ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

অনাথের পাশে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৯ জুলাই ২০১৭

অনাথের পাশে

অনাথ, অসহায় ও সর্বহারাদের পাশে দাঁড়ানো, সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার মনমানসিকতা ক’জনেরইবা হয়। সমাজ ব্যবস্থায় বরং এরা থেকে যায় উপেক্ষিত। এদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তাভাবনা দূরে থাক, দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের সংস্থান করার জন্যও কেউ সহযোগিতার দু’হাত বাড়িয়ে বলে না, তুমিও মানুষ, তুমিও এই সমাজ, জনজীবনের একজন। সহায়-সম্পদহীন এসব মানুষ সম্পদশালীদের করুণার পাত্র হয়ত। অনেক বিত্তশালী তাদের প্রতি সামান্য অনুকম্পাও প্রদর্শন করে না। বরং মনে করে এরা সমাজ ও দেশের জন্য বোঝা। পিতৃ-মাতৃহীন দরিদ্ররা নিঃস্ব-অসহায় হয়ে পথে পথে ঘুরবে, ভিক্ষাবৃত্তি করবে কিংবা দাসত্বের শৃঙ্খলে বাধা থাকবেÑ এমনটাই বুঝি স্বাভাবিক ও বাস্তব। এসব অবহেলা সয়ে সয়ে তারা আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। শিক্ষা-দীক্ষার আলোকবর্তিকা তাদের কাছ হতে থাকে যোজন যোজন দূরত্বে। রোজগারের পথও থাকে উঁচুতে, হাতের নাগালে ধরা দেয় না। কেবলই কানামাছি, কেবলই অন্ধকার এসে ঘিরে রাখে এ অনাথ অসহায় অবহেলিতদের। অর্থনৈতিক ও শ্রেণী বৈষম্যের সমাজে তারা যেন একেবারেই অপাঙ্ক্তেয়। কেউ সহানুভূতি কিংবা সহমর্মিতার দৃষ্টিতে তাকায় না। নীল আকাশের নিচে মুক্ত বাতাসে দোল খায় না এরা। উদার আকাশ আর বিস্তীর্ণ প্রান্তরে দাঁড়িয়ে বেদনামথিত করুণ ক্রন্দনে ভাসে। সেই কান্নার ধ্বনি শ্রবণের জন্যও অপেক্ষায় থাকে না কেউ। ভাগ্যবিড়ম্বিতরা ভাগ্যবানদের কাছে সামান্য সহমর্মিতা পেলে উথলে উঠতে পারে। শিক্ষা-দীক্ষা ও কর্মসংস্থানের পথ পেলে হতে পারে উজ্জ্বল এবং আলোকিত মানুষ। দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য রাখতে পারে অবদান। সাম্য, মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হতে না পারাদের পাশে তবু কেউ এসে দাঁড়ায়, হাত ধরে। স্নেহের বন্ধনে করে আবদ্ধ। মায়া-মমতায় জাগিয়ে তোলে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার আস্বাদ গ্রহণের অলিন্দে। উপেক্ষার কাঁটাগুলো উপড়ে ফেলে সুন্দরের মতো, ফুলের মতো পারে ফুটে উঠতে। দৃষ্টান্ত রয়েছে এমন অনেক। মানবিক বোধ নিয়ে মানবিক চেতনার উন্মেষ ঘটানোর মতো অনেক প্রাণবন্ত মানুষ এখনও রয়েছে সমাজে। যাদের হাতের স্পর্শে মাটিতেও ফলে সোনা। আলোর রোশনাই ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। নিরন্নের কাল হয়ে যায় উধাও। পূর্ণিমার চাঁদ তাদের অন্তরের চারপাশ করে আলোকিত। সূর্যের সাথী হয়ে পরিভ্রমণ করতে পারে জগত সংসারে। এতসব কথার আয়োজন, দিন কয়েক আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পিতৃমাতৃহীন অনাত হাবিবার জন্য হার্দিক মমতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনা। আট বছর বয়সে জেলায় শিশু পরিবারে আশ্রয় পায় হাবিবা। দশ বছর পর বয়স আঠারো হলে আশ্রয় ছেড়ে যাবার বিধান তাকে পীড়িত করে। আশীর্বাদের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেন পুলিশ সুপার, আয়োজন করেন বিয়ের। বরকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। বেশ ধুমধামের সঙ্গে আশাতীত আয়োজনে বিয়ে সম্পন্ন হয়। জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও বিয়েতে উপস্থিত হয়ে আশীর্বাদ জানান। হৃদয়বান পুলিশ কর্মকর্তাটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিলেন, যা তার মহানুভবতাকেই সামনে আনে। ব্যক্তি উদ্যোগে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত বৈকি। যে কাজটি করার কথা জনপ্রতিনিধিদের, সমাজের গণ্যমান্যদের, সেই কাজে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের এগিয়ে আসা অন্যদের জন্যও হোক প্রেরণাদায়ক। সমাজের অসহায়, অবহেলিত, বঞ্চিতদের প্রতি এভাবে সচ্ছল, বিত্তবানরাও হাত বাড়ালে সমাজ হয়ে উঠবে আলোকিত। সেই আলোকের ঝর্ণাধারা ছড়িয়ে যাবে এখন সর্বত্র। হাবিবা ও বর পুলিশ কনস্টেবল জাকারিয়ার বিবাহিত জীবন হোক সুখের সেই কামনা আমাদেরও।
×