ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রেমে ফ্রেমে আগামীর স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

ফ্রেমে ফ্রেমে আগামীর স্বপ্ন

শিশুদের জন্য, শিশুদের হাতে নির্মিত চলচ্চিত্র নিয়ে শুরু হয়েছে দশম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। শিশুরা তাদের অভিভাবকদের নিয়ে বড় পর্দায় চলচ্চিত্র দর্শনের সুযোগ পাচ্ছে। অত্যধিক পড়াশোনার চাপ, জিপিএ ফাইভ অর্জনের লড়াই, কোচিং ক্লাস, খেলাধুলার মাঠ লোপাট হওয়া, বেড়ানোর স্থান সঙ্কুচিত হওয়া ইত্যাদি নিয়ে বাস্তবতার বিপরীতে এই উৎসব কিছু দিনের জন্য হলেও শিশুদের মাতিয়ে রাখবে। কচিকাঁচার আসর, খেলাঘর, চাঁদের হাটের মতো ঐতিহ্যবাহী শিশু-কিশোর সংগঠনগুলো যখন লুপ্ত হওয়ার পথে, তখন এই উৎসব শিশুদের জন্য আশীর্বাদসম। ফ্রেমে ফ্রেমে আগামীর স্বপ্নÑ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হওয়া উৎসবে বাংলাদেশসহ ৫৪টি দেশের দুই শতাধিক শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। সারাদেশের এগারোটি ভেন্যুতে আয়োজিত উৎসবে শিশুরা তাদের অভিভাবকদের নিয়ে বিনামূল্যে চলচ্চিত্র উপভোগ করছে। এবারই প্রথমবারের মতো বিভিন্ন দেশের শিশুদের নির্মিত চলচ্চিত্র নিয়ে থাকছে প্রতিযোগিতা বিভাগ। ছোটদের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা দুর্বল। অর্থমন্ত্রী উৎসবের উদ্বোধনকালে বলেছেন, উৎসবের মধ্য দিয়ে শিশুরা তাদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে। শিশুরা মনের আনন্দে ছবি দেখবে এবং অনেক কিছু জানতে পারবে। এতে তাদের রুচির পরিবর্তন হবে, যা বড় পাওয়া। তবে খেদ প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী এই বলে যে, দেশে পরীক্ষার্থী বেড়েছে, কিন্তু শিক্ষার্থী নেই। এটাই বড় সঙ্কট। শিশুদের জীবন থেকে ফুল পাখি আলো বাতাস হারিয়ে গেছে। যে দেশের শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত দেশের সকল আদর্শগত অবস্থান থেকে ব্যাপক বিচ্যুতি থাকে, তখন অনুমান করা যায়, দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে কুসংস্কার, কূপম-ূকতা ও সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়া হয়েছে। পাকিস্তান যুগে মহাশ্মশানকে যেভাবে গোরস্তান বানানো হয়েছে, তার ধারাবাহিকতা এই একুশ শতকেও প্রকট। সেখানে শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র, শিশুদের জন্য গান পাওয়া দুষ্কর। এই অধিকার অবশ্যই শিশুদের যে সৃজনশীল উপকরণসমৃদ্ধ চলচ্চিত্র দর্শন। শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা জরুরী। চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারী অনুদান দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু শিশুতোষ চলচ্চিত্রের বিষয়টি উপেক্ষিত রয়েছে। আসলে একটি সমন্বিত চলচ্চিত্র নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যেখানে শিশু চলচ্চিত্র গুরুত্ব পাবে। শিশুদের জন্য টিভি অনুষ্ঠান যেখানে হাতেগোনা, সেখানে ভাল কিছু আশা বাতুলতা মাত্র। বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানের অংশ হিসেবে চলচ্চিত্রের ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ গণমাধ্যমের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ হচ্ছে চলচ্চিত্র। যার মাধ্যমে শিশুদের রুচিশীল মানুষ গঠনে অবদান রাখা যায়। শিশুদের জন্য রাষ্ট্রকে আরও দায়িত্বপূর্ণ হতে হবে। এই উৎসব সেই বিষয়টিকে আরও সামনে এনেছে। উৎসব সর্বাত্মক সফল হোক- এই প্রত্যাশা।
×