ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয় দিবসের অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

বিজয় দিবসের অঙ্গীকার

রাজধানীসহ সারাদেশে বরাবরের মতো এবারও বিজয় দিবস পালিত হয়েছে সাড়ম্বরে। তবে এবার বিজয় দিবসের আনন্দ-উৎসব, হৈ-হল্লা, মাতামাতি, বিজয়োল্লাস, আনন্দ শোভাযাত্রা, মিছিল-সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ রকমারি মেলার আয়োজন যেন ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সকল রেকর্ড। বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর রাজপথে নেমেছিল লাখো লাখো মানুষের ঢল। বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও তরুণ প্রজন্মের বিজয়োল্লাস ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুরূপ লক্ষ্য করা গেছে চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রংপুরসহ সব বিভাগীয় শহর-নগরে। জেলা-উপজেলা পর্যায়েও আনন্দ-উল্লাসের কোন ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়নি। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বিশ্বনন্দিত বজ্রভাষণ জাতি এদিন শ্রদ্ধাভরে শুনেছে গণমাধ্যমসহ মাইকের মাধ্যমে। সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলের স্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতেও কার্পণ্য করেনি। ভাষণটি ইতোমধ্যে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য বেড়ে গেছে বহুগুণ। ভাষণটির ‘ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছে বহুলাংশে। এ সবকিছু মিলিয়ে এবারের বিজয় দিবসের দ্যোতনা অবশ্যই সুদূরপ্রসারী ও তাৎপর্যবহ। বিষয়টিকে তুলনা করা যেতে পারে ইয়থকোয়েক বা তারুণ্যের জাগরণের সঙ্গে, যে শব্দটি এবার ঠাঁই পেয়েছে অক্সফোর্ড অভিধানে। বিজয় দিবস উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন। প্রদত্ত ভাষণে তিনি তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ত্যাগের মহিমায় নিজেদের দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান। গণতন্ত্র, বাঙালী জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রÑ যে চার নীতির মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল, তরুণ প্রজন্মের মাধ্যমে তা আবার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর পাশাপাশি তিনি এই বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে, স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্র আর কোনদিন যাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে তরুণ প্রজন্মকেই। এবারের বিজয় দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার, দৃপ্তশপথ। তদুপরি সব ধরনের ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, কূপম-ূকতা, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতাসহ যাবতীয় মৌলবাদ-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধেও তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে বিভিন্ন বিজয় মিছিল ও সমাবেশ থেকে। আমরা যদি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কয়েক কোটি শিক্ষার্থীকে পর্যায়ক্রমে সাংস্কৃতিক সপ্তাহ আয়োজনের মাধ্যমে বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য-কৃষ্টি-সংস্কৃতি, সুমহান মুক্তিযুদ্ধ এবং এর চেতনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে তাহলে জঙ্গীবাদ কিছুতেই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। আর এখানেই নিহিত রয়েছে কবিতার জয়, নাটক ও গানের বিজয়বার্তা। দেশের সর্বত্র সংস্কৃতিকর্মীদের কাজ ও দায়িত্ব হলো আমাদের সন্তানদের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ ও মানবিক চেতনার বার্তাটি পৌঁছে দেয়া। মনে রাখতে হবে এ দেশের কবিই উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করেছেন চিরায়ত মানবতার এই সুমহান বিজয়বার্তাÑ ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’ মানুষের মধ্যে সুপ্ত শুভবোধ ও চেতনাকে যদি জাগ্রত করা যায়, মানবিকতা যদি বিকশিত করে তোলা যায় মানুষের মনে, তাহলে জঙ্গীবাদ একেবারে নির্মূল না হোক অন্তত কমে আসবে অনেকাংশে। আলো দিয়ে আলো জ্বালাতে হবে মানুষের হৃদয়ে ও মনে। এবারের বিজয় দিবসে সেই আলোই জ্বলে উঠেছে সর্বস্তরের মানুষ তথা তরুণ প্রজন্মের মন ও মগজে।
×