ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস

অপূর্ব কুমার কুণ্ডু

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস

ড. রীতা চৌধুরীর উপন্যাস

সম্প্রতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অসমীয়া লেখক ড. রীতা চৌধুরীর উপন্যাস নেভার ল্যান্ড জিরো আওয়ার প্রকাশিত হয়েছে। 
১৯৭১ সালে যে সকল মুক্তিযোদ্ধা আসামে গিয়ে যুদ্ধের ট্রেনিং নেন তাদের প্রশিক্ষণের অন্যতম প্রশিক্ষক ছিলেন এসএসবি স্পেশাল সিকিউরিটি ব্যুরোর হয়ে লেখকের পিতা বিয়োজা নন্দ চৌধুরী যাঁকে সকলে আদর করে বলতেন বিএন গুরু। বাবার সঙ্গে তিনি নয় বছর বয়সেই দেখেছেন যুদ্ধের ট্রেনিং, উদ্ধাস্তুদের আর্তনাদ, আহতদের চিকিৎসা, শোকার্তদের সান্ত¦না যোগাতে গণসংগীত পরিবেশনা, মনোবল বাড়াতে নাটকের মঞ্চায়ন প্রভৃতি।

পরবর্তীতে তিনি যখন পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে পড়লেন তখন বুঝতে শিখলেন যুদ্ধের রাজনীতি, বাংলাদেশের যুদ্ধ বাস্তবতা এবং বিশ্ব পরাশক্তির ভূমিকা। এসবই তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াত এবং এখনো বেড়ায়। ফলে সিদ্ধান্ত নেন ট্রিলজি রচনার। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বের প্রেক্ষাপট, যুদ্ধকালীন সময় এবং স্বাধীন বাংলাদেশ এই বিষয়ভিত্তিক ট্রিলজির প্রথম পর্বের গ্রন্থ নেভার ল্যান্ড জিরো আওয়ার।
নেভার ল্যান্ড জিরো আওয়ার গ্রন্থের বিষয় প্রেক্ষাপট হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, উদ্বাস্তেুর অসহায়ত্ব, ১১ সেক্টরের পরিকল্পিত লড়াই, সর্বসাধারণের অংশগ্রহণের গৌরবগাথা প্রভৃতি। তিনি একজন অসমীয়া বলে তাঁর রচনা শুধু বাংলাদেশ, বাঙালি, অসমীয় এই গ-িতে আটকে থাকে না বরং একটা যুদ্ধ যে একটা বিশ্ব রাজনীতির বলয়ে নিরুপিত, একটি স্বাধীনতাকামী দেশের মানুষের লড়াই সংগ্রাম যে শত্রু মিত্র ঘরে কিংবা বাইরে, সম্প্রীতির মাঝে বিদ্বেষ নিয়ে আসাটা যে সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির বিপুল অর্থ লগ্নির ফসল এসবেরই তথ্য সত্য ইতিহাস কল্পনার সংমিশ্রণে রচনা উপন্যাস নেভার  ল্যান্ড জিরো আওয়ার।

জিরো আওয়ার মানে যে যুদ্ধ শুরুর ঘণ্টা ধ্বনি সেতো যুদ্ধমত্ত এই ধরিত্রীবাসীর সকলের জানা কিন্তু নেভার ল্যান্ড শব্দে জিজ্ঞাসা-জিগাংসা-নিরুপায়তা-স্বপ্ন দেখা-স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রণা সেসব ডিঙ্গিয়ে এক নবপ্রভাতের মতো, নবশিশুর মতো একটা স্বপ্নের ভূখ-ের দেখা মেলা। যেখানে আছে বাঁচার স্বাধীনতা, হাত বাড়ালেই সহযোগিতা, সমবেত চলতি পথের গর্বিত শোভাযাত্রা। আর সেকারণেই বইটির নাম নেভার ল্যান্ড জিরো আওয়ার।
নেভার ল্যান্ড জিরো আওয়ার উপন্যাসের পাতায় পাতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী জীবন্ত হয়ে উঠেছে। অখ- পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন থেকে শুরু করে ঢাকা-করাচি-দিল্লি-দন্ডকারণ্য-মালকানগিরিতে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছে উপন্যাসের কাহিনী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষমতা লাভে প্রতিবন্ধকতা দিতে পাকিস্তানের প্রশাসকের প্রচেষ্টা, সেই পরিস্থিতিতে ভারতের ভূমিকা আর প্রস্তুতি পর্ব থেকে প্রজ্বলন পর্ব পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের পরিক্রমা, ১৯৭১ সালের পূর্ববঙ্গের সমাজ জীবনের বাস্তব ছবি উপন্যাসে সাবলীল ও জীবন্তভাবে বর্ণিত হয়েছে। 
উপন্যাসটি হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কাহিনীতে বাস্তবতার ভিত্তির পাশাপাশি যোগ হয়েছে লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং শক্তিশালী কল্পনা। অধিকাংশ চরিত্রই সত্যিকারের চরিত্র। কাহিনীর প্রয়োজনে গড়ে তোলা কাল্পনিক চরিত্রগুলোও বাস্তবেরই অংশ। এই কাহিনী নির্মাণে লেখক একটি শক্তিশালী গবেষণা কর্মসম্পন্নের মধ্য দিয়ে এগিয়েছেন।

তাঁর নিজেরই নেওয়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকার, ভিডিও ফুটেজ, অনেক বই, প্রবন্ধ, গবেষণাপত্র, লিখিত সাক্ষাৎকার, আত্মকথা, জীবনী, পৃথিবীর বিভিন্ন চ্যানেলের বহু সাক্ষাৎকার, ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত নির্ভরযোগ্য তথ্য, ফটো প্রভৃতির থেকে প্রয়োজনীয় অংশ নিয়ে তাঁর এই উপন্যাস রচনা। গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট কিউ আর কোড থেকে ভিডিও-অডিওর মাধ্যমে ইতিহাসের অনেক অংশ পাঠক চাইলে দেখে নিতে পারেন। বইটি লেখক ড. রীতা চৌধুরী উৎসর্গ করেছেন শেখ রাসেল এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত সমগ্র বিশ্বের শিশুদের। উপন্যাসের আদলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সময়ের যেন এক আস্তদলিল নেভার ল্যান্ড জিরো আওয়ার।

×