ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেকেই

ভুয়া ডিগ্রী ব্যবহার করে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

 ভুয়া ডিগ্রী ব্যবহার করে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা

নিখিল মানখিন ॥ অসাধু চিকিৎসকদের ভুয়া ডিগ্রী ব্যবহার বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেই। বছরে দু-একটি অভিযান চালিয়েই সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব শেষ। ভুয়া চিকিৎসকের পাশাপাশি অনেক প্রকৃত চিকিৎসকও ভুয়া ডিগ্রী ব্যবহার করে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছেন বলে খোদ বিএমডিসির নেতৃবৃন্দ অভিযোগ তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, বারবার সতর্ক করে দেয়ার পরও এ সমস্যা দূর হচ্ছে না। স্বীকৃত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী না থাকা সত্তে¡ও তাদের কেউ কেউ নিজেকে ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। যা বিএমডিসি আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশন প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক’ লেখা দেখে চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রত্যাশিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। আবার ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস পাস না করেও অনেকে তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করে যাচ্ছেন। দেশের সর্বত্র চলছে বিএমডিসির সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি অমান্য করার প্রতিযোগিতা। এতে একদিকে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা হয়ে পড়ছে প্রশ্নবিদ্ধ, অন্যদিকে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেক রোগী। একের পর এক সতর্কীকরণ বার্তা দিয়েও ভুয়া ডিগ্রী ব্যবহার বন্ধ করতে পারছে না বাংলাদেশ মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। বিএমডিসির কর্মকর্তারা জানান, স্বীকৃত ডিগ্রীপ্রাপ্ত অনেকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিবন্ধন ছাড়া চিকিৎসাকার্য পরিচালনা করছেন। কোন কোন নিবন্ধিত চিকিৎসক/ দন্ত চিকিৎসক তাদের সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশান প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে, পিজিটি, এফসিপিএস (পার্ট-১,২), এমডি (ইন কোর্স, পার্ট-১,২, থিসিস পর্ব), এমএস (পার্ট-১,২, থিসিস পর্ব, সিসি) ইত্যাদি ব্যবহার করছেন, যা কোন স্বীকৃত অতিরিক্ত চিকিৎসা যোগ্যতা নয়। তাছাড়া স্বীকৃত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী না থাকা সত্তে¡ও কেউ কেউ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সার্জারি বিশেষজ্ঞ, গাইনি বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি ব্যবহার করছেন, যা বিএমডিসি আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আবার কোন কোন চিকিৎসক তাদের ব্যবস্থাপত্রে এমন কিছু ওষুধ লিখছেন, যা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ। ২২(১) ধারা অনুযায়ী নিবন্ধন ব্যতীত এলোপ্যাথি চিকিৎসা নিষিদ্ধ। অন্য কোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীনে নিবন্ধন ব্যতীত কোন মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এলোপ্যাথি চিকিৎসা করতে অথবা নিজেকে মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ক্ষেত্রমতে, ডেন্টাল চিকিৎসক বলে পরিচয় প্রদান করতে পারবেন না। কোন ব্যক্তি এই ধারা লঙ্ঘন করলে হবে অপরাধ এবং তার জন্য তিনি ৩ বছর কারাদন্ড অথবা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবেন। ২৯(১) ধারা অনুযায়ী ভুয়া পদবি, ইত্যাদি ব্যবহার নিষিদ্ধ। এই আইনের অধীন নিবন্ধনকৃত কোন মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এমন কোন নাম, পদবি, বিবরণ বা প্রতীক এমনভাবে ব্যবহার বা প্রকাশ করবেন না, যার ফলে তার কোন অতিরিক্ত পেশাগত যোগ্যতা আছে মর্মে কেউ মনে করতে পারেন। যদি না তা কোন স্বীকৃত মেডিক্যাল চিকিৎসা-শিক্ষা যোগ্যতা বা স্বীকৃত ডেন্টাল চিকিৎসা শিক্ষা যোগ্যতা হয়ে থাকে। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রীপ্রাপ্তরা ব্যতীত অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। কোন ব্যক্তি এই উপধারা লঙ্ঘন করলে উক্ত লঙ্ঘন হবে একটি অপরাধ এবং তার জন্য তিনি ৩ বছর কারাদন্ড বা ১ লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং উক্ত অপরাধ অব্যাহত থাকলে প্রত্যেকবার তার পুনরাবৃত্তির জন্য অন্যূন ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডের অতিরিক্ত হিসেবে দন্ডনীয় হবেন। এদিকে দেশের সর্বত্র চলছে বিএমডিসি আইনের লঙ্ঘন। স্বীকৃত চিকিৎসা থেকে ডাক্তার হয়েও অনেকে ভুয়া ডিগ্রী ব্যবহার করে থাকেন। নামের আগে ভুয়া ডিগ্রী লাগিয়ে রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এ ধরনের চিকিৎসকদের মূল উদ্দেশ্য। রোগীদের ভাল-মন্দ বিবেচনায় রাখেন না তারা। মহান পেশা চিকিৎসাসেবা তাদের কাছে হয়ে উঠে ‘রোগী মেরে টাকা উপার্জনের সেন্টার’। স্বীকৃত চিকিৎসকদের পাশাপাশি অস্বীকৃত কোয়াক চিকিৎসকদের সংখ্যাও কম নয়। তারা চিকিৎসা সেক্টরের জন্য বেশ হুমকিস্বরূপ। দেশে রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ ‘কোয়াক চিকিৎসক’ । এ ধরনের চিকিৎসকদের থাকে না কোন প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী ও অভিজ্ঞতা। কোন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে তারা কিছু চিকিৎসা জ্ঞান অর্জন করে। সেই সীমিত জ্ঞান দিয়ে তারা নিজেদের মতো করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যান। এতে অনেক রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সরকারী অনুমোদন না থাকলেও এ ধরনের চিকিৎসকরা দেশের আনাচে কানাচে চিকিৎসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের চিকিৎসকেরা প্রাইভেট মেডিক্যাল প্র্যাক্টিশনার্সের মধ্যেও পড়ে না বলে জানিয়েছেন এসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা: মো: জামাল উদ্দিন চৌধুরী।
×