ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তার পরে গঙ্গায় আপত্তি

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

তিস্তার পরে গঙ্গায় আপত্তি

একদা প্রমত্তা ও খরস্রোতা তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বাংলাদেশ অংশে কমছে দিন দিন। নদীর উজানে পানির প্রবাহ কমতে থাকায় এবং ভাটি এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ধু ধু বালুচর পড়ায় বর্তমানে একটি সরু নালার আকার ধারণ করেছে কল্লোলিনী তিস্তা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের খবর অনুযায়ী, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাংলাদেশের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ৪ হাজার কিউসেক। বর্তমানে সেটি এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১২শ’ কিউসেকে। নিকট অতীতের গড় প্রবাহের তুলনায় এবার তা নেমে এসেছে ১০ শতাংশে। ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকার তিস্তার উজানে গজলডোবা পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণ করে পানির প্রবাহ অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ফলেই একদার প্রমত্তা নদীটির এহেন করুণ দশা। বর্তমানে বাংলাদেশ অংশে তিস্তার যে মুমূর্ষু অবস্থা প্রত্যক্ষ করা যায়, তাতে একে ‘মৃৎবত’ নদী ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। সে অবস্থায় তিস্তা নদী রক্ষার লক্ষ্যে এবং সেচ প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে ভারতকে ন্যায়সঙ্গত পরিমাণ পানি ছাড়তে দিল্লীকে দীর্ঘদিন থেকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে ঢাকা। সত্যি বলতে কী, তিস্তা চুক্তি এখন বাংলাদেশের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত কোন অবস্থাতেই আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও আইনকানুন ভঙ্গ করে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ অবরুদ্ধ করতে পারে না। অথচ ভারত তাই করেছে প্রথমে গঙ্গা এবং পরে তিস্তা ও অন্যান্য নদ-নদীতে বাঁধ এবং ব্যারাজ নির্মাণ করে। বাংলাদেশ এসব ক্ষেত্রেই ন্যায়ানুগ ও যুক্তিসঙ্গত প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো গঙ্গার পানি নিয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও গঙ্গা ব্যারাজসহ অন্যান্য নদ-নদীর ক্ষেত্রে তা হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রথম দিকে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। তবে শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সফর বাতিল করায় তা আর হয়ে ওঠেনি। অভিযোগ রয়েছে তিনি তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আদৌ আগ্রহী নন। তদুপরি বর্তমানে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সঙ্গে তার খারাপ সময় যাচ্ছে। চলতি বছরের কোন এক সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফরেও তিস্তা চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার সম্ভাবনা সুদূরপরাহত। সে অবস্থায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ‘গুজরাল ডকট্রিনের’ আওতায় তিস্তা চুক্তি সম্পাদন করতে পারে কিনা, সেটি দেখতে হবে। মমতা শুধু তিস্তা চুক্তিতে বাগড়া দিয়েই ক্ষান্ত হননি, বর্তমানে বেঁকে বসেছেন গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণেও। ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানি চুক্তি সই করেছিল বাংলাদেশ। এর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। গঙ্গা চুক্তির সময় বাংলাদেশ ভারতকে গঙ্গা ব্যারাজ করার বিষয়টি অবহিত করলে সম্মত হয় উভয়পক্ষ। এটি নির্মিত হলে বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উভয় অংশেই পানির প্রাপ্যতা ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত হবে। পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজারের বরাতে জানা যায়, মমতা এখন গঙ্গা ব্যারাজেরও বিরোধিতা করছেন। ২০১৪ সালে দিল্লীকে ঢাকার তরফ থেকে এই প্রকল্পের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করা হলেও সাড়া মেলেনি অদ্যাবধি। এটি মমতার বাংলাদেশ বিরোধিতার আরও একটি নমুনা অথচ গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষের আগেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে। অবশ্য তিস্তা চুক্তি ও গঙ্গা ব্যারাজের ব্যাপারে মমতাকে রাজি করানোর দায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের, বাংলাদেশের নয়। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
×