ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্য সম্প্রসারণে

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

বাণিজ্য সম্প্রসারণে

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী পণ্যের চাহিদা বাড়াতে হলে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। দেশে উৎপাদিত অনেক পণ্যই এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। পণ্যের চাহিদা ও বাজার বাড়ার অর্থই হলো রফতানি আয় বৃদ্ধি। এবং তা সম্ভব হলে মধ্যম আয়ের দেশে দ্রুত উন্নীত হওয়ার পথ সুগম হবে বাংলাদেশের জন্য। বর্তমান সরকার ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আরও বারোটি দেশে নতুন দূতাবাস এবং ১৭টি মিশন খুলেছে। সেসব দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার কীভাবে বাড়ানো যায় সে জন্য নিযুক্ত কূটনীতিকদের দেশে ডেকে আনা হয়েছিল এবং কর্মশালায় তাদের এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। এখন তারা উদ্যোগী হলে ব্যবসার দরজা আরও উন্মুক্ত হবে। বিশ্ববাজারের পাশাপাশি সর্বাগ্রে প্রয়োজন প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ঘটানো। দূতাবাসগুলো উদ্যোগী হলে দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের জন্য বাজারজাতকরণে আগ্রহী ও উৎসাহী হয়ে উঠবেই। প্রতিবেশী নেপালে বাংলাদেশী পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সে দেশে বাণিজ্যের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যেই ৭৮ ধরনের পণ্য রফতানি করছে বাংলাদেশ। গত চার বছরে রফতানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় চারগুণ। বাংলাদেশের উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য, ভোগ্যপণ্য, খাদ্যদ্রব্য, শৌখিন গৃহস্থালি পণ্য ও নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা অনীহা থাকায় বাণিজ্যিক সম্পর্ক সেভাবে বাড়েনি। ফলে যে হারে বাণিজ্য বাড়ার কথা তা হয়নি। প্রতিবেশী নেপাল প্রায় সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর দেশ। ভারত ও চীনের পাশাপাশি এখন বাংলাদেশ থেকেও দেশটি পণ্য আমদানি করে থাকে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় ব্র্যান্ডিং করা গেলে নেপালের বাজারে আরও অনেক পণ্যই রফতানি করা সম্ভব। ভারতীয় ও চীনা পণ্যের ওপর দীর্ঘদিন নির্ভরশীল দেশটির মানুষের রুচি ও চাহিদার পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশী পণ্য বেশ ভালই বাজার পেয়েছে। ক্রয়ের ক্ষেত্রে দেশটির মানুষ অনেক সচেতন হওয়ার কারণে মান ও দাম দুটোকেই প্রাধান্য দিচ্ছে তারা। ভারত বা অন্য দেশ থেকে নেপালে পণ্য গেলে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাবার কারণে পণ্যের দামও বাড়ে। কিন্তু ভারত কঁকরভিটা ট্রানজিট অনুমোদন করায় বাংলাদেশ থেকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে নেপালে পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে রফতানিতে অনাগ্রহী। তারা মনে করে, স্থলপথে পণ্য রফতানিতে অনেক জটিলতা ও ঝামেলা রয়েছে। কিন্তু তাদের এই ভ্রান্তি নিরসনে কেউ এগিয়ে আসেনি। অথচ বাংলাবান্ধায় নেপালের ওয়্যারহাউস রয়েছে। সেখান থেকে সরাসরি নেপালে পণ্য যেতে পারে। মধ্যপথে ভারতে কোন চেকআপ করা হয় না। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ এক কোটি ৯৫ লাখ ডলারের পণ্য আমদানির বিপরীতে রফতানি করেছে এক কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য। ২০১৪ সালে ২ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের এবং ২০১৬-১৭ সালে ৪ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়। বাণিজ্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ বিমান ও পর্যটন ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার চাহিদাও বেড়েছে। যা দিন দিন বাড়ছে। নেপালের মানুষের মাথাপিছু আয় কম এমন একটা ধারণা রয়েছে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তারা মনে করছেন, এখানে ভাল ব্যবসা হবে না। পণ্যের তেমন দাম মিলবে না। কিন্তু বাস্তবে শৌখিন জীবনযাপনে অভ্যস্ত নেপালীরা বিদেশী পণ্যই ব্যবহার করে, দেশটি আমদানিনির্ভর হওয়ার কারণে। নেপালে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পণ্য রফতানি কম হলেও বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা আরও বেড়েছে। নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান হওয়ার কারণে দেশটি দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে ধাবিত হয়েছে। নির্মাণ হচ্ছে প্রচুর অবকাঠামো যে সুযোগ অবারিত হতে পারে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য। বাংলাদেশী পণ্য নেপালে প্রতিযোগিতায় সক্ষম বলা যায়। বাংলাদেশী পণ্য সম্পর্কে ধারণাহীন নেপালীদের মধ্যেও পরিবর্তন আসছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে হলে বাংলাদেশকে নেপালের বাজার চাহিদা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিতে হবে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী পণ্য ঠাঁই পাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের এখনই সময়। তাই প্রয়োজন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ।
×