ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

পাউবোর গাইড ওয়াল নির্মাণে নিম্ন মানের সামগ্রী

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পাউবোর গাইড ওয়াল নির্মাণে নিম্ন মানের সামগ্রী

বাণীগ্রাম কুমারী ছড়ায় গাইড ওয়াল নির্মাণে আরসিসি ঢালাইয়ে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার

বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের বাণীগ্রামের কুমারীছড়া এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে ২৩ মিটার গাইড ওয়াল নির্মাণে বহুমুুখী দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী। 
ছোট্ট এই কাজটির জন্য টেন্ডার সিডিউলে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হলেও গাইড ওয়াল নির্মাণের আরসিসি ঢালাইয়ে নিম্ন মানের পাথর, সিমেন্ট, বালি ও রড ব্যবহার করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। এই ছোট্ট কাজটির ‘লাভের গুড়’ খেতে এই পর্যন্ত তিনজন বিএনপি নেতা ঠিকাদার হাত বদল দেখিয়ে পাউবো কর্মকর্তারাও ভাগের হিসেবে উৎফুল্ল হয়ে দুর্নীতিতে বাধা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, সাধনপুরের বাণীগ্রাম কুমারী ছড়ার শ্মশান পাড়ের ২৩ মিটার গাইড ওয়ালের কাজ পেয়েছেন ফণি এন্টার প্রাইজের মালিক রুপেশ চাকমা। বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। পাউবো কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় কাজটি রুপেশ চাকমাকে কিছু লাভ দিয়ে চুক্তিতে ভাগিয়ে নেন বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি লোকমান আহম্মদ প্রকাশ মাস্টার লোকমান। তিনি আরেক চুক্তিতে বিক্রি করে দেন কাথরিয়ার বিএনপি নেতা রাসেলের কাছে। অর্থাৎ কাজে লাভের গুড় খেলেন ৩ জন ঠিকাদার। বর্তমানে উপ-ঠিকাদার রাসেল পাউবোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য রেখে ভয়ঙ্কর দুর্নীতি করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় শ্মশানের কয়েকজন ব্যক্তি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, কাজে নিম্ন মানের সিমেন্ট, পাথর, সিলেকশন বালির পরিবর্তে স্থানীয় বালি ব্যবহারসহ নানা অনিয়ম করা হচ্ছে। শুনেছি অভিযোগ করলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়, তাই কোনো রকমে কাজ উদ্ধারে চুপ থেকেছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কুমারী ছড়ার পাড়ের গাইড ওয়াল সরাসরি ছড়ার মাঝখানে করা হচ্ছে। নিচের অংশে ঢালাই ও গাইড ওয়ালের আর.সি.সি ঢালাইয়ে ৯৫% থেকে ১০০% ক্লিংকার যুক্ত ওপিসি সিমেন্ট (ওরডিনারি পোর্ট ল্যান্ড সিমেন্ট)’র পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে পিসিসি সিমেন্ট (পোর্ট ল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্ট), ১২ এমএম লোহার পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে ১০ এমএম লোহা, সিলেকশন বালি ২. ৫ এফ এম সিলেটি বালির পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে ০.৮ এফএমের স্থানীয় পাহাড়ি ছড়ার বালি। ঢালাইয়ের জন্য যেসব পাথর মজুত করা হয়েছে তা অত্যন্ত নিম্ন মানের। হাতে ঘষা দিলেও অনেক পাথর গুঁড়ি হয়ে যায়।
ফনি এন্টারপ্রাইজের মালিক রুপেশ চাকমা বলেন, আমি পাউবো কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় কাজটি চুক্তিভিত্তিক বিএনপি নেতা লোকমান আহম্মদকে বিক্রি করে দিয়েছি। দুর্নীতি করলে পাউবো কর্মকর্তা ও ওই ঠিকাদার দায়ী। আমি নয়। ওই কাজের উপ-ঠিকাদার দাবি করে বিএনপি নেতা রাসেল বলেন, আমি কাজটি লোকমান ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়েছি। সিডিউল অনুসারে করছি। পাউবো কর্মকর্তারা আমার কাজ দেখে প্রশংসা করেছে। আমি কোনো দুর্নীতি করছি না। নিম্নমানের পাথর, বালি, রড ও সিমেন্টের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ রকম কাজ বাহারছড়া, সরল, কালীপুরেও হচ্ছে শুধু আমি একা করছি না। সব ঠিকাদার একইভাবে কাজ করছে। 
পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম পাল বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ পেলে কাজের মান নিয়ে তদন্ত করব। সরেজমিন পরিদর্শনের সময় নিম্নমানের পাথর, বালি, সিমেন্ট মজুত থাকলেও আপনি ঠিকাদারকে কিছু বলেননি অথচ দ্রুত কাজ চালিয়ে যান বলে পরামর্শ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে- এই প্রশ্নে তিনি বিষয়টি আবার দেখবেন বলে এড়িয়ে যান।

×