ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ সমস্যা

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ সমস্যা

শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান হাল কি সেটা বোঝার জন্য বিজ্ঞানী বা গবেষক হওয়ার যে দরকার নেই, এ কথা বোধহয় দেশবাসী উপলব্ধি করেন। যেনতেন কলেজও জাতীয়করণ হচ্ছে যেভাবে, তাতে অনিয়ম ও বৈষম্য এবং বিধিবিধান লঙ্ঘনের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। বেসরকারী কলেজ জাতীয়করণে আর্থিক লেনদেন; তুলনামূলক ভাল ও পুরনো কলেজ বাদ দিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় অপেক্ষাকৃত নতুন কলেজকে জাতীয়করণ করাসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ বেশ প্রচারিত। এমপিওভুক্ত না হওয়া কলেজও জাতীয়করণের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকে মাত্র এক বা দুজন পরীক্ষা দেয় এমন কলেজও আছে তালিকায়। এসব ঘটনার প্রতিবাদে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভের ঘটনা এবং হরতালও হয়েছে। সর্বশেষ জাতীয়করণের দাবিতে চুয়াল্লিশ বছরের পুরনো কলেজের শিক্ষক-ছাত্রদের আন্দোলনে পুলিশের লাঠিপেঠা এবং শিক্ষকসহ দুজনের মৃত্যু বিভীষিকাময় পরিস্থিতির ইঙ্গিত বহন করে। ১৯৭২ সালে স্থাপিত ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটি উদ্বোধন করেছিলেন জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এই কলেজটি জাতীয়করণের সকল শর্তপূরণ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও আশ্বাস প্রদানের পরও সতেরো বছর আগে প্রতিষ্ঠিত একটি ইন্টারমিডিয়েট মহিলা কলেজকে জাতীয়করণ করা হয়। স্বাভাবিক কারণেই যা ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেখানে পাঁচ হাজারের অধিক, সেখানে মহিলা কলেজে মাত্র তিন শ’। জাতীয়করণের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা তৈরি হয়েছিল। যাতে কিছু শর্ত ছিল। কিন্তু সব ক্ষেত্রে শর্ত দেখা হচ্ছে না বলে যেনতেন কলেজ জাতীয়করণ হচ্ছে, যা শিক্ষা নীতির অব্যবস্থাকেই নির্দেশ করে। যদি শিক্ষার মান বাড়ানোই উদ্দেশ্য হয়, তাহলে তা পরিষ্কার করে বলা উচিত। কীভাবে সেটি করা হবে। এত কলেজ জাতীয়করণ হচ্ছে, কিন্তু এগুলো দেখার মতো সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। দেশে এখন সরকারী কলেজের সংখ্যা ৩শ’ ৩৫টি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি কলেজ জাতীয়করণের পদক্ষেপ নিয়েছেন, সরকারী কলেজ নেই এমন ৩শ’ ১৫টি উপজেলায় বেসরকারী কলেজ জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এগুলো যুক্ত হলে সরকারী কলেজের সংখ্যা হবে ৫শ’ ৩৪। পরের বছর আরও শতাধিক কলেজ জাতীয়করণ হলে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৬শ’ ৫০টি যা বিদ্যমান সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। হঠাৎ করে বিপুলসংখ্যক কলেজ জাতীয়করণ করায় শিক্ষক সমস্যা বাড়ছে। বেসরকারী কলেজে অযোগ্য লোক ও শিক্ষক হয়েছে। সরকারী কলেজের শিক্ষকরা বিসিএস ক্যাডারের, তাই কলেজ শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে বাধ্য। যে কোন দেশের উন্নয়নের মূল শর্ত হচ্ছে শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ। মানসম্পন্ন শিক্ষা ছাড়া শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। জাতীয়করণ হচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সরকারী কলেজের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা জরুরী। জাতীয়করণ মানে শুধু সরকারী তহবিল থেকে শিক্ষকদের বেতন ভাতা নয়। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মানোন্নয়নের দায়িত্বও সমানভাবে সবার ওপর বর্তায়। জাতীয়করণ হলেই শিক্ষার মান বাড়বে এমনটা নয়। বেসরকারীভাবে ভাল চলতে থাকা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের পর মানের অবনতি ঘটছে। তাই জাতীয়করণের লক্ষ্যে তৈরি কলেজের তালিকা পুনর্মূল্যায়ন করা যেতে পারে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের চেয়ে শিক্ষার উন্নয়নকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। শর্তপূরণে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেয়া সঙ্গত। সমস্যা যে আদৌ রয়েছে, থাকলেও তার সুরাহা দরকার। এ কথা বুঝতে হবে কর্তৃপক্ষকে। যেন আর আন্দোলন এবং জীবনদান করতে না হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।
×