ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

লিসা লুকাস;###;অনুবাদ : আকিল জামান ইনু

বই আমার জীবনে অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বই আমার জীবনে অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে

লিসা লুকাস। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল বুক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হয়ে দুটি নজির গড়েছেন। এ পদে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনি প্রথম নির্বাচিত নারী এবং কৃষ্ণাঙ্গ। দায়িত্ব গ্রহনের পর প্রথম ন্যাশনাল বুক এ্যাওয়ার্ডকে সামনে রেখে কথা বলেছেন টাইম ম্যাগাজিনের সঙ্গে। বলেছেন ছাপা বইয়ের ভবিষ্যত, সাহিত্য নিয়ে নিজস্ব ভাবনা, পছন্দের বই এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে রাজনীতি নিয়ে আপনি প্রথম নারী ও প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসাবে ন্যাশনাল বুক ফাউন্ডেশনের দায়িত্বে এলেন। দুটো প্রথম নজির গড়ে আপনার অনুভূতি? আমার ধারণা ২০১৭ তে বিষয়টি এভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। অবশ্যই আমার ক্যারিয়ারের এই অর্জনকে আমি উপভোগ করছি কিন্তু তার মানে এই নয় তালিকায় আমি একা হয়ে থাকতে চাই। আপনার নেতৃত্বে প্রথম বছরে পুরস্কার বিজয়ী চারজনের মধ্যে তিনজনই কৃষ্ণাঙ্গ। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? এটা সত্যি। কিন্তু এতে অবাক হওয়ার কি আছে? এই যে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসা মানুষজন তাদের কাজের স্বীকৃতি পাচ্ছেন এটা কি চমৎকার নয়! প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা মানুষ, সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়নি এমন কেউ অথবা তারা কেউ অধ্যাপক নন, হতে পারে তারা এশিয়ান আমেরিকান কিংবা ল্যাটিন। আমরা চাই যে চমৎকার দর্শনের উপর গড়ে উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সাহিত্যে তা প্রতিফলিত হোক। নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে মার্কিন সাহিত্যের ভূমিকা কি হতে যাচ্ছে? কেউ ভাবতেই পারেন বাস্তবতার নিরিখে বই পোস্টফ্যাক্ট, কিন্তু আমরা যে সমাজে বাস করি সেটি আরও ভালভাবে জানতে পুস্তকের কোন বিকল্প নেই। ২০১৪‘র পরিসংখ্যান বলছে ২৭% আমেরিকান কোন বই পড়ছে না। এ অবস্থার পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব? বিষয়টি এভাবে দেখুন, যারা বই বাজারজাত করনের সাথে জড়িত তাদের ধারণা ২৭% মানুষ বই নিয়ে বা তাদের পন্য নিয়ে ভাবছে না। আর এখান থেকেই সংশোধনের শুরুটা করতে হবে। ভাবুন সবাই আপনার পাঠক, সবার কথা ভেবেই প্রকাশনা অব্যাহত রাখুন। আরেকটি বিষয় পুস্তকের সহজলভ্যতা। অনেকের ধারণা পুস্তক এমন এক জগত যেখানে প্রবেশাধিকার নেই তাদের। এটিও বদলাতে হবে। লোকালয়ে পুস্তক বিক্রির প্রতিষ্ঠান বাড়াতে তাদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে। ২০১৬ তে প্রকাশিত আপনার প্রিয় গ্রন্থ? অবশ্যই তা এবারে ন্যাশনাল বুক এ্যাওয়ার্ড বিজয়ী চারটি গ্রন্থের একটি। আমি না চাইলেও যদি একটি বেছে নিতে বলা হয় আমি বেছে নিব সি ই মর্গান এর দ্য স্পোর্ট অব কিংস । এক কথায় অসাধারণ। আর ম্যাথু ডেমন্ড এর এভিকটেড। আমরা কারা ব্যবস্থা নিয়ে প্রায়ই কথা বলি। আমার ধারনা এটি আরো অনেক বেশি আলোচনার দাবী রাখে। আপনার জীবন পাল্টে দিয়েছে এমন কোন গ্রন্থ? বই আমার জীবনে অনেক কিছই বদলে দিয়েছে। কিন্তু তার মানে এমন নয় কোন বই পাঠশেষে তা আমাকে বলেছে, ”লিসা লুকাস তুমি এখন নতুন কেউ।” এমন অনেক মুহূর্ত ছিল যখন আমি অনুপ্রাণিত হয়েছে। নিজেকে ভেবেছি আরো নিরাপদ। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ আমাকে শিখিয়েছেন পৃথিবীকে বড় করে দেখতে। কলেজ জীবনে প্রেমে পড়েছিলাম মহৎ সাহিত্যকর্ম সিস্টার ক্যারি, আন্না কারনিনা বা দেয়ার আইজ ওয়ার ওয়াচিং গড -এর। হোয়াইট টিথ আরেকটি গ্রন্থ যা থেকে শেখার ছিল। আর জেমস বাল্ডউইন এমন এক কৃষ্ণাঙ্গ লেখক যিনি আমাদের মনে করিয়ে দেন তুমি ক্রেজি কেউ নও, নও তুমি একা। আপনাকে যদি কেবল একটি বইকে নিজ জীবন প্রকাশের জন্য বেছে নিতে বলা হয়, কি বলবেন? আমি এ ধরণের প্রশ্নের মুখে এই প্রথম। আমার ধারণা, আমার পক্ষে এটি সম্ভব নয়, আর কোন গ্রন্থকেই আমি জীবনের সমান্তরাল বলতে চাই না। আপনার প্রিয় লেখক তালিকায় কে কে আছেন? অবশ্যই বাল্ডউইন। যে যাই বলুক আমি তাকে প্রথম স্থানেই রাখব। ডরোথি পার্কার, এলিনর রুজভেল্ট, জোরা নিয়েল হার্টসন থাকবেন তালিকায়। কোন্ গ্রন্থটি আপনি প্রেসিডেন্টকে পড়তে বলবেন? আমরা সত্যিই ভাগ্যবান যে বারাক ওবামার মত এক নিমগ্ন পাঠককে আমরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেয়েছিলাম। তিনি একবার বলেছিলেন পুস্তক পাঠের মাধ্যমে তিনি একজন প্রকৃত সুনাগরিক হবার শিক্ষা পেয়েছেন। আমি কেবল আশা করতে পারি ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার মতই আমাদের গল্প, জীবন এবং সাহিত্যে আগ্রহী হবেন। আমি তাকে পড়তে বলব সম্প্রতি ফাউন্ডেশন কর্তৃক পুরস্কৃত ক্লডিয়া র‌্যাকিèনের ‘সিটিজেন’ এরলি রাসেল হকচাইল্ডের স্ট্রেজ্ঞার ইন দেয়ার ওউন ল্যান্ড ও ইব্রাম এক্স কেনেডি’স স্ট্যাম্পেড ফ্রম দ্য বিগিনিং।
×