ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

তিন নোবেল জয়ীর আহ্বান

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৩ মার্চ ২০১৮

তিন নোবেল জয়ীর আহ্বান

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী তিন নারী ম্যারিয়েড ম্যাগুয়ার, শিরিন এবাদি ও তাওয়াক্কল কারমান রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবি জানিয়েছেন। সোমবার শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই তিন নারী একযোগে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয় ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তা স্মরণকালের ভয়াবহ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তারা এই বর্বরোচিত ঘটনার জন্য সে দেশের এনএলডি নেত্রী আউং সান সুচিকে দায়ী করেন। রোহিঙ্গা সঙ্কট গভীরতর হওয়ার অনেক আগেই সুচিকে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন তারা। মিয়ানমার ইস্যুকে অসম্ভব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন তারা। জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে ফিরেই তারা মিয়ানমারে যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদন করবেন। তাদের উদ্দেশ্য সুচির সঙ্গে সরাসরি কথা বলা। তারা মনে করেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমারে যা ঘটেছে, তা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে বিচার হওয়ার যোগ্য। উল্লেখ্য, শরণার্থী শিবিরে তারা যে ১০০ জন নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁরা সবাই আরাকান আর্মির ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর আগে আরও অনেক নোবেল বিজয়ী বিভিন্ন সময় বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে মিয়ানমারের নেত্রী সুচির কাছে সহমর্মিতা আশা করেছিলেন। তিন নোবেল বিজয়ী নারীর এই বাংলাদেশ সফর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কতটা গুরুত্ব পাচ্ছেÑ সেটাই দেখার বিষয়। তবে, তাদের বাংলাদেশে ছুটে আসার ঘটনাকে মানবতার প্রতি সাড়া বলতে পারি। আমরা আশা করব, এই তিন নারীর বাংলাদেশ সফর রোহিঙ্গাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের এই সহানুভূতি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে এখনও প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা সীমান্তের জিরো লাইনে আটকে আছে। প্রতিদিনই শত শত পরিবার বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। গত কয়েক দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার ও শাস্তি হয়েছে। বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও রুয়ান্ডা গণহত্যার বিচার সাম্প্রতিককালের অন্যতম উদাহরণ। অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের মানবেতর পরিস্থিতিরও পরিবর্তন দরকার। এ লক্ষ্যে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে এসে শুধু সহানুভূতি জানিয়ে, দুঃখ প্রকাশ করে, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সন্তোষজনক সমাধান যে হবে না তা নিশ্চিত। প্রয়োজন কার্যকর আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও পদক্ষেপ। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয়-সেবা দিয়ে শুরু থেকেই মানবিকতার দায়িত্ব পালন করছে। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণেও বাংলাদেশ কাজ করে আসছে। এ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর তরফে যতটা চাপ এসেছে, তা মিয়ানমার সরকারের ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য যথেষ্ট বলে প্রমাণিত হয়নি। অন্যদিকে ভারত, চীন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমারের ওপর সেভাবে চাপ প্রয়োগ করেনি। সম্প্রতি বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার শরণার্থী প্রত্যাবাসন চুক্তি করলেও বাস্তবে পদ্ধতিগতভাবে রোহিঙ্গাবিরোধী রাষ্ট্রীয় নীতি এবং কালাকানুনে কোন মৌলিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং মিয়ারমার সীমান্তে সেনাবাহিনীর টহল বাড়াচ্ছে। জিরো পয়েন্ট থেকে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে। যা শরণার্থী প্রত্যাবাসন চুক্তির অন্তরায়। শরণার্থী সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে এর ফল ভাল হবে না। সবচেয়ে বড় কথা, এতে শুধু যে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন নয়, এই সঙ্কটের প্রভাব আঞ্চলিক নিরাপত্তাকেও বিঘিœত করবে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই তিন নোবেল বিজয়ী নারী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা আরেক নোবেল বিজয়ী আউং সান সুচির প্রতি এমন ভাষায় অনুরোধ করেছেন যা যে কোন বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে আন্দোলিত করবে। আমরা সমস্যার সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
×