ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

প্রসঙ্গ বাফুফে নির্বাচন

নিজেদের কাজটা সেরে রাখছেন সালাউদ্দিন

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৫০, ৫ মে ২০২৪

নিজেদের কাজটা সেরে রাখছেন সালাউদ্দিন

টানা চারবারের বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন প্রস্তুত হচ্ছেন আরেকবারের জন্য

সেই ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। দেখতে দেখতে সভাপতি হিসেবে আরেকটি কার্যমেয়াদ প্রায় পূরণ করার পথে কাজী মো. সালাউদ্দিন। গত শুক্রবার বাফুফের নির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আগামী ২৯ জুন বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

তবে নির্বাচনের তারিখ এখনো ঠিক করা হয়নি। গত ১৬ বছর ধরে চারটি নির্বাচন করেছেন সালাউদ্দিন। কখনো তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, কখনো প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে হারিয়েছেন বিপুল ব্যবধানে। যদিও প্রতিবারই নির্বাচনের আগে বিভিন্ন মহল থেকে তার তীব্র সমালোচনা করা হয়, কিন্তু পরে দেখা যায় ভোটের খেলায় প্রতিবারই জয়ী প্রার্থীর নাম সালাউদ্দিন। 
যদিও সর্বশেষ ২০২০ নির্বাচনে জয়লাভের পর সালাউদ্দিন ঘোষণা দিয়েছিলেন- এটাই তার শেষ টার্ম, আর কখনো নির্বাচন করবেন না। পরে একসময় নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। কিন্তু কিছুদিন আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে সংশয় সৃষ্ট হয় তার নির্বাচন করা নিয়ে। অবশ্য চিকিৎসা শেষে তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ। তাছাড়া নির্বাচন করবেন না- এ জাতীয় কোনো মন্তব্য এখনো করেননি সালাউদ্দিন। ফলে নিশ্চিতভাবেই ধরে নেয়া যায় আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তিনি।

যারা সালাউদ্দিনের কট্টর বিরোধী ও সমালোচক, তাদের সমস্যা হলো এত তর্জন-গর্জন করলেও তারা নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে কোন প্রার্থী দাঁড় করাতে পারে না। একবার তো তারা সব পদে তাদের প্রার্থী দিলেও সভাপতি পদেই প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়ে হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছিল।
যাহোক, নির্বাচন করুন বা না করুন, নির্বাচন সংক্রান্ত সব ধরনের কাজগুলো কিন্তু ঠিকই সেরে রাখছেন সালাউদ্দিন। যার প্রমাণ গত শুক্রবারের নির্বাহী সভা। এই সভায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল নারী ফুটবল লিগে অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরশিপ। বাফুফের নির্বাহী কমিটি নারী লিগের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ চার দলের কাউন্সিলরশিপ প্রদানের জন্য আগামী বার্ষিক সাধারণ সভায় উত্থাপন করবে। বার্ষিক সাধারণ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাশ হলেই চারটি ক্লাব আসন্ন নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
এই ব্যাপারটিকে দেখা হচ্ছে সালাউদ্দিনের নিজেদের প্যানেলের বিজয় সুসংহত করতে বা ‘ভোট ব্যাংক’ আরও মজবুত করার একটি কৌশল হিসেবে। এটা অনেক আগে থেকেই ‘ওপেন সিক্রেট’, ভোটার হিসেবে সালাউদ্দিনের মূল ভরসা হচ্ছে ডিস্ট্রিক্ট ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনগুলো (ডিএফএ)। তবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে যদি নতুন অথচ অনুগত কিছু কাউন্সিলর সৃষ্টি করা যায়, তাহলে মন্দ কী? এতে করে ভোট ব্যাংক আরও বৃদ্ধি পাবে। এই ভাবনা থেকেই নারী ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরশিপ নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন সালাউদ্দিন।   
তবে নির্বাচনের আগে নারী দলের কাউন্সিলরশিপ নিয়ে বাফুফের নির্বাহী কমিটির একাংশ থেকেই প্রচ- আপত্তি এসেছে। নির্বাহীর কমিটির একাধিক সদস্য নারী লিগে কাউন্সিলরশিপ প্রদানে চরম বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু সালাউদ্দিন নিজে এই প্রস্তাবের স্বপক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। ২০২১ সালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়া ও নারী ফুটবলে অগ্রযাত্রার জন্য আরও একটু বেশি কাউন্সিলর করার ব্যাপারে ইচ্ছে প্রকাশ করেন বাফুফে সভাপতি।

তাই ২৯ জুন বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদনের জন্য চারটি ক্লাবের নাম উঠবে। যদিও দুই বছর আগে ফিফা কাউন্সিলরশিপ কমাতে বলেছিল বাফুফেকে। তাহলে এখন বাফুফে কেন আবার কেন কাউন্সিলরশিপ বাড়াচ্ছে? আসলে আগের বোর্ড সভায় বাফুফে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কাউন্সিলরশিপ কমানো হবে না। সেটা তখনই ফিফাকে অবগত করেছিল বাফুফে। এবার নারী দলগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে বোর্ডে সুপারিশের সিদ্ধান্ত হয়। ফলে এখন বিষয়টি এজিএমে উঠবে।
তাহলে বিষয়টি এমন দাঁড়াচ্ছেÑ সালাউদ্দিনের ভোট ব্যাংক আগের চেয়েও এবার আরও শক্তিশালী হচ্ছে এবং সন্দেহতীতভাবেই নির্বাচনে আবারও সভাপতি পদে প্রার্থী হচ্ছেন সালাউদ্দিন। যদিও তার বিপক্ষে কে বা কারা প্রার্থী হবেন, তার কোনো বিন্দুমাত্র আভাস এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। যদি এটা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে, তাহলে সভাপতির মসনদে কে বসতে যাচ্ছেন, তা তো দিবালোকের মতো পরিষ্কার।

×