শীতের কুয়াশা
চঞ্চল শাহরিয়ার
শীতের কুয়াশা গায়ে মেখে একদিন
লাল দীঘি পাড়।
একদিন ভোরবেলা রিক্সার ভেতর
তুমি ডেকে নিয়েছিলে। বলেছিলে- আসো
আবার হারিয়ে যাই শীতের পাখির মতো।
এরপর কতোদিন কাজীর দেউড়ী
কতোদিন বহদ্দারহাটের দুপুর
ডেকে ডেকে ফিরে গেছে।
রঙিন চাদরে ভালোবাসা নিয়ে তুমি আর
ঠিক সময়ে আসতে পারলে না।
‘রোদেলা বিকেল’ আর ‘বাতিঘর’ তবু
পৌষ পার্বণে খুঁজছে তোমার
রিনিঝিনি চুড়ি, নূপুরের সুর
বালিকার মতো হাসিমাখা মুখ।
** সেই মেঘনাদবধ থেকে
সাইফুদ্দিন সাইফুল
সেই মেঘনাদবধ থেকে হেকটরবধ অবধি
অনেকটা দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে
মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ নদের তীরে এসেছি
পথের তৃণ গাছের ছায়া একান্তে আপন করে
‘দাঁড়াও পথিক বর’ বলে ক্লান্ত মুছে ফেলি
পিতা রাবণের আহাজারি আকাশের বুক ভেঙে
কবি মধুসূদনের কলমের কালিতে মিশে একাকার
পৌরাণিক কাহিনী দীপ্ত আলোর মতো জ্বলে
চারিদিকে ভয় সংশয় সন্দেহের মোটা মোটা চোখ
তীরবেগে আছড়ে পড়ে কপোতাক্ষ’র দুগ্ধজলে
এখনো সীতারা সতীত্ব প্রমাণে অগ্নিপরীক্ষা দেয়
আর ধর্ম গুরুরা ধর্মের বুকে ইচ্ছেমতো ছুরি চালায়
যুগে যুগে পতিরা এমনি করেই হরণ করে আসছে
যতো মিথ্যে ক্ষমতার দাপট হীন অহমিকা
প্রিয়জন হারানো ব্যথা অশ্রু হয়ে ঝরে
এবং কালের সাক্ষী ‘সতত হে নদ’ কপোতাক্ষ
ভীষণ প্রতিবাদের সুরে নবরূপে রণসাজে
সেই...মেঘনাদবধ...থেকে....
এই কালে মধুকবির ‘মেঘনাদবধ’ মহাকাব্য
সুন্দর মহৎ মননের বিদ্রোহী হয়ে ওঠে...
** ও হেমন্ত ও ভোর
আইউব সৈয়দ
ভোরকে কথা দিয়েছি-শতকের তন্ত্রাচারী কবি
জেগে উঠবে শিশিরে। পাপড়ি মেলে দিয়ে সাজানো
শিল্পঘোরে সূর্যলিপি পাঠে গোলাপ ফোটাবে শত;
জীবনের চরাচর ভেদ করে নির্লোভ নির্মোহে
ঘুরে দাঁড়াবে বিশ্বাসে- সব দীক্ষা গ্রহণ করেও
পর্যটন আলাপনে ছাতিমের দোলায়িত মিশে
শিখিয়ে দেবে ভিন্নতা; রেখাময় উচ্ছ্বাসের সুর
রূপ-সন্ধানে তাকাবে দর্শনের নতুন আবহে।
সে সাথে কথা দিয়েছি- যাযাবর আক্ষেপ খসিয়ে
সুসজ্জিত চর্যাপদ ছন্দের সঙ্গী হবে কবির;
মৃত্তিকাময় আশ্রমে লালনের তরে গা জুড়াবে
সূচনা করবে এক জীবনঘনিষ্ঠ রূপকথা।
ও হেমন্ত রেনেসাঁর বাঁশীতে ফলাও অই মন,
ও ভোর ঋতুর গাঙে ফিরাও তবে সেই যৌবন।
** ছায়াদের ভেতর বাড়ি
ফকির ইলিয়াস
জন্মের ভেতরেই ডুবে যাচ্ছে জনমের দহনপর্ব। যারা
সাঁকো পার হবার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিল, তারা এখন
দেখছে একটি বিশদ মৃত্তিকা ঝুলে আছে তাদের সামনে।
একজন পুঁথিকার সেতুবন্ধন নিয়েই লিখছেন তার সর্বশেষ
পুঁথি। ট্রাফিক সিগনালের মতো লাল-হলুদ-সবুজ বাতি
জ্বালিয়ে একটি আকাশ ক্রমশ বাড়াচ্ছে পাখিদের সম্মান।
লুণ্ঠিত ভোরগুলো ফিরিয়ে দিতে চাইছে মানুষের ছায়া।
ভাঙা চাঁদের আকৃতির মতো হলুদ মার্বেল পাথরে
আয়নাবাজি করছে যেসব রমণী- তারা রূপবদল করবে
বলে, ঢুকে পড়ছে ভেতর বাড়িতে।
ছায়াগুলো সেই বাড়িতেই জড়ো হচ্ছে একে একে। আমরাও
প্রেম চাই, বলতে বলতে নক্ষত্রশাসিত রাতগুলো সেই রমণীদের
চুলে চুলে ছড়িয়ে দিচ্ছে বৃষ্টির বীজবৃত্তান্ত।
শীর্ষ সংবাদ: