ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিজ চোখে দেখে ক্ষোভ ঝেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী

খোঁড়াখুঁড়ি আর সংস্কার না হওয়ায় বেহাল চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়ক

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৫ মার্চ ২০১৭

খোঁড়াখুঁড়ি আর সংস্কার না হওয়ায় বেহাল চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়ক

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন সড়কের বেহাল দশা। নগরীর এমন কোন সড়ক নেই যেখানে খানাখন্দক নেই। ফ্লাইওভার নির্মাণ, ওয়াসা, কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন পর্যায়ের খোঁড়াখুঁড়ি এবং দীর্ঘ সময় সড়ক সংস্কার না হওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম সফরে এসে বিমানবন্দর এলাকার সড়কের বিবর্ণ দৃশ্য নিজ চোখে পর্যবেক্ষণ করার পর যে ক্ষোভ ঝেড়েছেন তা ছিল চট্টগ্রামের মানুষের মনের কথা। প্রধানমন্ত্রী পতেঙ্গা বোট ক্লাবে ওয়াসার পানি শোধানাগারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে চট্টগ্রামের সড়ক, ব্রিজ-কালভার্টের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে প্রকাশ্যে তাঁর নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে গেছেন, যা শতভাগ সত্য। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মূলত সড়ক সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত। অথচ, এই দুই সংস্থার কর্মকা- নিয়ে নগরবাসী এতই ক্ষুব্ধ যে, তা খোদ প্রধানমন্ত্রীর মুখ দিয়ে প্রকাশ পাওয়ায় সকলের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নগরজুড়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত। তিনি আগামীতে চট্টগ্রামে এসে সড়ক কালভার্টের বর্তমান দৃশ্য যাতে আর না থাকে সেজন্য হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করে গেছেন। এ ঘটনার পর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন গত সোমবার তার অফিসে জাইকা প্রতিনিধি, প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের নিয়ে বৈঠকে বেহাল সড়কগুলো মেরামতের তিন মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই বিধ্বস্ত রাস্তাঘাটের কাজ শুরু হয়ে গেছে। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন আগামী ২ জুনের মধ্যে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সড়কের তিনটি ব্রিজের কাজ যে কোনভাবে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া এ কাজ কিভাবে শেষ করা যাবে তা নিয়ে একটি কর্মসূচীও তিনি চেয়েছেন। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও চসিকের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণে গত এগারো মাস ধরে এর নির্মাণ কাজ শুরু করা যায়নি। আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রকল্প শেষ করার সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে প্রধান প্রধান সড়ক এবং উপ- সড়ক ও গলিগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। সিটি কর্পোরেশনের দাবি, তারা প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাচ্ছে না। ফলে কাজে ধীরগতি। অপরদিকে, ময়লা আবর্জনা নিয়েও নগরবাসী ত্যক্ত বিরক্ত। ইতোমধ্যে মেয়র নিজেই স্বীকার করেছেন, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করেও সুফল আসছে না। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এ অবস্থা। ইতোপূর্বে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে এ কর্পোরেশন সুনাম অর্জন করেছে। যা গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী বোটক্লাবের অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে বলে গেছেন। কিন্তু বিএনপিদলীয় মেয়র ক্ষমতায় আসার পর থেকে চট্টগ্রামের সেই পরিষ্কার চেহারা হতশ্রী হয়ে আছে। বর্তমান মেয়র সরকারদলীয়। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু এখনও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় ঘটাতে পারেননি। যার প্রমাণ বিমানবন্দর সড়কের বেহাল দশা। অপরদিকে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বহদ্দারহাট থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত যে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে তা নগরবাসীর জন্য হয়েছে গোদের উপর বিষফোঁড়া। এই ফ্লাইওভার নির্মাণের বিষয়টিকে গৃহায়ন ও পূর্তমন্ত্রী নিজ মুখে বলেছেন, এগুলো ফ্লাইওভার নয়, ওভারপাস। এসব কথা প্রচারমাধ্যমে এসেছে। সঙ্গত কারণে প্রশ্ন উঠেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ জাতীয় উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রয়োজনীয়তা কোথায়। সড়ক সম্প্রসারণের বিষয়টি উপেক্ষা করে ফ্লাইওভার নির্মাণ কতটুকু সুফল বয়ে আনবে এ নিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদদের মাঝেও শঙ্কা রয়েছে। এসব নিয়ে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের একটি অনুষ্ঠানে পূর্তমন্ত্রীর ওপর চড়াও হয়েছিলেন চট্টগ্রামের এমপি সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন। অনেকটা মারামারি পর্যায়ে চলে যাওয়ার আগে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ অন্যান্য নেতা প্রতিবন্ধকতার দেয়াল সৃষ্টি করে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে সক্ষম হয়। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মহানগরী ও বৃহত্তর চট্টগ্রামকে ঘিরে বর্তমান সরকার উন্নয়নের মহাযজ্ঞ শুরু করেছে। বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, এলএনজি প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুত প্রকল্প এবং বেসরকারী পর্যায়ে বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলছে। এ অবস্থায় মহানগরীর সড়ক-মহাসড়ক ও পরিবেশে বেহাল অবস্থা বিরাজ করলে তা ইতিবাচক না হয়ে উল্টো নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে। মিরসরাই ও আনোয়ারায় বিশেষ ইকোনমিক জোন নিয়ে চট্টগ্রামে বিদেশীদের আনাগোনা বেড়েছে। এছাড়া মহেশখালী ও বাঁশখালীতে এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রকে ঘিরে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সর্বক্ষণিক অবস্থান রয়েছে। কিন্তু বিমানবন্দর সড়ক থেকে শুরু করে নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিইসি মোড় ও মুরাদপুর, ষোলশহর এলাকায় সড়কের যে বেহাল দশা তাতে বিদেশীরা কেন, সাধারণ মানুষও মারাত্মক ক্ষুব্ধ। বলাবলি হচ্ছে, ওইদিন প্রধানমন্ত্রী যদি জিইসি মোড়, মুরাদপুর, ষোলশহর এবং বহদ্দারহাট এলাকা দেখতেন তাহলে তিনি বলে যেতেন তা অনুমান করাও অসম্ভব। কারণ, বিধ্বস্ত রাস্তাঘাটের কারণে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, সাধারণের হাঁটাচলাও দায় হয়ে পড়েছে। চসিক সূত্রে জানা গেছে, মূলত বিমানবন্দর সড়কটির উন্নয়ন না হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় না ঘটা। আর এ কারণেই ওই সড়কের করুণ দশা। বর্তমানে মহানগরীতে পানি, বিদ্যুত সঙ্কটের উত্তরণ ঘটেছে অনেকাংশে। বিধ্বস্ত সড়ক নিয়েই অবস্থা একেবারেই জেরবার। তবে গ্যাস সঙ্কট মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমনকি রাত অব্দিও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত চূলা জ্বলে না। এ অবস্থায় অনেকে গ্যাস সিলিন্ডার কিনে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও বিপদের আশঙ্কায় শঙ্কিত সকলেই। কেননা, বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের যে ঘটনা ঘটছে তাতে শঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
×