ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ই-পুলিশ

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৭ জানুয়ারি ২০১৯

 ই-পুলিশ

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন শেখ হাসিনা এবং তার নেতৃত্বাধীন চৌদ্দদলীয় জোট। ডিজিটাল নিয়ে অনেকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও করেছে। সেসব তোয়াক্কা না করে সরকার দেশকে এনালগ পদ্ধতি হতে ক্রমান্বয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে উন্নীতকরণের কাজ শুরু করে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশ সাধনের মাধ্যমে গত দশ বছরে দেশ অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়েছে। ব্যবসাবাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতির বিস্তার ঘটেছে। ইন্টারনেটভিত্তিক কার্যক্রম বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের গতি যেমন বাড়িয়েছে তেমনি জনগণের কাছে পৌঁছে গেছে সুযোগ-সুবিধাও। টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনার সরকার ‘ই-পুলিশ’ পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে। পুলিশ বিভাগে আধুনিকীকরণের কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। তারই সবিশেষ অংশ হিসেবে নতুন বছরে নতুন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, পুলিশের আধুনিকায়নে আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মেলাতে এই কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। আর তাতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ই-সেবা সংক্রান্ত ক্ষেত্র কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি যেমন ঘটবে তেমনি সেবার মানও বাড়বে। উপকৃত হবে দেশের জনগণ। ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই পদ্ধতি চালুর যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে তা আগামী জুন মাসে শুরু হবে। পুলিশের জন্য বর্তমানে বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ হচ্ছে সাইবার অপরাধ। তা মোকাবেলায় পুলিশ, কমিউনিটি পুলিশ, অপরাধের ধরন পর্যালোচনা, সিসিটিভির নজরদারি প্রভৃতি সেবা দানের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত করার কাজটি সুচারুরূপে করা যাবে। একইসঙ্গে ডাটা সংরক্ষণে অধিকতর দক্ষতা বাড়বে এবং তা নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যবহার করা যাবে। দেশের পুলিশ একটি ক্রমবর্ধমান মোবাইল, অনলাইন ও সাইবার পরিবেশে কাজ করছে। ক্রমবর্ধমান অপরাধের তথ্য, নিরাপদ পরিচালনা ও সংরক্ষণ করা পুলিশের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এমনিতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বর্তমান ডাটা সেন্টার শুধুমাত্র সাধারণ স্টোরেজ পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাই পুলিশের কাজে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান ডাটা কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা ও ডাটা নিরাপত্তা বাড়ানো সঙ্গত হয়ে পড়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতির বিকাশ ও বিস্তারের পর দেশে অপরাধের ধরনও পাল্টেছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের যুগ আর নেই। দুর্ধর্ষ অপরাধীদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। তবে আধিপত্য বিস্তারে অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার হ্রাস পায়নি। অপরাধের ধরন বদলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে পুলিশ বাহিনী। কাজের ধরনধারণেও এসেছে পরিবর্তন। ডিজিটাল অপরাধ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা দমনে প্রযুক্তিগত দক্ষ পুলিশও গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব নিরোধে সাইবার অপরাধ কেন্দ্র গঠনের উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি ই-পুলিশ ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ সম্ভব হবে। পুলিশে ইতোমধ্যে যুক্ত হওয়া অনলাইনভিত্তিক সেবামূলক কার্যক্রম জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে। ৯৯৯-এ ফোন করে যে কোন তথ্য ও আইনী সহায়তা নেয়া যাচ্ছে। পুলিশকে যত আধুনিকায়ন করা যাবে ততই উন্নত হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। তেমনি ‘জনগণের বন্ধু’ হিসেবে পুলিশের ভাবমূর্তি আরও উন্নত হবে। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যাত্রালগ্নে পুলিশ বাহিনীর উন্নয়ন ও অগ্রগতি হবে সাযুজ্যপূর্ণ। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের পুলিশী ব্যবস্থা হোক সময় ও যুগোপযোগী, দেশবাসী তা-ই চায়।
×