ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

জামায়াত নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে

জাতি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সন্ত্রাসী দল জামায়াতের নিষিদ্ধ হওয়ার জন্য সুদীর্ঘকাল অপেক্ষা করছে। সংসদে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, জামায়াত নিষিদ্ধের মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে। আশা করি, কোর্টের রায় খুব শীঘ্রই যদি হয়ে যায়, তাহলে জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ হবে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াত বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিপুলভাবে খুন, ধর্ষণ, লুঠতরাজ, অগ্নিসংযোগে মেতে উঠেছিল। মানবতাবিরোধী এসব অপরাধের পরিকল্পক ও নির্দেশনাদানকারী দল হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধ হয়নি এখনও, এমনকি তাদের বিচারও এখন পর্যন্ত শুরু করা যায়নি। একটি উদ্যোগ অবশ্য নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার প্রায় সাড়ে চার বছর আগে। জামায়াতের বিচারের জন্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। কিন্তু আইনী জটিলতার কারণেই সে উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। নবগঠিত সরকার এখন আবার আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে। আইনমন্ত্রী সম্প্রতি জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার শুরুর জন্য আবারও আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে আবারও আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি, যাতে এটা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়। আমরা মনে করি আইন সংশোধনের মাধ্যমে জামায়াতের বিচার সম্পন্ন করা সম্ভব হলে জাতি বিরাট দায়মুক্ত হবে। গত কয়েক বছরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কয়েক ব্যক্তির দন্ড কার্যকর করার মধ্য দিয়ে জাতি আংশিকভাবে দায়মুক্ত হয়েছে- এটা সত্য। কিন্তু যে দলটি পাকিস্তানী বর্বর হানাদার বাহিনীকে সর্বতোভাবে সহায়তা দিয়ে ত্রিশ লাখ মানুষের জীবনহানি ঘটিয়েছে, বিপুল সংখ্যক মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমাদের দেশকে পিছিয়ে দেয়ার সুদূরপ্রসারী নীলনক্সা বাস্তবায়নের জন্য দেশের সেরা সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে- সেই দলটি কোনভাবেই পার পেয়ে যেতে পারে না। চরম পরিতাপের বিষয় হচ্ছে বিএনপি সেই চিহ্নিত খুনীদের দলটিকে এদেশে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিয়েছে। এমনকি তাদের মন্ত্রিত্ব পর্যন্ত উপহার দিয়েছে। জাতীয় সংসদ কলঙ্কিত করেছে সেই সব কুলাঙ্গার। দেশের লাখো শহীদের আত্মার সঙ্গে এ হলো নির্মম নিষ্ঠুর প্রহসন। অবশ্য সাম্প্রতিক জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতি তাদের এবং তাদের দোসর বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করে চমৎকার প্রতীকী শাস্তি দিয়েছে। তার পরও স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি, মানবতাবিরোধী অপরাধকর্মের হোতা দল জামায়াত নিষিদ্ধ করে তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত জনমনে প্রকৃত স্বস্তি আসবে না। ভুলি নাই সে ইতিহাস কোন বাঙালীর পক্ষেই ভোলা অসম্ভব। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন বিভিন্ন দাবির বিরোধিতা করে জামায়াত। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ নামে বিভিন্ন দল গঠন করে জামায়াত ও এর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ। সে সময় তারা সারাদেশে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো যুদ্ধাপরাধ ঘটায়। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত অবশ্য ৩৫টি মামলায় ৮০ জনকে দন্ড প্রদান করেছে। যার মধ্যে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে ৫৪ জনকে, আমৃত্যু কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে ২৪ জনকে। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে আরও ৩২ মামলায় ১৩৪ রাজাকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারাধীন রয়েছে। উল্লেখ্য, একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করে আদালতের একটি রায়ে বলা হয়, দেশের কোন সংস্থার শীর্ষ পদে স্বাধীনতাবিরোধীদের থাকা উচিত নয়। আমরা প্রতীক্ষায় আছি, জামায়াত নিষিদ্ধ হবে আইনের মাধ্যমেই। এর পরই তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা জরুরী।
×