ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লার ক্যাপ্টেন শহীদুল্লাহকে চিকিৎসা করানোর নির্দেশ

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ রাজশাহীর টিপুর বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ গঠনের দিন ২৯ মে নির্ধারণ

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৩০ মার্চ ২০১৮

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥  রাজশাহীর টিপুর বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ গঠনের দিন ২৯ মে নির্ধারণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামিনে থাকা কুমিল্লার ক্যাপ্টেন মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহ (৭৫) অসুস্থ। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল অথবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা করাতে এবং প্রতিমাসে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১ জুলাই। অন্যদিকে প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজশাহীর আব্দুস সাত্তার টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিলের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ মে। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল, আবুল কালাম, সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। আসামিপক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান, মাসুদ রানা প্রমুখ। গত ৩১ অক্টোবর ক্যাপ্টেন মোঃ শহীদুল্লাহ বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেন প্রসিকিউটর আবুল কালাম। আসামির বিরুদ্ধে যে তিনটি অভিযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার মুমূর্ষু হওয়া সত্ত্বেও আসামি ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে স্ট্রেচারে করে আদালতে উপস্থিত করায় এক প্রসিকিউটরের ওপর ক্ষোভ জানিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউটর এই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের অনুমতি চান। তবে ট্রাইব্যুনাল জানতে চান শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণে যিনি কথাই বলতে পারছে না, তার বিরুদ্ধে এ অবস্থায় কী করে অভিযোগ গঠন করা সম্ভব? আসামিকে উপস্থিত করার সময় কোন সিনিয়র প্রসিকিউটর উপস্থিত না থাকায় তাদের তৎক্ষণাৎ ডেকে পাঠায় ট্রাইব্যুনাল। পরে ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে জামিনে থাকা এ আসামিকে চিকিৎসা করানো ও তার শারীরিক-মানসিক অবস্থার মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর আবুল কালাম। শুনানির শুরুতে স্ট্রেচারে করে আসামিকে এজলাসে নিয়ে আসা হয়। পরে বিচারপতিগণ আসামির শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার বিষয়ে সিভিল সার্জনের একটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন। তখন প্রসিকিউটর আবুল কালামের কাছে ট্রাইব্যুনাল জানতে চান, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণে যিনি কথা বলতে পারছেন না, তার বিরুদ্ধে এ অবস্থায় কী অভিযোগ গঠন করা সম্ভব? এ সময় প্রসিকিউটর কালাম এ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের অনুরোধ জানালে ট্রাইব্যুনাল ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ট্রাইব্যুনাল বলে, ‘অসুস্থতার কারণে আসামি কথা বলতে পারছেন না। তার আরও চিকিৎসা প্রয়োজন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে হলে তাকে তা শুনতে হবে এবং তিনি দোষী বা নির্দোষ সে বিষয়ে উত্তর দিতে হবে। এ অবস্থায় কীভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে বলছেন? আপনার সিনিয়র প্রসিকিউটররা কোথায়? যান, সব সিনিয়র প্রসিকিউটরকে এখনই ট্রাইব্যুনালে ডেকে নিয়ে আসুন। টিভিতে কেক কাটতে পারেন, এখানে আসতে পারেন না?’ এরপর প্রসিকিউটর কালাম সিনিয়র প্রসিকিউটরদের ডাকতে এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন। এ সময় আসামির ছেলে আশরাফ ফারুকের কাছে তার বাবার ও তাদের নিকট আত্মীয়দের অসুস্থতার ইতিহাস জানতে চান ট্রাইব্যুনাল। অন্য মামলায় উপস্থিত প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদলকে লক্ষ্য করে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আসামি কথা বলতে পারেন না, অথচ কালাম সাহেব (প্রসিকিউটর) চার্জ ফ্রেম (অভিযোগ গঠন) করতে বলছেন কেন? নিয়ম কী? তাকে স্ট্রেচারে শুইয়ে আনা হয়েছে, বসা রোগী হলেও না হয় বুঝতাম।’ ট্রাইব্যুনালের বক্তব্যের সঙ্গে প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান সহমত পোষণ করেন। তখন ট্রাইব্যুনাল আবারও বলেন, ‘একজন মানুষ (আসামি) কথা বলতে পারেন না, শুনতে পারেন না, শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ নন; অথচ আমরা লিখে দেব তার বিরুদ্ধে চার্জ ফ্রেম করা হলো। এটা তো হবে না।’ এ সময় ট্রাইব্যুনালের এজলাসে প্রসিকিউটর কালাম চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুকে নিয়ে প্রবেশ করেন। তখন ট্রাইব্যুনাল আসামির বিরুদ্ধে চার্জ ফ্রেমের বিষয়ে জানতে চাইলে চীফ প্রসিকিউটর আসামির সুস্থ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার পক্ষে মত দেন। রাজশাহীর টিপু সুলতান ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজশাহীর আব্দুস সাত্তার টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিলের জন্য ২৯ মে দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ প্রদান করেছেন। প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে তিন মাসের সময় চেয়েছিলাম। সময় চাওয়ার কারণে ট্রাইব্যুনাল উক্ত দিন নির্ধারণ করেছেন। এর আগে ২৭ মার্চ টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ জনকে হত্যা, দু’জনকে আটকে রেখে নির্যাতন, ১২ থেকে ১৩ বাড়ির মালামাল লুট করে আগুন দেয়ার অভিযোগ আনা হয় টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে। গত বছরের ২ মে এ মামলার তদন্ত শুরু হয়। মামলায় ২৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, আসামি টিপু সুলতান একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সঙ্গে জড়িত ছিল। পরবর্তীতে সে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তবে ১৯৮৪ সালের পর থেকে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিল না টিপু সলতান।
×