তীব্র গরমে আইসিডিডিআরবি হাসপতালে বাড়ছে জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগী
বৃষ্টির অপেক্ষায় মানুষ ও প্রাণিকুল চাতক পাখির মতো বসে আছে। উষ্ণতম মাস এপ্রিলে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে কালো মেঘের দেখাও মেলেনি। চুয়াডাঙ্গায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও তাতে উল্টা গরম বেড়েছে। পুরো এপ্রিল মাসেই (১-২৬) দেশের বিভিন্ন স্থানজুড়ে তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। যা নজিরবিহীন তো বটেই এর সঙ্গে ভেঙেছে ৭৬ বছরের রেকর্ড। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ২০১০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ২০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল, তবে তা টানা ছিল না। এ বছর টানা ২৬ দিন তাপপ্রবাহ চলছে। শুক্রবার চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই মাসের যে ক’দিন বাকি তাতে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহ বিস্তার থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো খবরও পাওয়া যাচ্ছে না।
আগামী মে মাসের ২ তারিখ থেকে দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে তা অনেকটা অন্ধকারে ঢিল মারার মতো বলে জানান আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত যে হবে এমন কথা আমরা বলিনি। কথা দিলে তো কথা রাখতে হবে। আমরা শুধু সম্ভাবনার তথ্য জানিয়েছি।
এ বছর এপ্রিল মাসে মাত্র একটি বড় কালবৈশাখী হয়েছে। গত বছরও এর সংখ্যা ছিল সাতটি। বজ্রমেঘ সৃষ্টি হয়ে কালবৈশাখী ও বৃষ্টি হয়। এর জন্য ভারতের বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় সৃষ্টি হওয়া স্কোয়েল বা ঝড়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এবার এর লক্ষ্মণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। শুক্রবার তীব্র গরমে লালমনিরহাটে রাসেদুল ইসলাম নামে এক ইজিবাইক চালকের হিটস্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে। শুধু চুয়াডাঙ্গা নয়, এদিন দেশের বেশ কয়েক জেলায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন তাপপ্রবাহ নিয়ে গবেষণা করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক। তিনি জাানান, ‘১৯৪৮ সাল থেকে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এবারের মতো টানা তাপপ্রবাহ আগে হয়নি।
৭৬ বছরের রেকর্ড এবার ভেঙে গেল। টানা তাপপ্রবাহের সঙ্গে এবার বিস্তৃতিও বেশি ছিল। এ বছর দেশের ৭৫ ভাগ এলাকা দিয়ে টানা তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, যা আগে কখনোই ছিল না।
শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় রাজধানীর সড়কে যান চলে ঢিলেঢালাভাবে। গরমের দিন হওয়ার তা আরও কমে এসেছে। মিরপুর ১০ নম্বরে কথা হয় মামুন হোসেনের সঙ্গে। জনকণ্ঠকে তিনি জানান, দীর্ঘ সময় বাসের জন্য বসে আছি। যাব বাংলামোটর। কিন্তু মিরপুরে মেট্রোরেলের কারণে এখন বাসের সংকট। সে কারণে যাত্রীদের বিড়ম্বনাও বেশি, গন্তব্যে পৌঁছাতে লাগবে বেশি সময়। গুলিস্তানে কথা হয় আয়েশা বানুর সঙ্গে। তিনিও মিরপুর থেকে গুলিস্তান এসেছেন সঙ্গে ছোট্ট শিশু নিয়ে। আয়েশা অভিযোগ করেন, মিরপুর থেকে গুলিস্তান আসতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। সড়ক ফাঁকা থাকায় কোথাও সিগন্যাল ছিল না। কিন্তু যাত্রী খরায় সব স্টপেজে বাস অন্তত ৫-৮ মিনিট যাত্রাবিরতি দিয়েছে। মিরপুর এক নম্বরে চায়ের দোকানি লোকমান। দুই ছেলে ও তিনি পালা করে দোকান চালান। কিন্তু তীব্র গরমে সকাল ১০টা থেকে বেলা চারটা পর্যন্ত দোকান বন্ধ রাখেন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ছেলে দুইটা ছোট হওয়ায় এই গরমে চা বিক্রি করতে চায় না। চুলার হিটে তারা কয়েকদিন দোকানে আসা বাদ দিয়েছে। এ কারণে দিনে ৬ ঘণ্টা দোকান বন্ধ রাখছি।
রাজধানীতে গাছ ও জলাধার সংকট মারাত্মক আকারে কমেছে। অন্তত ১৫ ভাগ জলাধার থাকার দরকার হলেও তা আছে ৫ ভাগ। এর মধ্যে অধিকাংশ খালই দূষিত। তীব্র গরমে তাই রাজধানীর প্রাণিকুল বিশেষ করে পশু-পাখিদের অবস্থাও শোচনীয়। নগরের অধিকাংশ জায়গা ইট-কংক্রিটের হওয়ায় সড়কের কুকুরগুলোর বিশ্রামের জায়গাও কমেছে। মাজার রোডের একটি কলোনিতে কিছু মাটির জায়গা রয়েছে। সেখানে অন্তত এক ডজন কুকুরকে বেঘোরে ঘুমাতে দেখা গেছে। এই এলাকার স্থানীয় লাবিবা কান্তা জানান, ইদানীং বেলকনিতে পাখি এসে ডাকাডাকি করে। জানালার কাচের গ্লাসে ঠোকায়। যে কারণে বারান্দায় একটি পাত্রে পানি ও অন্য পাত্রে কিছু চাল রেখেছেন।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী বিভাগে গত ১ এপ্রিল থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগটির তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এরপর ঢাকা, খুলনা ও রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা বাড়ে এবং দুই দিন তা অব্যাহত থাকে। ৮ এপ্রিল কক্সবাজার ও সীতাকুন্ডে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ও জলবায়ু সংক্রান্ত রেকর্ড থেকে বোঝা যায়, গত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশে উষ্ণতার মাত্রা ও এর স্থায়িত্ব বাড়ছে। রাজশাহী, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি। সম্প্রতি আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন’ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দ্রুত বাড়ছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। চুয়াডাঙ্গা ও যশোরের তাপপ্রবাহ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদরা এই অঞ্চল উষ্ণ বায়ু আগমনের প্রবেশদ্বার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ ছাড়াও এই অঞ্চলে গত এক দশকে অস্বাভাবিক হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে আবহাওয়াবিদরা মনে করেন।
আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা তাপপ্রবাহের পেছনে চারটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে উপমহাদেশীয় উচ্চ তাপ বলয়, শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, এল নিনোর সক্রিয়তা এবং বজ্রমেঘের কম সংখ্যা দায়ী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক প্রচ- তাপমাত্রা শুধু বাংলাদেশে নয়, বৈশ্বিকভাবেই বেড়ে গেছে। তবে এর প্রভাব বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উপমহাদেশে একটি অতিমাত্রার তাপবলয় তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, এখন যে তীব্র গরম পড়েছে, তা স্থানীয়ভাবে সৃষ্টি হওয়া কোনো মেঘের মাধ্যমে বৃষ্টি হলে কমবে না। বড় ধরনের বজ্রঝড়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বড় তাপপ্রবাহের অঞ্চল ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চল, খুলনা ও রাজশাহীর গরম বজ্রঝড়েই কমা সম্ভব।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শৈলৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া এবারের প্রচন্ড গরমের একটি কারণ।
পাহাড় বা পর্বতে বাধা পেয়ে বায়ু ওপরের দিকে উঠতে থাকলে তা তাপ কমিয়ে শীতল হতে থাকে। এর ফলে কোনো এক উচ্চতায় জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। আর এই মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এ জন্য পর্বতের প্রতিবাত অঞ্চলে অত্যধিক বৃষ্টি হয়। ভারতের আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমঘাট পর্বত; বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, মিয়ানমারের আরাকান পর্বতে এ ধরনের বৃষ্টি দেখা যায়। বাংলাদেশের বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ের গায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এ বৃষ্টি বেশি হয়। কিন্তু এবার এর পরিমাণ একেবারেই কম। তাই গরমও অনেক বেশি। এবারের অতি তাপের কারণে অতিরিক্ত জলীয়বাষ্প জমা হচ্ছে। আর তাতে চলতি বছর অতিবৃষ্টি হতে পারে।
সতর্ক করেছে জাতিসংঘ ॥ জাতিসংঘের আবহাওয়া সংক্রান্ত সংস্থা ডব্লিউএমওর মতে, অন্যান্য মহাদেশের চেয়ে এশিয়ায় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়েছে বেশি। এ কারণে এই মহাদেশের তাপমাত্রাও বাড়ছে। ১৯৯১ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এশিয়ার গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমনকি ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর এশিয়ার গড় তাপমাত্রা ছিল দশমিক ৯১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টানা ও দীর্ঘ তাপপ্রবাহে এক দিকে এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহগুলো গলে যাচ্ছে, অন্যদিকে জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে যা অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের পানির নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ব্যাপক সংকট সৃষ্টি করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে। এক বিবৃতিতে ডব্লিউএমওর শীর্ষ নির্বাহী কেলেস্টে সাউলো বলেন, এশিয়ার অধিকাংশ দেশের ইতিহাসে ২০২৩ সাল ছিল উষ্ণতম বছর। জলবায়ু পরিবর্তনের গভীর প্রভাব ইতোমধ্যে জনজীবন ও পরিবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনীতিতেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি, হিমবাহ গলে যাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে এই প্রভাব আরও ব্যাপক হবে।
রাজশাহী ॥ উত্তরের জনপদ রাজশাহীকে এখন বলা হচ্ছে পদ্মাপাড়ের মরুর শহর। স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী জানান, এই নগরে আরেক দফা বেড়েছে তাপমাত্রার পারদ। সঙ্গে বইছে লু-হাওয়া। গেল ১ এপ্রিল মৃদু তাপপ্রবাহ দিয়ে এ অঞ্চলে শুরু হয় গরমের দাপট।
এরপর মাঝারি তাপপ্রবাহ। তারপর শুরু হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। আর দুই সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা ৪০-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশেই থাকছে। সর্বশেষ শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত বছরের ১৭ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ২০০৫ সালের এপ্রিলও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ অবস্থায় তাই অচল হয়ে পড়েছে রাজশাহীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল এ রাজশাহীতেই। ওইদিন রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। আর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তাপমাত্রার এ রেকর্ড আর ভাঙেনি। তবে দেশে এবারের চলমান অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আগের সেই সর্বোচ্চ রেকর্ড অতিক্রম করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক মো. গাওসুজ্জামান বলেন, ভারি বর্ষণ ছাড়া আপাতত এ তীব্র তাপপ্রবাহ প্রশমিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর দুই একদিনের মধ্যে রাজশাহীতে বৃষ্টিপাতেরও কোনো সম্ভাবনাও নেই।
তাই আপাতত বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অনাবৃষ্টি ও তাপদাহ থেকে মুক্তি পেতে টানা তৃতীয় দিনের মতো আজ শনিবার সকাল ১০টায় রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম (রহ.) কেন্দ্রীয় ঈদগাহে ইস্তিস্কার জামাত আয়োজন করা হয়েছে।
পাবনা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা বেড়া পাবনা জানান, পাবনার বেড়ায় প্রচন্ড তাপপ্রবাহে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন, মানুষ ও পশু-পাখির প্রাণ ওষ্ঠাগত। জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গেল ছয়-সাত দিন ধরে অতিরিক্ত গরম ও তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। প্রচন্ড গরম ও তাপপ্রবাহে খেটে খাওয়া মানুষে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। অনেক অঞ্চলের হস্তচালিত নলকূপে পানি উঠছে না। সুপেয় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের প্রখরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাট-বাজার ও সড়কে মানুষের উপস্থিতি অনেক কম। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না অনেকেই। প্রচন্ড গরমে ধান গাছের পাতা পুড়ে গেছে। অন্যান্য ফসলও তীব্র গরমে রঙিন হয়ে গেছে। সবুজ পাতাগুলোও মরে যাচ্ছে।
বগুড়া ॥ স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় তাপপ্রবাহ বাড়ছেই। শুক্রবার চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। শুক্রবার বিকেল ৩টায় বগুড়ায় তাপমাত্রার পারদ পৌঁছে ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এদিকে বৃষ্টির জন্য শহরের মালতিনগর ঈদগাহে মুসল্লিরা দুপুরে ইস্তিস্কার নামাজ ও বিশেষ মোনাজাত করেন। বগুড়া আবহওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী গত ৩ বছরের মধ্যে শুক্রবার বগুড়ার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ। ২০২২ সালের এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি। আর গত বছর সর্বোচ্চ তাপামাত্রা ছিল ১৭ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকেই বগুড়ায় তাপামাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ২ থাকলেও শুক্রবার তা ৪০ অতিক্রম করে।