ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

অবসরভোগীর ভোগান্তি লাঘবে

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১৮ জুন ২০১৭

অবসরভোগীর ভোগান্তি লাঘবে

একজন অবসরভোগীর ভোগান্তির শেষ নেই। অবসরভাতা বা পেনশন উত্তোলন করতে গিয়ে একজন বৃদ্ধ মানুষকে বহুবিধ সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে ব্যাংকে সশরীরে উপস্থিত হতে হয়। ঢাকার কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। এই মহানগরী এখন চারদিকেই সুপ্রসারিত হয়েছে। এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাওয়া প্রভূত সময় ও ঝক্কির ব্যাপার। একজন বৃদ্ধ মানুষের পক্ষে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। সব পেনশনভোগীর কষ্টই একই ধরনের। যাতায়াত সমস্যা অনেক সময় বড় হয়ে দেখা দেয়। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে অক্ষম হলেও পেনশন উত্তোলনের ক্ষেত্রে কোন ছাড় নেই। সাধারণত বৃদ্ধ বয়সে মানুষের শরীরের ওপর অতটা নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই নিজ হাতের স্বাক্ষরও গরমিল হয়ে যায়। ফলে তাঁকে বাধ্য হয়ে বার বার স্বাক্ষর ঠিক করতে হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে যদি কোন মাসে পেনশনভোগী ব্যাংকে যেতে না পারেন তাহলে ওই মাসের পেনশন উত্তোলন করা কঠিন হয়ে যায়। শুনতে হয় ব্যাংকারদের বাড়তি কথা। এখানে ব্যাংকারদের কোন দোষ নেই। পেনশন উঠাতে হলে অবশ্যই তাঁর মালিককেই ব্যাংকে আসতে হবে, এটাই নিয়ম। এজন্য প্রতি মাসের প্রথমার্ধ ব্যাংক হয়ে ওঠে প্রবীণদের মিলনমেলা। অবসরভোগীদের আবেদন-নিবেদন শেষ পর্যন্ত অরণ্যে রোদন হয়ে ওঠেনি। মাসে মাসে পেনশনের টাকার জন্য এজি অফিস বা ব্যাংকে গিয়ে লাইন ধরার দিন শেষ হতে যাচ্ছে। প্রবীণবান্ধব সরকার প্রবীণদের এই পেনশন তোলার কষ্টের কথা বিবেচনা করে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে অবসরপ্রাপ্ত সাড়ে ৬ লাখ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘরে বসেই পেনশনের টাকা পাবেন। কাজের সুবিধার জন্য পেনশন বাবদ বরাদ্দ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে না রেখে অর্থ বিভাগের অনুকূলে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে আলাদা একটি পেনশন অফিস করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এটি সফলভাবে বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। পেনশন সুবিধাভোগীরা তাদের জন্য সহজ হয় এমন যে কোন ব্যাংকের যে কোন শাখার হিসাব নম্বর দিতে পারবেন। যাদের ব্যাংক হিসাব নেই বা থাকলেও বিকাশ বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে পেনশন পেতে চান, তাদের টাকা সেখানেই পাঠানো হবে। অর্থাৎ ঘরে বসেই সব ধরনের আর্থিক সুবিধা পাবেন একজন পেনশনভোগী। এতে পেনশনভোগীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ দূর হবে বলে আশা করা যায়। অবসরভোগীদের পেনশন তোলার দুরূহ ও সমস্যাযুক্ত বিড়ম্বনাময় কাজটি সহজ এবং ঝক্কিঝামেলাহীন করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকার সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। আমরা আশা করতে পারি, পর্যায়ক্রমে দেশের সব পেনশনভোগীকে এ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হবে। প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল, বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থা সংস্কার করে আধুনিক, যুগোপযোগী ও বৈষম্যহীন ব্যবস্থা প্রবর্তনে বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিদ্যমান সরকারী পেনশন ব্যবস্থার সংস্কারের প্রথম ধাপে শতভাগ পেনশন নগদায়নের বিধান রহিত করা হয়েছে। পেনশন বাবদ বরাদ্দ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে রাখার পরিবর্তে অর্থ বিভাগের অনুকূলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে চাকরিজীবী স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী আজীবন পেনশন সুবিধা পান। কিন্তু চাকরিজীবী স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত এ সুবিধা পান। এ বৈষম্যও দূর করার কথা ভাবছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংস্কারমূলক এসব পদক্ষেপ সরকারের জনবান্ধবনীতিরই প্রতিফলন।
×