ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সৈয়দপুরে ঘাম আর পামওয়েল মিশ্রণে ভাজা হচ্ছে লাচ্ছা

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৩০ মে ২০১৮

সৈয়দপুরে ঘাম আর পামওয়েল মিশ্রণে ভাজা হচ্ছে লাচ্ছা

সংবাদদাতা, সৈয়দপুর, নীলফামারী, ২৯ মে ॥ পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সৈয়দপুরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্ষতিকারক উপকরণ দিয়ে বৈধ ও অনুমোদনহীন প্রায় অর্ধ-শতাধিক উৎপাদনকারীর মধ্যে লাচ্ছা সেমাই তৈরির মহোৎসব চলছে। এতে বিশাল জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। সূত্র মতে, সেমাই তৈরি ঘরের আলোÑবাতাস প্রবেশসহ উন্নত ব্যবস্থাপনা, কারিগরদের এ্যাপ্রন ও বিশেষ ধরনের হাতমোজা পরা। এরপর উন্নত ময়দা, ভেজিটেবল ফ্যাট ওয়েল, ডিম, আসল ঘি, ডালডা দ্বারা লাচ্ছা সেমাই তৈরি করতে হবে। থাকতে হবে আলো বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা। তবে মৌসুমি ও বৈধ ব্যবসায়ীর কেহই নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। তারা যেন-তেন ভাবে চিপস তৈরির ব্যবস্থাপনায় চলছে সেমাই তৈরি। অভিযোগ রয়েছে, সাবান তৈরির এ্যানিমেল ফ্যাট, নিম্নমানের ময়দা, পামওয়েল এবং ঘি এর কৃত্রিম সুগন্ধি ছিটিয়ে এসব লাচ্ছা ভাজার পর নামি-দামি কোম্পানির নকল মোড়কে আবার খোলা বাজারে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। গত শনিবার শহরের বিভিন্ন এলাকায় মজা, সোনালী, শাহী, বাধন, ভাইÑভাই, রুচিতা, গাউসিয়া, মদিনাসহ অনুমোদনকৃত সেমাই তৈরির কারখানাগুলো ঘুরে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। সেমাই তৈরি ঘরের কাঁচা মেঝে। অর্ধ-নগ্ন শরীরে কারিগর ও শ্রমিকরা কাজ করছে। ঘরের ভেতরে চুলার তাপ ও প্রচ- গরম। আলো বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা নেই। মেঝেতে ছড়ানো পামওয়েলের ড্রামের ওপরই নিম্নমানের ময়দায় সেমাইর খামির করা হচ্ছে। অনেকে রুটি তৈরির ট্রেতে শানছে ময়দা। এক্ষেত্রে মেশিন, হাত ও পা’ এর ব্যবহার দেখা গেছে। অনুমোদনহীন ভ্রাম্যমাণ কারখানাগুলোর অবস্থা আরও করুন। সেখানে কোন রকম ভাজছে সেমাই। অনেকটা গোয়ালঘরের মতো অবস্থা। শ্রমিকদের শরীরের ঘাম আর তেলে ভাজা হচ্ছে লাচ্চা। পরে এগুলো বাহারি রঙের প্যাকেটে ভরে পাঠানো হচ্ছে বাজারে। সে সকল প্যাকেটে উৎপাদনের তারিখ, কোম্পানির নাম, মেয়াদ, উপকরণের নাম নেই। আবার অনেকে প্যাকেট ছাড়াই অনেকটা খোলা অবস্থায় করছে বাজারজাত। নীতিকে অনেকটা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উৎপাদকরা পাইকারি ও খুচরা দরে এ উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও রংপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করছে। এতে বিশাল জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন। জানা যায়, এ উপজেলায় রয়েছে ১৪টি লাচ্ছা তৈরির কারখানা। আর ঈদ মৌসুমকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কোন অনুমোদন ছাড়াই যত্রতত্রভাবে সেমাই তৈরি করছেন। তবে প্রকৃত মালিকরা এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। সৈয়দপুর শহরের ব্যবসায়ী শাহিদ জানান, আমাদের খাদ্যদ্রব্য তৈরির সকল দফতরের অনুমোদন আছে। এছাড়া আনাচে-কানাচে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের সেমাই তৈরি করছে। যার দায় আমাদের ওপর পড়ছে। বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট এ্যান্ড কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির নীলফামারী জেলা শাখার সাবেক সভাপতি আলহাজ জোবায়ের আলম বলেন, অবৈধ মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কারণে বিক্রি কমে গেছে। পাশাপাশি সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে সৈয়দপুরের সকল বৈধ ব্যবসায়ী অভিযান পরিচালনাসহ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন। সৈয়দপুর উপজেলার স্যানিটারি পরিদর্শক আলতাফ হোসেন জানান, পচা ডিম, এ্যানিমেল ফ্যাট এবং কৃত্রিম ঘি সুগন্ধি মিশ্রিত ভেজাল লাচ্ছা সেমাই তৈরি যাতে না হয় কারখানাগুলোতে নজরদারি রাখা হয়েছে।
×