ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাঘ কমছে সুন্দরবনে

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৫ মার্চ ২০১৮

বাঘ কমছে সুন্দরবনে

বাংলাদেশের জাতীয় গর্ব বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমছে আশঙ্কাজনক হারে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতে সুন্দরবনে প্রায় নিয়মিত চোরা শিকারিদের হানা, সিডর-আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খাদ্যাভাবে বাঘের লোকালয়ে হানা, সর্বোপরি গণপিটুনিতে হত্যা করায় কমছে বাঘের সংখ্যা। মনে রাখতে হবে যে, চোরা শিকার ও সুন্দরবনের ওপর জীবন-জীবিকার জন্য নির্ভরশীল লোকজন শুধু বাঘ, চিত্রা হরিণই শিকার করে না, তারা বন ধ্বংস তথা পোড়ানোসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী, সাপখোপ ইত্যাদিও শিকার করে থাকে। এক হিসাবে জানা যায়, গত দেড়যুগে গণপিটুনিতে অন্তত ২০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। আর অন্যবিধ কারণে গত তিন দশকে বাঘ মরেছে অন্তত ৬৭টি। সর্বশেষ জরিপে সোয়া ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় অনুমিত বাঘের সংখ্যা মাত্র ১০৬টিতে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যামেরা ট্র্যাপিং ও খাল জরিপের মাধ্যমে শুরু হয়েছে তৃতীয় বাঘ শুমারি। তবে সুন্দরবনের পশ্চিমবঙ্গীয় অংশে বাঘের সংখ্যা কিছু বেড়েছে বলে জানা গেছে। সেই অংশে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ ব্যবস্থাও ভাল। বন, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট প্যাট্রোলিং একটি উত্তম পন্থা। বনে চুরি-ডাকাতি-দস্যুতা দমনেও এটি সবিশেষ সহায়ক হতে পারে। স্মার্ট প্যাট্রোলিং বলতে বোঝায় স্পেশাল মনিটরিং, এনালাইজিং এ্যান্ড রিপোর্টিং টুলস। এহেন স্মার্ট প্যাট্রোলিং পদ্ধতি বিশ্বের ৩১টি দেশের ১৪০টির বেশি বন সুরক্ষায় প্রচলিত রয়েছে। ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ডের বনাঞ্চল, বন্যপ্রাণীসহ বিভিন্ন জাতীয় উদ্যানের সুরক্ষায় এটি সফলভাবে ব্যবহার হচ্ছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বন পাহারায় প্রবেশ করেছে বাংলাদেশও। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্ট্রেনদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ডলাইফ প্রটেকশন প্রকল্পের আওতায় শুরু হয়েছে বন পাহারার এই কার্যক্রম। ইদানীং নতুন করে শুরু হয়েছে আগুন লাগিয়ে বন উজাড় করে মৎস্য চাষের উৎপাত। সম্প্রতি বনে আগুন লাগানোর অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতারসহ মামলার খবরও আছে। পাশাপাশি সুন্দরবন দুর্গম বিধায় একশ্রেণীর সমাজবিরোধী ও ডাকাতের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সাধারণ ক্ষমার আওতায় ইতোমধ্যে কয়েকটি ডাকাতদল আত্মসমর্পণও করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। এত ডামাডোলে সুন্দরবনের জগদ্বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্বই আজ বিপন্ন হতে চলেছে। সর্বশেষ জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে মাত্র ১০৬টি বাঘ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিপন্ন প্রজাতি বাঘের চোরা শিকারসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও চামড়া বেচাকেনা, চিত্রা হরিণের মাংস ও চামড়া বিক্রি এক রকম ওপেন সিক্রেট। ফলে সুন্দরবন প্রায় নিঃস্ব ও উজাড় হওয়ার পথে। এর জন্য অবশ্য বন রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীও কম দায়ী নয়। সে অবস্থায় সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেও সুন্দরবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না, যদি বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বাংশে সৎ ও আন্তরিক না হন। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত কারণে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন বর্তমানে একটি বহুল আলোচিত বিষয়। বাংলাদেশও রয়েছে এই পরিবর্তনের সমূহ ঝুঁকিতে। সে অবস্থায় সুন্দরবনের সুরক্ষা আরও বেশি কাক্সিক্ষত ও অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে। কেননা, সুন্দরবন এমনিতেই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দেয়াল হয়ে সিডর-আইলার মতো ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করছে দেশকে, অন্যদিকে এটি ক্লোরোফ্লুরোকার্বন বা সিএফসি গ্যাস পরিশোধনেরও অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং, সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলারও অন্যতম হাতিয়ার। এতসব বিবেচনায় স্মার্ট প্যাট্রোলিং সিস্টেমকেই আত্তীকরণ করা যেতে পারে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। তাতে আগামীতে বাঘের সংখ্যা বাড়তেও পারে। উল্লেখ্য, উন্নত ও আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থার আওতায় বর্তমানে ভারতে বাঘ ও সিংহের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
×