ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভালবাসার পদাবলি

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ১১ জানুয়ারি ২০১৯

ভালবাসার পদাবলি

বৃহত্তর প্রাচীন গঙ্গারিডির তীরবর্তী রাঢ় অঞ্চলের অধিবাসী কবি আমিনুল ইসলাম। আত্মকথনের একটি ভূমিকায় সেই সুখস্মৃতি রোমন্থন প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “পদ্মা-মহানন্দা- পাগলা- পাঙ্গাশমারী- বিধৌত চাঁপাইনবাবগঞ্জের পলিসমৃদ্ধ চরাঞ্চলে আমার জন্ম। যে কোন অর্থেই আমি জলের সন্তান-কোনো জনমে জলদাস ছিলাম কিনা জানি না। ... আমার শৈশব, আমার কৈশোরের মধুর দিনগুলো, আমার যৌবনের বড় অংশ কেটেছে নদীবিধৌত প্রকৃতির উদার অবাধ প্রাঙ্গণে। পরবর্তীতে আমাদের ভিটেমাটি জমিজমা সব গেছে সেই নদীর পেটে। পদ্মা নদীর গ্রাসে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে আমার জন্মগ্রাম টিকলীচরসহ ওই এলাকার ৪/৫টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম-মাঠ-ঘাট-হাট-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমার জাগরণে এবং স্বপ্নে এখনো সেই গ্রাম, সেই মাঠ, সেই নদী, সেই কৈশোর সেই স্কুল প্রবলভাবে অস্তিত্বশীল।’’ শৈশবের সেই প্রত্ন চেতনার লোকায়ত অনুভূতি ও ঐতিহ্যেরপরম্পরা থেকে সৃষ্ট ভাবাদর্শ তাঁর কবিতায় নানাভাবে আত্মীকৃত হতে দেখা যায়। এর সাথে পরবর্তীকালে যাপিত জীবনের নানা দ্বন্দ্ব, নানা ধরনের কূটাভাস, বিভাজিত সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণীর কুটিলতা, অস্তিত্বের টানাপোড়েন ইত্যাদি বহু উৎসজাত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির অন্তর্বয়ন বিবেচ্য হয়ে ওঠে তাঁর কবিতায়। কবিতার নিহিত ভাববিভাব ও তাৎপর্য বিষয়ে তাঁর অবস্থান যাই হোক না কেন, কবি আমিনুল ইসলাম বস্তুত প্রেমের কবি। আবেগ, অনুভূতি ও বাক প্রতিমা তাঁর কবিতায় স্তরে স্তরে নবায়িত হওয়ার ফলে কার্যত তিনি হয়ে ওঠেন নতুন নির্মাতা। নিত্যনতুন প্রযুক্তি লালিত শব্দ তাঁর লিখন-রীতিতে এনে দেয় এক নিরবচ্ছিন্ন চলিষ্ণুতা। চলমান জীবন থেকে নেওয়া এ ধরনের কেতাদুরস্ত শব্দ নিয়ে কাব্যভাষা নির্মাণ করা সঙ্গত কী না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায় যদিও, তবে এ ধরনের ভাষারীতি দেখিয়ে দেয় কোথায় তার উৎস, কোন সামাজিক অভিজ্ঞতার অনুরণন থেকে প্রতিফলিত হয়ে আসছে এই বয়নের পরিভাষা। এ ধরনের বোধ ও তাৎপর্য বিবেচ্য হয়ে ওঠে। শব্দের স্থপতিরূপে কবি হয়তবা সঙ্কেত হিসেবে এরূপ এক প্রচ্ছন্ন সীমারেখা পাঠকের কাছে মেলে ধরেন। নব্বই দশকের কবি আমিনুল ইসলাম। পেশাগতভাবে প্রশাসনের আমলাতান্ত্রিক বন্ধনে শৃঙ্খলিত থাকলেও সমকাল ও সৌন্দর্যের ভাববস্তুর সঙ্গে এক নির্বিকার সহাবস্থান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যতি টানেননি। কবিতার নিটোল সীমান্তের ভেতর যুযুধান থেকেছেন আপাত সরল এক ভাবব্যঞ্জনা নিয়ে। এটি অবশ্যই কবি মনের এক চেতন-অবচেতন মেশানো যে এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার ফল তা মানতেই হয়। আত্মকথনের ভঙ্গিতে যখন কবি ‘মহাবিশ্বকে’কে উপলব্ধিতে এনে স্বরচিত পঙ্ক্তির মাধ্যমে শুধান, ‘তোমার জন্য বসে থাকি অজুহাতের স্টেশনে-ইচ্ছাকৃত ফেল করে/ আহ্নিক গতির ট্রেন! তুমি আসতে চেয়েছ অথবা চাও-এর বেশি কোনো/ কিছুই তো ঘটেনি।’ (মহাবিশ্ব) এই আহ্বান, এই সম্বোধন মহাবিশ্বের কাছে হলেও ব্র্যাকেটে লিখেছেন, পৃথিবীরঙের এক মানবীকে। কথিত কবিতাটি পাঠে সূচনায় কবি জীবনানন্দ দাশের ‘মহাপৃথিবীর’ কথা স্মরণে আবর্তিত হয়। কিন্তু জীবনানন্দ যখন এ কবিতাটি লিখেছিলেন, তখন নারী প্রসঙ্গে জীবনানন্দের মন আর সাড়া দিচ্ছে না। সমালোচকের মতে নারী ক্রমশ তাঁর কাছে রক্তমাংস থেকে প্রকৃতির ভেতর রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু কবি আমিনুল ইসলামের এ কবিতাটিতে মহাবিশ্বের মতো সুদূর, ধূসর ও ঝাঁপসা প্রকৃতির ভেতর বাস্তবতার রূপসী নারীর অবস্থান ভিন্ন ব্যঞ্জনা আনতে পেরেছে। এ কবিতাটির শেষ দুটি পঙ্ক্তি মহাবিশ্বের সেই মানুষী রূপটি কখনোবা ধরা পড়ে, কখনো তা কুহকের আড়ালে হেঁয়ালি রূপে প্রতীয়মান হয়। ‘হে পৃথিবী, হে আমার ডাঙ্গা ও জলের/সবখানি ভালবাসা, আমাকে ধরে রাখো- বাড়িয়ে দিয়ে তোমার অভিকর্ষীয় টান ! ’ আশৈশব ব্যক্তিসম্পর্কিত স্মৃতির বৈভব, জীবনযাপনের ঘাতপ্রতিঘাত, চারপাশের নর-নারীর সংসর্গ, অপ্রাপ্তিবোধজনিত বিষণ্ণতা, অবসাদ, গ্লানি, রিরংসা ইত্যাদি বহুস্তরীয় অভিজ্ঞতা যেন মিশে আছে তাঁর প্রেমের কবিতায়। বা যাপিত জীবনের অনুসন্ধানই হয়ে উঠে তাঁর প্রেমের কবিতার মূল লক্ষ্য। প্রতিটি কবিতার মাঝেই জীবনের সঙ্গে প্রেমের এই গুপ্ত সুড়ঙ্গ সম্পর্কটি অচিহ্নিতভাবে মিশে থাকে। কখনো তা স্পষ্ট হয়, কখনোবা স্বতন্ত্রভাবে থাকে। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় পেশাজীবীতার প্রতি রুষ্ট ও কূপিত মনোভাব ও নিস্তরঙ্গতার অনুভূত হয় নানা অনুষ্ঠানের মাঝে। কবিতায় কবির আবেগ এক ধরনের সন্দীপনী ভাব সৃষ্টি করে যা সম্প্রসারিত হয় সৌন্দর্যের অভিদর্শনে, এই সৌন্দর্যই শেষাবধি রূপান্তরিত হয় প্রেমের প্লবতায়। কবি আমিনুল ইসলামের ব্যবহুত উপমা, চিত্রকল্প এবং রূপকতা প্রেমের ব্যাপ্ততা পায়। বস্তুভাবনায় উপমা-আঙ্গিকে প্রণয়ের এই কারুময়তা লক্ষ্য করি বেশ কিছু কবিতায়। উদাহরণ থেকে লক্ষ্য করি : ১. অতঃপর স্নেনশেষে সে জড়িয়ে নেবে গায়ে/দুগ্ধ-ফেনায় ধোওয়া-/মেঘের চুমকি আঁকা প্রভাতী রঙের জামা-/এই জামা পরেছিলেন আনারকলি/কোনো এক মুঘল জোছনায়। (ছবি) ২. বেডরুমে-করিডরে, ডাইনিঙে ড্রয়িংরুমে/সর্বত্র মউ মউ করছে তোমার অনুপস্থিতি/...নিরঙ্কুশ মালি হয়ে বসে আছি তোমার অনুপস্থিতির বাগানে। (অনুপস্থিতির বাগানে।) ৩. দ্যাখো-নীলসাদা প্রচ্ছদে ভাঁজ হয়ে শুয়ে আছে সুন্দর/...যদ্যপি পাহারা শাসিত উঠোন/তথাপি সুরভিত মুগ্ধতায় মাতোয়ারা জগতের সকল পাহারা। (শুয়ে আছে সুন্দর) ৪.আলোকায়নের ধোঁয়া লেগে নষ্ট হয়ে গেছে ভালবাসার/বাম চোখ। (ভালবেসে কি হবে?) ৫. আমি মেঘভাঙা/কাজল এনে পরিয়ে দিই আমার স্বপ্নের চোখে, কপালের ওপরে বাম কোনে/বসিয়ে দিই কালোটিপ-নজর না লাগে কোন জ্বিন-ভূত-ডাইনির। (আক্রান্ত বাগান) ৬. না ছুঁয়ে... ভালবাসাবাসি অতীতের/আধুলী হয়ে ঠাঁই নিয়েছে কিউপিডের কয়েন মিউজিয়ামে-যেখানে/আবক্ষ মূর্তিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে-অলটাইম সুপারস্টার্স অব লাভ- /লাইলী ও মজনু, শিরি ও ফরহাদ, চ-ীদাস ও রজকিনী এবং/ রোমিও জুলিয়েট। (কিউপিডের মিউজিয়াম এবং) ৭. দ্যাখো-বয়েসী পাইনের আন্তঃমহাদেশীয় চোখে বেগুনি/হলুদ বিস্ময় জাগিয়ে কেমন ছোট হয়ে আসে পৃথিবী ! (কুয়ায়ন) ৮. জলসাঘরের সুর নিয়ে বাগান মাতিয়ে তোলে রাতের বাতাস!/ অথচ দ্যাখো- তোমার ঠোঁটের জোছনা মেখে/ চাঁদের রাত হয়ে ওঠে আমার আধুনিক কবিতার চিত্রকল্প। (ভালোবাসা নিতে পারি) ৯. তোমার সঙ্গে কথা বললেই ক্ষুধা লাগে আমার/...তোমার হাসি শুনলেই সদ্য খেয়ে ওঠা শরীরেও/ ক্ষুধার প্রতিক্রিয়া হয়/তোমার হাসি যখন তখন এ্যাপিটাইজার হয়ে ওঠে কেন? (ক্ষুধা) ১০. আমার এই ভালোবাসা কোথাও এক কোনে তুলে রাখো জোয়ানা/ যেভাবে অভিজ্ঞ উকিল তাকে তুলে রাখে/গুরুত্বপূর্ণ কোনো রায়ের রেফারেন্স;/যেভাবে বিজ্ঞানী তুলে রাখে তার/ইমপিরিক্যাল ভাবনার অলটারনেটিভ হাইপোথেসিস;/ যেভাবে গোপন ফাইল লুকিয়ে রাখে পাসওয়ার্ড-যুক্ত হার্ড ডিক্স।/ যেভাবে টপ ট্রামকার্ড বাঁচিয়ে রাখে অভিজ্ঞ জুয়াড়ি; (আমার ভালোবাসা তোমার সেভিংস এ্যাকাউন্ট) উপলব্ধিতে প্রেমই হয়ে উঠেছে ইঙ্গিতময়। সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতাকে আড়াল করার প্রেক্ষিতরূপে ইন্দ্রিয়ানুভূতিতই বিলক্ষণ ভাবাবেগকে উদ্বেল করে তোলে। কবির সব কবিতাগুলোই যেন হয়ে ওঠে প্রেমবিরোচিত দেহ ও মনের তমোরস। অথচ তিনি লিখেছেন আত্মকথনের ভঙ্গিতে সমাজ বা রাষ্ট্রের বৈরিতার কথা। লিখেছেন সংশয়ের কথা। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা। উদ্বেগ, নৈরাশ্য ও অপ্রাপ্তির কথা। লিখতে চাইছেন অতৃপ্তির কবিতা। লিখতে চাইছেন বিপন্নতার কবিতা; হৃদয়হীন উদাসীনতা ও নির্মমতার কবিতা। অথচ মূর্ত হয়ে ওঠে প্রেমের কোমল উত্তাপ। তাঁর অন্তঃস্থিত বিষন্নতার অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে প্রেমের কোলাজ। আত্মস্বীকৃত এক ভূমিকায় কবি আমিনুল ইসলামের এরূপ উপলব্ধির কথা জানা যায়। ‘আমার নিজের ক্ষুদ্র কাব্যসাধনার পেছনেও প্রেমানুভূতি সবচেয়ে প্রবলভাবে ক্রিয়াশীল বলে মাঝে মাঝে আমার মনে হয়।... আমি প্রেমের ভেতর দিয়ে জীবন ও জগতকে দেখার চেষ্টা করে আসছি ; তবে রোমান্টিকতার চোখ ও মন নিয়ে নয়।’ প্রেমের দিব্যদৃষ্টি দিয়ে কবি বুঝে নিতে চান সমকালীন সমাজ সভ্যতার হৃদয়হীন অস্তিত্বের বীভৎসতাকে। কবি তাঁর ভাবনামন্ডলের যুক্তিক্রমকে, চিন্তার সূত্রকে, দ্বান্দ্বিক আত্মসঙ্কটকে হৃদয়ের ঔদার্য দিয়ে অনুভব করতে চেয়েছেন। আর এভাবেই অস্তিত্বের সত্যানুসন্ধানে জেগে ওঠে প্রেম। কবি আমিনুল ইসলামের কবিতায় বারবার উচ্চারিত হয় প্রেম। নারী ও প্রকৃতির অনুষঙ্গে তা উঠে আসে বার বার। ইন্দ্রিয়াসক্তি গড়ে তোলে কাব্যের প্রাণের প্রতিমা। কবিতায় অনুভূতি ও সৌন্দর্যের আত্তীকরণ ঘটে এই প্রক্রিয়ায়; ‘মহাশূন্যের দেয়ালে শাদাকালো/বর্ণমালায় রচিত প্রেমের যে মহাকাব্য-, তার কোনো উপসংহার নেই।/অদ্ভুত আনন্দের আগুন বুকে নিয়ে এক রাতজাগা কবি লেখালেখি-কাঁটাছেড়া-লেখালেখি...।’ তবে বলে নেয়া ভাল যে, কবিতার সৃষ্টিরহস্য সর্বদা বিশ্লেষণের অতীত। আমরা কবির কথিত বক্তব্য, বা কবিতার পঙ্ক্তি থেকে যা অনুমিত হওয়ার কথা তা থেকেই এসব বিবৃতি শানাচ্ছি মাত্র। কবির জীবনের ঘটনাবলীর মধ্য থেকে আহৃত চাবি দিয়ে খোলার চেষ্টা পাচ্ছি। সেই স্পর্শাতীত কবিতাচিন্তন পদ্ধতিকে। প্রয়াস পাচ্ছি কবিতাশ্রিত ঘটনার এলোমেলো পুনরাবৃত্তিকে একটি উপসংহারের মাঝে নজরদারিতে রাখা সঙ্গত নয় জেনেও এ কাজ করার পেছনে কারণ হলো, কবির অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধিকে, আবেগ ও প্রণয় বেদনার বাস্তবতাকে, সৌন্দর্য ও আনন্দকে বুঝতে পারার উপভোগ্যতা সৃষ্টির। তথাপি যবনিকতা কবি আমিনুল ইসলামের একটি কবিতার চরণকে অনুকরণ করে বলতে হয় ‘.. তবে প্রভাত সূর্যের/দোহাই,- তোমার জিহবা নিও হাঁটুর ওপরে/ওই সংরক্ষিত সৌন্দর্য শুধু কবির জন্য প্রকল্পিত।’ খাঁটি কবিতা হলো, বিভিন্ন সত্তার রসায়নজাত এক নিঃসঙ্গ প্রক্রিয়া। হয়ে ওঠা ছাড়া যার আর কোন বিকল্প নেই। অজস্র অকবিতার ভিড়ে প্রকৃত খাঁটি কবিতা লাজুক চোখে কারও কাছে কোন প্রত্যাশা না রেখে, প্রাচীন চিত্রের মতো শুধু প্রতীক্ষা করে। মুখে তার তখনও লেগে থাকে এক চিরস্থায়ী মৃদু হাসির শান্ত বেদনা। চলমান এই সমাজব্যবস্থার মধ্যে মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে সবকিছুই যখন পণ্য করে তোলার চতুর শঠতার ঠিকাদারি চলছে, কর্পোরেট বিশ্বের মিডিয়ার সর্বগ্রাসী প্রসার আর প্রচারে যখন ব্যক্তির মেটামরফোসিস ঘটে চলেছে- তখন এমন এক সময়ে, সামাজিক প্রথার এই অনিবার্য দুর্দশায় একজন কবি রচনা করে চলেছেন ভালবাসার কবিতা, ‘প্রেমের এক মহাকাব্য যার কোন উপসংহার নেই।’ চূড়ান্ত ও অনিবার্য এ সঙ্কটের সময়ে যখন মানুষের বিশ্বাস ও আস্থার সরল আশ্রয়গুলো ভেঙ্গে পড়ে তখন সে কোথা থেকে খুঁজে পাবে জীবনযাপনের শক্তি? এই কুশ্রী স্রোতের চোরাটান হতে কে যোগাবে বাঁচার প্রেরণা? এ যেন সেই কথিত আরেকটি কবিতারই বিস্মৃতিপ্রায় পঙ্ক্তির মতো, ‘ থিংস ফল এ্যাপার্ট, ইট ক্যান নট হোল্ড দ্য সেন্টার।’ ভেঙ্গে যাচ্ছে কেন্দ্রচ্যুত সবকিছু যেন। ছড়িয়ে পড়ছে ছত্রাকারে। কবি আমিনুল ইসলাম মানবিক এসব ইমোশনাল প্যাথোসের প্রতিমুখে অভীষ্ট লাভের উপশম হিসেবে এনেছেন প্রেমের মনোধর্মিতা। উপলব্ধির উপযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি না থাকলে এ ধরনের আঙ্গিক ক্লিশে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু বৈচিত্র্যসন্ধানী ভাবনা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতির মননশীল উপাদান দিয়ে তিনি গড়েছেন কবিতার কাঠামো। সামাজিক বাস্তবতা ও মনস্তাত্ত্বিক সংশয়ের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করে মমতা দিয়ে গেঁথেছেন ভালবাসার সব পঙ্ক্তির সৌধ। চারপাশের সমাজ ও জীবনের মিথ্যাচারের মাঝে তিনি শব্দকেই ছুঁতে চেয়েছেন। শব্দই তাঁর অবলম্বন। কবিতার শব্দ দিয়েই উপশম ঘটাতে হবে বিরূপ বিশ্বের কুশ্রীতাকে। এ সমাজে মানুষের প্রকৃত মর্যাদার কথাই তো ভাবেন একজন কবি। কোন দ্রুত সহজলভ্য প্রাপ্তির আশায় নিজেকে শামিল না করে তিনি মুক্তির উপায় হিসেবে ভালবাসার ভাবাদর্শকেই মূল্যবোধ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর ব্যবহৃত শব্দ, নিসর্গ, পরিভাষা, তথ্যবিশ্বের উপাদান, লোকাচার, সম্পর্ক সব দিয়েই তৈরি হয় যে কবিতা- তার নতুন মান ও ব্যবহারোপযোগিতা নিয়ে তখন আমাদের যথেষ্ট কৌতূহলী করে তোলে। তখন তার মমতামাখা কবিতার মেদুর ভাষার মাঝে সঞ্চারিত হয় এক অনিবার্য প্রেমিকের মুখাবয়ব। যা পাঠকের কাছে মর্যাদার দাবি করে। তাঁর কবিতা হলো সেই সার্বভৌম প্রেমের হৃদয়ছবি।
×