ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিপিএ সম্মেলনের বিবৃতি

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১০ নভেম্বর ২০১৭

সিপিএ সম্মেলনের বিবৃতি

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব, দ্রুত সঙ্কট সমাধানের আহ্বান সর্বোপরি নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচনের মাধ্যমে মঙ্গলবার শেষ হয়েছে ঢাকা সিপিএ সম্মেলন। উল্লেখ্য, ১ নবেম্বর থেকে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে সিপিএর ৫২টি দেশের মধ্যে ৪৪টি দেশ অংশ নেয়। ১৪৪টি জাতীয় ও প্রাদেশিক আইনসভার ৫৬ জন স্পীকার, ২৩ জন ডেপুটি স্পীকারসহ আইনসভার ৫৫০ জনের বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘কন্টিনিউনিং টু এনহ্যান্স হাই স্ট্যান্ডার্ডস অব পারফরমেন্স অব পার্লামেন্টারিয়ানন্স।’ ক্যামেরুনের ডেপুটি স্পীকার ইমিলিয়া মঞ্জোয়া লিফাফাকে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ৬৩তম কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্স। উল্লেখ্য, একই বছরে বাংলাদেশ দুটি সফল সম্মেলন অনুষ্ঠানের গৌরব অর্জন করল। এর আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন বা আইপিইউ সম্মেলন। এতে করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও সমুজ্জ্বল হয়েছে নিঃসন্দেহে। একই সঙ্গে সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা হয়েছে আরও সংহত ও পরিণত। উন্নয়নশীল বিশ্বে গণতন্ত্রের নিয়মিত অনুশীলন এতে করে অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করা যেতে পারে। সিপিএ সম্মেলনের সাধারণ সভায় মোট ২৪টি সুপারিশ গৃহীত হয়েছে। ৫ নবেম্বর উদ্বোধনী দিনে চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে প্রস্তাব গ্রহণের দাবি উঠেছিল। সিপিএর আইন অনুযায়ী মূল এজেন্ডাভুক্ত না হওয়ার কারণে ঢাকা ঘোষণায় এ বিষয়ে জরুরী প্রস্তাব নেয়ার সুযোগ ছিল না। তবে সিপিএর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে একটি জোরালো বিবৃতি গৃহীত হয়েছে সর্বসম্মতভাবে। এতে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে দ্রুত ও জরুরী পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, জাতিগত নিধন বন্ধ করা এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিয়ে দ্রুত নিঃশর্তভাবে ফিরিয়ে নিতে আহ্বান জানানো হয় মিয়ানমার সরকারের প্রতি। তদুপরি কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর আইনসভাগুলোকে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে চলমান নৃশংসতা, নির্যাতন, জাতিগত নিধন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা, বিভিন্নভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনার নিন্দা জানানোর আহ্বান জানানো হয়। এর পাশাপাশি সিপিএভুক্ত দেশগুলোকে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার যাতে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে, সে জন্য আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টির অনুরোধ জানানো হয়। এতে যে কাজ হবে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। ঢাকার সিপিএ সম্মেলনের বিবৃতির পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিটিও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথে একটি ‘বড় অগ্রগতি’ নিঃসন্দেহে। সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের এক অনির্ধারিত বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে সভাপতির বিবৃতিটি। দুই স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়ার সম্মতি না পাওয়ায় মিয়ানমারের বিষয়ে কোন প্রস্তাব নিতে পারেনি নিরাপত্তা পরিষদ। জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনার পর সর্বসম্মতভাবে গৃহীত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বলপ্রয়োগ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে জাতিসংঘের কর্মকা-ে মিয়ানমারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতি মিয়ানমার সরকারের ওপর বড় ধরনের আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করবে নিঃসন্দেহে, যা প্রকারান্তরে ঢাকায় গৃহীত সিপিএ সম্মেলনের প্রতিধ্বনি বলে প্রতীয়মান হতে পারে।
×