকুঞ্জ মোড়ে ড্রিমডেল ভবনটি অবস্থিত। জরাজীর্ণ ভবনটি অতিসত্তর ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিতের দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোড, সেন্ট্রাল রোড, জেল রোড, এইচ এম এম রোড, এমএম আলী রোড, বড় বাজার, খালধার রোড, কাপুড়িয়া পট্টি, হরিনাথ দত্ত লেন, ষষ্ঠীতলা পাড়া, পোস্ট অফিস পাড়ার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী এলাকা, গুরুদাস বাবু লেন, বারান্দীপাড়া, মোল্লাপাড়া, বেজপাড়া পুরাতন বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক পুরাতন জরাজীর্ণ ভবন রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ভবন অজ্ঞাত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। ফলে এসব ভবনে মানুষ বসবাস ব্যবসা করছে। একাধিক ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। প্লাস্টার ছাদ খসে পড়ছে। তারপরও ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে  না।  ঝড় বর্ষা মৌসুমে জরাজীর্ণ এসব ভবন বেশি বিপদজনক হয়ে ওঠে। কারণ ঝড় বৃষ্টিতে যে কোনো সময় ভবনগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এমনটা জেনেও মানুষ সেখানে ঝুঁকি নিয়ে সেখানে থাকছেন।

পৌরসভার নম্বর ওয়ার্ডের এইচএমএম রোডের বড় বাজার এলাকায় (কালীমন্দিরের আগে) জরাজীর্ণ একটি ভবন রয়েছে। ভবনের সামনে পেছনের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। তারপর সেখানে মৃত খবির মিয়ার পরিবারের সদস্যরা বসবাস করছেন।

কাপুড়িয়া পট্টির মা দুর্গা জুয়েলার্সের সামনে পুরাতন দুইতলার ভবন রয়েছে। যার নিচ তলায় একাধিক দোকানঘর দ্বিতীয়তলায় মানুষের বসবাস। ভবনটির চারপাশে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। তারপরও বাসিন্দারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। 

পৌরসভার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশেদ আব্বাস রাজ জানিয়েছেন, এসব জরাজীর্ণ ভবন যে কোনো সময় ধসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খুব শীঘ্রই এসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা প্রয়োজন। ঘোপ নওয়াপাড়া রোডে একাধিক জরাজীর্ণ ভবন রয়েছে। কোনো কোনটির বয়স একশবছরের বেশি। এমনি একটি ভবনের নাম ড্রিমডেল। ভবনের একাধিক স্থানে ফাঁটল ধরেছে। পলেস্তারা ছাদ খসে পড়ছে। ভবনে ছোট ছোট গাছ জন্মেছে। এক কথায় ভবনটি বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাসসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হলেও নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। ভবনটি ঝুঁকির তালিকায়ও নেই।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ড্রিমডেল একটি বিপদজনক ভবন। যতদিন যাবে ততই বিপদজনক হয়ে উঠছে। ঝড় বৃষ্টির দিনে আশপাশের বাসিন্দাদের চিন্তার শেষ নেই। কেননা যে কোনো সময় ড্রিমডেল ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার জন্য পৌরসভার কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

সূত্র জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত তালিকা তৈরির কাজে দীর্ঘদিন ধরে যশোর পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কোনো তোড়জোড় নেই। আবার জরাজীর্ণ ভবন মালিকদের চিঠিও দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ব্যবহারে মালিকদের আগ্রহের কমতি নেই।

এই বিষয়ে যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান জানান, ২০১৩ সালে পৌর এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছিল ১৮০টি। এরমধ্যে ১২০ ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে  ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে ৬০টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হলো নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দীপাড়া, খালধার রোড, বড় বাজার নম্বর ওয়ার্ডের ঘোপ নওয়াপাড়া, সেন্ট্রাল রোড জেলরোড এলাকায়। এসব ভবন মালিকদের মধ্যে বিরোধের মামলা ব্যবসায়ীদের মামলা চলমান থাকায় সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তবে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার সঙ্গে এসব ভবনগুলো ভেঙে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করা হবে।

×