ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকৃতি ও জীবন ॥ সুর বেজেছে রঙে রঙে

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ৯ মার্চ ২০১৮

প্রকৃতি ও জীবন ॥ সুর বেজেছে রঙে রঙে

সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এক ঝাঁক বন্ধুর আঁকা চিত্র প্রদর্শনী। ‘বন্ধু’ শিরোনামে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার ইএমকে সেন্টারে। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে এই প্রদর্শনী। মোট ১২ জন শিল্পী ঐ প্রদর্শনীতে অংশ নেন। এবং অবাক হলেও হতে পারেন, এরা অধিকাংশই নারী ও প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাছের বন্ধু। এবং এরা প্রত্যেকেই চারুকলায় স্নাতক। অনেকে স্নাতকোত্তর। এ প্রদর্শনীতে নানাজনের নানা মাধ্যমের শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। মানব চৈতন্যের গভীরে যে যন্ত্রণাবোধ কেবলি থেকে থেকে নাড়া দেয় তা থেকেই উৎসারিত এ শিল্পকর্মগুলো। এ যেন বন্ধুর জন্যে বন্ধুর আয়োজন। কিংবা এক ঝাঁক বন্ধুর শুধুমাত্র নিজেকে প্রকাশ করার উৎসব। বন্ধু যেমনি নির্দ্বিধায় নিজেকে প্রকাশ করতে পারে নিজের ইচ্ছে মতো, এখানেও তাই। এরা প্রত্যেকেই নিজেদের প্রকাশ করেছেন, তুলে ধরেছেন নিজেদের স্বাধীন সত্তার মধ্য দিয়ে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে। তারা প্রকাশ করেছেন নিজেদের তাদের নিজ নিজ শিল্পকর্মের সাহায্যে। এসব শিল্পকর্ম ড্রইং, ছাপচিত্র, জলরং তেল রং, এ্যাক্রেলিক এমনি নানা মাধ্যমে অঙ্কিত। এক্ষেত্রে প্রত্যেকেই ছিলেন স্বাধীন। যে, যে মাধ্যমে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন সে সেই মাধ্যমেই তার শিল্পকর্ম উপস্থাপন করেছেন। কোন ধরাবাঁধা নিয়ম দিয়ে সীমাবদ্ধ বা আটোসাঁটো চিন্তার গ-িতে বেঁধে ফেলা হয়নি শিল্পীর স্বাধীনতা। আঙ্গিকের বেলায়ও একই কথা খাটে। একেক জনের শিল্পের ধরন আরেকজন থেকে ভিন্ন। এ প্রসঙ্গে প্রদর্শনীর শিল্পীরা জানান, ‘আমাদের বিষয় মূলত প্রকৃতি ও জীবন’। প্রকৃতি ও জীবন তাদের বিষয়বস্তু হলেও এর মোদ্দা কথা হচ্ছে, যাপিত জীবনের দুঃখ হতাশা, নৈরাজ্য, মানুষের অবর্ণনীয় অনিরাপদ জীবনধারা, দেশ ও সমাজের আদর্শহীনতা, নৈতিকতার অবক্ষয়, কূপম-ুকতা, পরশ্রীকাতরতা ও পশ্চাৎপদতা প্রতিমুহূর্তে তাদের কষ্ট দেয়, তাদের মনোপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব কষ্টকে একটু পলকা করে জীবনটাকে একটু সহজ করে নেয়ার ও দেয়ার লক্ষ্য থেকেই তাদের এমনি প্রকাশ চেতনা গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে তাদের সৃষ্টিশীল সত্তাকে। যা বহিঃপ্রকাশ তাদের বিভিন্ন শিল্পকর্ম। অন্যদিকে তারা আবার মনে করেন, শত ব্যথা-বেদনার পরও জীবনের আরও একটি দিক আছে। যা আশা ও আনন্দের। স্বপ্ন ও সুন্দরের। শিল্পীরা মনে করেন, রঙে-রেখায়, সুষমায় অপরূপ বিভায় উদ্ভাসিত অপরূপ এই পৃথিবী। এ প্রসঙ্গে তাদের উপলব্ধি- আমরা কজন স্বপ্নদেখা মানুষ সেদিকে তাকিয়ে এক সঙ্গে জড়ো হয়েছি। তাদের ছবি ভাষায় অপরূপ উদ্ভাসিত যে বাণী তারপরও শেষ অবধি আমরা এ পৃথিবীকে ভালোবেসে যেতে চাই। এ পৃথিবী মানে প্রকৃতি। এ পৃথিবী মানে একখন্ড জীবন। এ পৃথিবী মানে জীবন ও প্রকৃতির এক সমন্বিত রূপ। তাই জীবন ও প্রকৃতিকে ভালবাসার এক সৌম্য স্নিগ্ধ ও উদ্ভাসিত মহিমার প্রকাশ দেখি আমরা তাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে জড়ো হওয়া ১২ জন শিল্পীর মধ্যে রয়েছেনÑ আলফা বেগম, হোসনা বানু চেতনা, জ্যোৎস্না মাহবুবা, মোঃ আলমগীর, নাজলী লায়লা মনুসর, রাহাত নিলোফার, সাঈদা কামাল, সাহিদা আকতার, শামীম আহমেদ, শামীমা শারমিন, শাম্মী ইয়াসমিন, সুরাইয়া চৌধুরী। তাদের প্রত্যেকের শিল্পকর্মেই মূর্ত বিমূর্ত দুটো ধারার প্রকাশ রয়েছে। বিশেষ জীবনের অস্তিত্ব ঘোষণায় প্রত্যেকেই নিজ নিজ শিল্পকর্মে গভীর নান্দনিকতা ও শিল্প রসিকের পরিচয় রেখেছে। প্রকৃতিকে ভালবাসার এক অনন্ত ভুবন নির্মিত হয়েছে এ ১২জন শিল্পীর সম্মিলিত প্রয়াসে। এ আয়োজনের ধারা আরও বেগবান হোক, হোক বিচিত্রগামী। এ আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন, শিল্পী আবদুল বারক্ আলী, নিলুফার মঞ্জুর, সুলতানা কামাল, লুভা নাহিদ চৌধুরী ও এম কে আরেফ।
×