ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মায়া

কালবৈশাখী ও সামুদ্রিক ঝড় মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি নিন

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১১ মার্চ ২০১৭

কালবৈশাখী ও সামুদ্রিক ঝড় মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি নিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কালবৈশাখী ও উপকূলীয় সামুদ্রিক ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকলেই কেবল টেকসই উন্নয়ন হবে। আমাদের দেশ যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ তাই যে কোন সময়ই যে কোন দুর্যোগই হানা দিতে পারে। একই সঙ্গে তিনি সময় মতো প্রতিদিনের আবহাওয়া বার্তা জেনে নেয়ার জন্য দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। বলেন, যে কেউ নিজের মোবাইল থেকে ১০৯০ নম্বরে ফোন করে তাৎক্ষণিকভাবে আবহাওয়ার খবর জেনে নিতে পারবেন। এজন্য মোবাইলে কোন খরচ করতে হবে না। শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান মায়া। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। প্রতিবারের মতো এবারও দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবসের প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে ‘দুর্যোগের প্রস্তুতি সারাক্ষণ, আনবে টেকসই উন্নয়ন’। এ সেøাগানকে সামন্যে রেখে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পালিত হয়েছে দুর্যোগ প্রস্তুতি দিসব। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এমন একটি দেশ যেখানে প্রতিবছর মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ হয়ে থাবে। এবারও ইতোমধ্যে দেশে ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী ও টর্নেডো শুরু হয়ে গেছে। এর সঙ্গে শুরু হবে বজ্রপাত ও অগ্নিকা-ের মতো দুর্যোগের ঘটনা। এজন্য দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি হবে আমাদের প্রধান কাজ। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের মতো এদেশে প্রতিবছরই বন্যাকবলিত হয়। বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তবে ব্যাপক প্রস্তুতি ও জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে, বন্যাপ্রবণ ১৯ জেলায় ৬০ হাজার ঘরবাড়ি উঁচু করার প্রদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যেসব দুস্থ ও অসহায় পরিবারে কর্মক্ষম ব্যক্তি নেই অথবা পরিবার প্রধান প্রতিবন্ধী বা মহিলা এবং যাদের ঘরবাড়ি উঁচু করার সামর্থ্য নেই প্রাথমিকভাবে তাদের ঘরবাড়ি উঁচু করে দেয়া হবে। টেকসই উন্নয়নের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বন্যা সহনশীল জাতি গঠনে সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে। মায়া বলেন, উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করার জন্য সরকার ৫৫ হাজার সিপিপি কর্মী প্রস্তুত রেখেছে। মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য পুরাতন ২শ’ মুজিব কিল্লা সংস্কার করা হবে এবং আরও ২০০ মুজিব কিল্লা নির্মাণ করা হবে। ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পেতে প্রত্যেক মহল্লায় সমাজ ভিত্তিক প্রস্তুতি গ্রহণের ওপরও মন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শাহ কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, আমরা যেভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সক্ষম বিশ্বের অন্য কোন দেশ সেভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সক্ষম নয়। এমনি যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক দুর্বল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শাহ কামাল বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দেশের একটি সাকসেস স্টোরি। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে আজ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন এদেশে রৌমারী সীমান্ত দিয়ে বন্যায় যে পরিমাণ পানি দেশে প্রবেশ করে তার ৮ ভাগ আমরা ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে পারি। আর ৯২ ভাগই বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগে এখন আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে না মূলত কৌশল ও ব্যবস্থাপনার কারণেই। শহরের দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সরকার ইতোমধ্যে ৩২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করেছে। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় আবহাওয়া অফিদফতরের ৪ নম্বর সিগন্যাল পড়লেই স্বেচ্ছাসেবীরা প্রস্তুত হয়ে যায়। ৫, ৬, ৭ সিগন্যাল হলে তারা লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়। ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ৪ হাজারের মতো আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ২শ’র মতো আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। দেশের সেনাবাহিনী দুর্যোগ মোকাবেলা কাজ করছে। তবে তিনি বলেন, দেশে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের হুমকি বাড়ছে। এটি মোকাবেলায় আমাদের সারাক্ষণ সচেতন থাকতে হবে।
×