ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মসংস্থান বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

কর্মসংস্থান বাড়ছে

মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বাড়ছে। তবে সেই হারে বাড়ছে না মোটেও কর্মসংস্থান। বাংলাদেশ বর্তমানে রেকর্ড পরিমাণ ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে উদ্যোক্তাদের কারণে। বিগত এক দশক ধরে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের ওপরে রয়েছে। গত দুই অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৭ শতাংশ। যদি কোন রাষ্ট্রে মাথাপিছু বার্ষিক আয় ১২ হাজার ৪৭৬ ডলার হয় তবে তাকে উচ্চ আয়ের দেশ হিসেবে পরিগণিত করে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ এখন এক হিসাবে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। এক হাজার ২৬ ডলার মাথাপিছু আয় হলেই প্রবেশ করা যায় এই স্তরে। গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) মাথাপিছু আয় হয়েছে এক হাজার ছয় শ’ দুই ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল তা এক হাজার ৪৬৬ ডলার। জিডিপির এত প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও অনুরূপ হারে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। এক দশক আগে যেখানে প্রতিবছর গড়ে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ কর্মসংস্থান বাড়ত, সেখানে এখন তা কমে ৯ লাখ ৩৩ হাজারে নেমেছে। গত পাঁচ বছরে দেশে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে গত দেড় বছরে কর্মসংস্থান হয়েছে আরও ১৫ লাখ মানুষের। বিনিয়োগ বিকাশ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সরকারের নীতিগত সহায়তা খুব জরুরী। বিশ্বব্যাংকের মতে, কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ তৈরি পোশাক খাতে কর্মসংস্থানে ধীরগতি। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পোশাক শিল্প খাত বড় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হলেও বিভিন্ন চাপের মুখে কারখানার সংখ্যা বাড়ছে না। আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারেও চাপ রয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান দ্রুত বাড়ানো প্রয়োজন। ২০০৩ থেকে ২০১০ সালে এই খাতে গড়ে প্রতিবছর তিন লাখ শ্রমিক যোগ হয়েছে। ২০১০ সালের পরে এ সংখ্যা ৬০ হাজারে নেমেছে। সার্বিকভাবে এ খাতে মোট কর্মসংস্থানের পরিমান কিছুটা কমেছে। পাশাপাশি চামড়া ও ওষুধের মতো কতিপয় খাতে রফতানি সম্ভাবনা থাকলেও এসব খাত পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছে না। গত অর্থবছরে রফতানি বেড়েছে মাত্র দুই শতাংশ। কমেছে রেমিটেন্স। এ দুটি খাতে ধীরগতি কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলছে। ফলে জনমিতিক লভ্যাংশ সংকুচিত হয়ে আছে। অবশ্য মাথাপিছু জিডিপি বেড়েছে আগের সময়ের চেয়ে বেশি। এখন জোরালোও প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এই প্রবৃদ্ধির সুফল নিশ্চিত করতে হলে কর্মসংস্থান বাড়ানো প্রয়োজন। সরকারের হাতে এখন ১৪৫০টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের চেহারা বদলে যাবে। আবার বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে সুদের হার এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিকে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি পাঁচ শতাংশের একটু বেশি। গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আগামী মাস থেকে মূল্যস্ফীতি কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। জিডিপির প্রদত্ত হিসেবে দেখা যাচ্ছে বৃদ্ধির অংশ খুবই কম। কৃষি এখন মোট জিডিপির ১৬ ভাগের মতো। কৃষির ভাগ কমে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে, কৃষিতে উৎপাদন কমছে বরং যে হারে আয় বাড়ছে, তার মধ্যে কৃষির ভাগটা কমে যাচ্ছে। উন্নয়ন ঘটাতে হলে প্রযুক্তিতে উন্নত হতে হবে। অর্থনীতি হতে হবে শিল্পনির্ভর। বাংলাদেশে সেই লক্ষ্যে ব্যাপক সংস্কার হয়েছে। তাই প্রয়োজন এখন সরকারী খাতের পাশাপাশি বেসরকারী খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এজন্য কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দক্ষ শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে সামষ্টিক কর্মকৌশল প্রণয়ন। এজন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে। রাজস্ব নীতি, প্রণোদনা নীতি, রেগুলেটরি নীতি সংশোধন করাও জরুরী।
×