ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২২ নভেম্বর ২০১৬

ঢাকার দিনরাত

বলেছিলাম নবেম্বর এলে বাতাসে খানিকটা মিষ্টি হাহাকারের সঙ্গে শীতের গন্ধও মেলে! আর মেলে গানের জোড়া উৎসব- একেবারে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসব। ‘লিট ফেস্ট’ নামে সাহিত্যের একটা উৎসবও হচ্ছে গত কয়েক বছর নবেম্বরে, সেখানেও রয়েছে গান, এমনকি নাটকও। সব মিলিয়ে ঢাকাবাসীর নবেম্বর উৎসবময়। কাল বাদে পরশু শুরু হচ্ছে নবেম্বরের সবচেয়ে বড় উৎসব- উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব। এইসব অসুখ বিসুখ জনকণ্ঠের চলতি সপ্তাহের সমাজ ভাবনার বিষয়- রাজধানীর রোগ: ডাক্তার কোথায়? হ্যাঁ ঢাকা ধুঁকছে নানা রোগে, আর ঢাকাবাসী? ঢাকায় বসবাসের কারণে কিছু ব্যাধির শিকার হচ্ছে মানুষ, বিশেষ করে বায়ুদূষণের ফলে মানবদেহের ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে। তবে ঢাকায় এখন যেহেতু গোটা দেশের তুলনায় বিপুল সংখ্যক মানুষ বসবাস করে তাই দেশে বড় ধরনের কোন রোগের শঙ্কা মানে ঢাকাবাসীরও শঙ্কা। ক’দিন আগে আমরা পেরিয়ে এলাম বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। শনাক্ত হচ্ছে না বলে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) ২০১৬ সালের ডায়াবেটিস দিবসের জন্য থিম নির্ধারণ করে- ‘নজর রাখুন ডায়াবেটিসে’। এবারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ডায়াবেটিস রোগ শনাক্তের ব্যাপারে। ডায়াবেটিস বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ^ ডায়াবেটিস দিবস (১৪ নবেম্বর) বহাল থাকতেও এবারের বিশ^ স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছিল ডায়াবেটিসকেই। এ থেকে সহজেই বুঝে ওঠা যায় যে বিশ^ব্যাপী ডায়াবেটিস রোগকে কতটা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে প্রায় ৯০ লাখ, বছরে বাড়ছে আরও ১ লাখ রোগী। যক্ষ্মার কথাও নতুন করে শোনা যাচ্ছে। মেরুদ-ে চোট পেয়ে শয্যাশায়ী হওয়ার পর লন্ডনে ডাক্তারি ক্যারিয়ার কাটানো একজন প্রবীণ হিতৈষী আমাকে মেরুদ-ের যক্ষ্মার ব্যাপারে সতর্ক করলেন। বললেন, এটাও পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভাল। মানুষের মেরুদ-েও যক্ষ্মা হতে পারে- এমনটি আমার ধারণা ছিল না। গত সপ্তাহে রাজধানীতে যক্ষ্মা সংক্রান্ত কর্মশালায় বহু তথ্য উঠে আসে। এগুলো উপেক্ষা করার মতো নয়। এই রোগ শনাক্তের কাজটিতে রয়ে গেছে বিরাট গলদ। বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী এখনও শনাক্ত হচ্ছে না। শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তকরণ ও ব্যবস্থাপনা এখনও অপর্যাপ্ত। শনাক্ত করার আধুনিক যন্ত্রপাতিরও যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। অন্যদিকে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ব্যাপকভাবে দাতাদের অর্থের ওপর নির্ভরশীল। যক্ষ্মা থেকে রক্ষা পাওয়ার কথা ঢাকাবাসীদের ভাবতে হবে বেশি করে কারণ এই রোগটি বায়ুবাহিত। সেজন্যে রোগপ্রতিরোধে দুর্বল ব্যক্তিকে খুব সহজেই সংক্রমিত করতে পারে। যারা ঘিঞ্জি স্যাঁতসেঁতে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করেন, যারা অপুষ্টির শিকার, ডায়াবেটিসের রোগী এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যক্ষ্মার জীবাণু খুব সহজেই তাদের কাবু করতে পারে। ঢাকায় এমন লোকের সংখ্যা কি কম? ঢাকা লিট ফেস্ট ইংরেজীপ্রেমী লেখক-পাঠক মিলনমেলা ঢাকায় যারা ইংরেজীতে লেখালেখি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্মান পর্বে বিষয় ছিল ইংরেজী সাহিত্য এবং যাদের অভ্যেস আছে ইংরেজী বই পড়ার- মূলত এদের ভেতর আগ্রহ জাগায় কয়েক বছর আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘হে উৎসব’। সেই উৎসবটিই এখন ঢাকা লিট ফেস্ট নামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। এ ধরনের উৎসবের ভাল দিকগুলো আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। প্রথমত ইংরেজীতে আগ্রহী লেখক-পাঠকদের মধ্যে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ ঘটে। একুশের বইমেলা প্রধানত বাংলা বইয়ের পাঠকের জন্য দরকারি উৎসব। অন্যদিকে এই লিট ফেস্টে ছোট্ট করে বইমেলাও হয়ে থাকে যেখানে মেলে ইংরেজী বই। এ উপলক্ষে দু-চারজন বাঙালী লেখকের লেখা ইংরেজীতে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়। সবচেয়ে বড় কথা কয়েকটি দেশ থেকে বেশ ক’জন সাহিত্যিক এসে যোগ দেন এতে, ফলে চাইলে দেশের লেখকরা তাঁদের সঙ্গে ভাববিনিময়ের সুযোগ তৈরি করে নিতে পারেন। আয়োজকদের ভেতর কিছু সীমাবদ্ধতা, অনিয়ম, গোষ্ঠিপ্রীতি- এইসব থাকবে, এটা ভেবে নিয়েও এ ধরনের উৎসব থেকে আমরা ভাল কিছু অবশ্যই পেতে পারি। শনিবার শেষ হলো তিন দিনব্যাপী ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’। এ বছরে আয়োজনের সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে সাহিত্য উৎসবে আমন্ত্রিত হয়ে এলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ট্রিনিদাদ এ্যান্ড টোবাগোর লেখক-ঔপন্যাসিক ভি এস নাইপল। সাহিত্য পুরস্কারের জগতে সবচেয়ে সম্মানজনক নোবেল প্রাইজ ও ম্যানবুকারসহ বিশ্বের বহু পুরস্কারে ভূষিত তিনি। উপনিবেশ আর অভিবাসন নিয়ে রচিত তাঁর হাউস অফ মি. বিশ্বাস উপন্যাসকে ‘টাইম’ ও ‘দ্য নিউইয়র্ক বুক রিভিউ’ ম্যাগাজিন অভিহিত করেছে ইংরেজী গদ্য সাহিত্যের ‘নতুন দ্রষ্টা’ ও ‘কিংবদন্তি’ হিসেবে। বাংলাদেশে এটাই নাইপলের প্রথম সফর। উৎসবে যোগদানকারী ম্যানবুকারবিজয়ী লেখক ডেবোরাহ স্মিথ জনকণ্ঠকে একটি চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডেও অনেক সাহিত্য উৎসব হয়, কিন্তু ঢাকার উৎসবের মতো মিলনমেলা হয় না।’ শুধু লেখকদের মিলন মেলা নয়, ঢাকা লিট ফেস্ট হয়ে উঠেছে লেখক-পাঠক-সংস্কৃতিবান মানুষের মিলনমেলা। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে আগামীতে বাংলা সাহিত্যের কোন দিকপাল বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন কিংবা পৌরহিত্য করবেন; এবং অবশ্যই দেশের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পণ্ডিতরা, সৃষ্টিশীল ও মননশীল গুণীজনরা এর সঙ্গে বেশি বেশি করে যুক্ত থাকবেন। আগে বাঙালী হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়, এরপর আমরা বিশ্ববাসী। মধুসূদনের বাণী আমরা ভুলে যাইনি- ‘হে বঙ্গভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন, তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি।’ আমাদের আরও প্রত্যাশা থাকবে এখন থেকেই দেশের সেরা সাহিত্যকর্মগুলো যথাযথ অনুবাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাতে করে বহির্বিশ্বের পাঠক বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে স্পষ্ট ও উচ্চ ধারণা লাভ করতে পারে। অর্থমূল্য বিচারে জেমকন সাহিত্য পুরস্কার লেখকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। দেশের সর্বোচ্চ অর্থমূল্য দেয়া হলো এবার ৮ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের পুরস্কার পেলেন কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের ও তরুণ কথাসাহিত্যিক মোস্তাফিজ কারিগর। শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা লিট ফেস্টের সমাপনী দিনে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে লেখকদ্বয়ের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। ‘আবদুল জলিল যে কারণে মারা গেল’ উপন্যাসটির জন্য মঈনুল আহসান সাবের এবং ‘বস্তুবর্গ’ উপন্যাসের পাণ্ডুলিপির জন্য মোস্তাফিজ কারিগর এ পুরস্কার (দুই লাখ টাকা) পেয়েছেন। আগেই বলেছি বাংলাদেশে কোন সাহিত্য পুরস্কার হিসেবে জেমকন সাহিত্য পুরস্কারের অর্থমূল্যই সবচে বেশি। পাশাপাশি বাংলা একাডেমি প্রদত্ত সাহিত্য পুরস্কারের অর্থমূল্য মাত্র এক লাখ টাকা। যা হোক, ঢাকা লিট ফেস্ট নিয়ে একজন তরুণ লেখকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে তুলে দিচ্ছি। তিনি বাস্তব অবস্থাই তুলে ধরেছেন: ঢাকা লিট ফেস্টের বিরুদ্ধে কথা অনেক লেখক বলেছেন। বলে যাচ্ছেন। লিট ফেস্ট কর্তৃপক্ষ যাদের দাওয়াত করে স্টেজে তুলেছেন, তারা এখন বলা বন্ধ করেছেন। গতবার ডেকেছেন, এবার ডাকেননি বলেও এই ফেস্ট সম্পর্কে লেখকরা উল্টাপাল্টা বলছেন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ অগ্রজ লেখক দর্শক হয়ে কোথাও বসে থাকতে রাজি নন। তারা যেমন অন্যের বই পড়তেও চান না, তেমন অন্যের কথা শুনতেও চান না। প্রতিবছর লিট ফেস্টে যাই, টানা বিভিন্ন সেশন শুনি। উপকৃত হই। ভীষণ। সাহিত্যের বাইরে এখানে ফেমিনিজম, পলিটিক্স ও ফিল্ম নিয়ে যে সেশনগুলো হয়, সেগুলোও অতি চমৎকার। এবার যেমন ‘ট্রুথ অর লাইজ’, ‘লিটারেচার অলওয়েজ পলিটিক্যাল’, ‘ন্যাস্টি উইমেন’ সেশনগুলো ছিল অসাধারণ। আমাদের লেখকদের প্রথম আপত্তি ঢাকায় কেন ইংরেজী ভাষী লেখকদের গুরুত্ব দিয়ে এমন একটা ফেস্ট হবে? যেন ইংরেজী বা বিদেশী কোন কিছুই তিনি গ্রহণ করেন না! প্রিয় লেখকের নাম বলতে বললে তিনিই হয়ত ৫ জনের তিনজন বলবেন বিদেশী। বাসায় ব্যবহার করেন হয়ত ৮০ ভাগ দ্রব্য বিদেশী। সিনেমা দেখেন, সঙ্গীত শোনেন তাও অধিকাংশ হয়ত বলিউডি নয়ত ইংরেজী। দ্বিতীয় আপত্তি এটা বাংলা একাডেমিতে কেন হচ্ছে? যেন বাংলা একাডেমিতে অন্যভাষার মানুষ আসতে মানা। কথা বলতে মানা। আমাদের ভাষা আন্দোলনের মূল স্পিরিটটাই হলো, সব ভাষাকে সম্মান জানানো। জ্ঞানচর্চার জন্য গ্রহণ করা। কাজেই পৃথিবীর সব ভাষার মানুষ এই একাডেমিতে আসতে পারবেন নিজের জ্ঞানভিত্তিক যোগাযোগকে সম্প্রসারণ করতে। নিঃসঙ্গতার যবনিকাপাত মানুষের জীবনসায়াহ্ন অনেক বেশি নৈঃসঙ্গের। বিশেষ করে যিনি দূরারোগ্য মারণব্যাধিতে ভোগেন, যিনি অনেকটা জেনেই গেছেন যে তার বিদায়ের ঘণ্টা বাজছে। ড. ফজলুল আলম ফুসফুসের ক্যান্সারে প্রায় মরোমরো অবস্থায় পৌঁছেছিলেন বেশ ক’বছর আগে। তার ভাই দেশের অন্যতম ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসক ফজলুল করিম তখন তার অ্যাগ্রেসিভ ট্রিটমেন্ট করেন। চিকিৎসায় কাজ হয়। তিনি ফিরে আসেন জীবনে, কিন্তু ক’বছরের জন্য! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারটির আধুনিকায়ন ঘটে এই ফজলুল আলমেরই হাতে। যদিও যৌবনের প্রায় পুরোটা সময় তিনি কাজ করেছেন ইংল্যান্ডে। দেশে ফিরে এলে অল্প যে ক’জন তরুণ লেখকের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠে তাদের ভেতর ছিলাম আমিও। বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও প্রায় এক যুগ বলা যায় আমি ছিলাম তার কাছের ‘বন্ধু’। প্রথম থেকেই তাকে ড. আলম বলেই সম্বোধন করতাম, একটু হয়ত বেখাপ্পাই শোনাত অন্যদের কানে। তাকে যিনি ছোটকাকু বলতেন, এবং অধুনা সুনাম অর্জনকারী চলচ্চিত্র ‘ছোট কাকু’ যার কাহিনী নিয়ে নির্মিত সেই ফরিদুর রেজা সাগরকে বলি সাগর ভাই। সাগর ভাইয়ের মা খ্যাতিমান কথাশিল্পী রাবেয়া খাতুনকে ডাকি রাবেয়া আপা। ছোট কাকু সিনেমার প্রিমিয়ারে গিয়েছিলাম শুনে ড. আলম মিটিমিটি হেসে বলেছিলেন, ‘জান তো আসল ছোট কাকু কে?’ সাগর ভাইয়ের বাবা-চাচাদের জীবন সিনেমারই মতো। সেখানে এই ছোট কাকু অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং আশ্চর্য এক চরিত্র- বুদ্ধিদীপ্ত, প্রাণবন্ত, আড্ডাবাজ, অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়। সেই প্রসঙ্গ থাক। ড. আলম অকস্মাৎ চলে গেলেন। এই যে বিদায় না নিয়ে তিনি চলে গেলেন এ নিয়ে তাকে দু’কথা শোনানোর সুযোগ তো আর পাচ্ছি না। বেশ অনেক বছর যাবত রাবেয়া আপা আর সৈয়দ শামসুল হকের জন্মদিন একসঙ্গে পালিত হচ্ছিল মহাসাড়ম্বরে। কয়েকটিতে আমি গেছি। সৈয়দ হকের চিকিৎসা যখন চলছে লন্ডনে সে সময় একদিন ড. আলম বললেন, অনেককাল তার দুই ছেলেমেয়েকে দেখা হয় না। ওদের দেখতে লন্ডনে যাবেন কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই। ছেলেমেয়ের সঙ্গে দেখা করার পর তার সবচেয়ে বড় কর্তব্য হবে সৈয়দ হকের সঙ্গে দেখা করা। হাসপাতালে গিয়ে তার হাত ধরে অভয় দেয়া। ফুসফুসের ক্যান্সার নিয়ে তিনি তো এতগুলো বছর বেঁচে আছেন, প্রতি বছর জোড়ায় জোড়ায় বই লিখছেন। সৈয়দ হকও ভালো থাকবেন। লন্ডন থেকে ঢাকায় চলে আসা, নিজের ফ্ল্যাটে একেবারে একাকী জীবনযাপন- সবই তো লেখার জন্যেই। তার গল্প-উপন্যাস ভিন্ন স্বাদের, এক নিঃশ্বাসে পড়ার মতো। গত কয়েক বছর সব ধরনের সব লেখা ছাপানোর আগে আমাকে পড়তে দিতেন। সব সময় পড়া হতো না ব্যস্ততার জন্যে। রোজার ঈদে তার বাসায় গেলে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন, আর আমি বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলাম, কেননা সেদিন তার বাসায় আমিই ছিলাম একমাত্র অতিথি! আহা। লন্ডনে সৈয়দ হকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল কিনা ড. আলমের আমার জানা হলো না। সৈয়দ হক ঢাকায় ফেরার অল্পকাল পরে প্রয়াত হলেন। ঢাকা ত্যাগের আগে ড. আলম বলেছিলেন, ‘দেখা হলো না, তবে কষ্ট করে দেখা করতে আসার দরকার নেই। যেয়ে মেইল করব।’ প্রতিবার মেইল করেন, ফোনও করেন। এবার তার মেইল পেলাম না, ফোনও নয়। আর আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পাক্কা এক মাস বিছানায় শুয়ে থাকায় সব এলোমেলো হয়ে গেল। কবে তিনি দেশে ফিরলেন, কবে হাসপাতালে ভর্তি হলেন- সব আমার কাছে ব্ল্যাক আউট! ‘সহস্রাব্দ’ নামে একটা সিরিয়াস সাময়িকী সম্পাদনা করতেন ড. আলম। আর পেরে উঠছিলেন না। চাইছিলেন ওটা আমি বের করি। সব স্বত্ব ছেড়ে দিয়েই সেটা চাইছিলেন। আর আমার কথা ছিল, ‘যদি সময় বের করতে পারি তাহলে পত্রিকাটির ভার নেব, তবে আপনিই থাকবেন যথারীতি তার সম্পাদক। আপনার অনুমোদন বিনা একটিও লেখা প্রকাশিত হবে না।’ জনকণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যায় প্রবাসী বাঙালিদের কিছু প্রবণতার সমালোচনা করে লিখেছিলেন তিনি। কালের কণ্ঠের কলামগুলো ধারণ করতো গভীর চিন্তার উপাদান। তার অন্তিমশয্যা হতে পারতো বুদ্ধিজীবী গোরস্তানে, আজিমপুরে নয়। চ্যানেল আইয়ের নিউজ স্ক্রলে টিভি উপস্থাপক হিসেবে উল্লেখিত হলো তার পরিচয়, লেখক হিসেবে নয়! কেন এ কার্পণ্য? একমাত্র জনকণ্ঠকেই দেখলাম যথাযথভাবে ড. ফজলুল আলমের পরিচয় তুলে ধরতে-‘প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক, সংস্কৃতিতাত্ত্বিক’। ড. আলমের প্রস্থানে, নিঃসঙ্গতার যবনিকাপাত হলো বটে। কিন্তু আমরা কেউ কেউ বন্ধুহীন নিঃসঙ্গ ও অভিভাবকহীন হয়ে পড়লাম। ২০ নবেম্বর ২০১৬ [email protected]
×