ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

হায় বুড়িগঙ্গা!

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

হায় বুড়িগঙ্গা!

রাজধানীর অন্যতম প্রাণশক্তি বুড়িগঙ্গাকে আদ্যোপান্ত সংস্কার করে সারা বছর ধরে নাব্য আদিরূপে ফিরিয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে গত কয়েক বছর ধরে। তবে এক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দু’পাশে গড়ে ওঠা অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা এবং ২২টি ছোটবড় সেতু। পানি সম্পদ, সড়ক পরিবহন, সেতু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে নির্মিত এসব সেতু নির্মাণের সময় নদী নাব্য রাখার কথা ভাবা হয়নি কখনই। ফলে পানিতে প্রতিদিন অধিক্ষিপ্ত বিপুল পরিমাণের কঠিন ও তরল বর্জ্য এবং নিয়মিত পলি জমে জমে বুড়িগঙ্গা তার রূপ ও যৌবন উভয়ই হারিয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে এসব সেতু নির্মাণের ফলে এখন নদীর খননকাজ প্রায় বন্ধই বলা চলে। এর বাইরেও আরও নানাবিধ সমস্যা সঙ্কটে বুড়িগঙ্গা জর্জরিত, রিক্ত, নিঃস্ব, অসহায়। এহেন মৃতপ্রায় বুড়িগঙ্গাকে বাঁচিয়ে তোলা হয়ত অসম্ভব নয়, তবে দুঃসাধ্য ও ব্যয়বহুল নিঃসন্দেহে। ঢাকার প্রাণপ্রবাহ বুড়িগঙ্গা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে চিন্তাভাবনা চলছে দীর্ঘদিন থেকে। বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি মঙ্গলবার এক হাজার ১২৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এর আওতায় নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংসাই-তুরাগ নদ পুনর্খনন করা হবে। যাতে বুড়িগঙ্গাসহ মহানগরীর চারপাশে বহমান নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ বজায় থাকে সারা বছর। যাতে নৌচলাচল ব্যাহত না হয়। ২০১০ সালে গৃহীত এই প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধিসহ সময় বাড়ানো হয়েছে ২০২০ সাল পর্যন্ত। এ বিষয়ে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, রাজধানী হিসেবে ঢাকার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে যে কোন মূল্যে, যে কোন উপায়ে বাঁচিয়ে তুলতে হবে বুড়িগঙ্গাকে। ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা এখন মৃতপ্রায়। একেই তো শীর্ণ তনু, ততোধিক ক্ষীণপ্রবাহ, বিবর্ণ কালো বর্ণের পঙ্কিল পানি, ভাসমান ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ, অবরুদ্ধপ্রায়। প্রকৃতপক্ষে যা একটি বড়সড় দুর্গন্ধময় নর্দমা বলেই প্রতিভাত হয়। সেই প্রায় প্রাণহীন স্তব্ধপ্রায় দুর্গন্ধকবলিত বুড়িগঙ্গাকে ঘিরে কোন স্বপ্ন দেখা দুঃস্বপ্নের নামান্তর বৈকি। তবু বাস্তবতা হলো, মানুষ স্বপ্ন দেখে নিরন্তর। এরই আরও একটি নমুনা বুড়িগঙ্গাকে ঘিরে বিকল্প একটি হাতিরঝিল নির্মাণের স্বপ্ন। ঢাকা ইনটিগ্রেটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় নেয়া হয়েছে এই প্রকল্প। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করবে বিশ্বব্যাংক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে শিকদার মেডিক্যাল থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত নদীর দুই পাড়ের আধুনিকায়ন, দু’পাশে সিরামিকের তৈরি ওয়াকওয়ে, পর্যটকদের জন্য বিনোদন সুবিধা সংবলিত বিলাসবহুল প্রমোদতরী, বিনোদন পার্ক, অবকাশ যাপনের জন্য আলিশান রিসোর্ট, হোটেল-রেস্তরাঁ সর্বোপরি সর্বাধুনিক নৌবন্দর ও টার্মিনাল। উপরোক্ত দুটো প্রকল্প ও পরিকল্পনা যে খুব অভিনব, আকর্ষণীয়, চিত্তাকর্ষক এ কথা বলতে হবে এক বাক্যে। তবে এর জন্য সর্বাগ্রে যা করণীয় তা হলো একদার কল্লোলিনী স্রোতস্বিনী বুড়িগঙ্গার পরিপূর্ণ পুনরুদ্ধার। কেননা, ভূমিগ্রাসীদের অবৈধ হিংস্র থাবায় ইতোমধ্যেই বুড়িগঙ্গার দুই তীরের অধিকাংশ জমি চলে গেছে বেদখলে। সে সব স্থানে গড়ে উঠেছে বড় বড় অসংখ্য স্থাপনা ও বহুতল ইমারত। সময় সময় সে সবের কিয়দংশ লোক-দেখানো উচ্ছেদ করা হলেও অচিরেই তা চলে যায় দখলদারদের কবলে। কোন কোন স্থাপনা উচ্ছেদ স্পর্শকাতরও বটে। সেক্ষেত্রে দু’পাশের অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা না গেলে নদীর প্রবাহ অক্ষুণœ রাখা সম্ভব হবে না কিছুতেই।
×