ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

লবণের দাম

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১ নভেম্বর ২০১৬

লবণের দাম

কয়েক মাস ধরে বেড়ে চলেছে লবণের দাম। ২২ টাকা কেজি প্যাকেটজাত লবণের দাম বেড়ে এখন ৪২ টাকা। মূল্য বৃদ্ধি মানেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর বাড়তি খাঁড়ার ঘা। গত কোরবানি ঈদের আগে থেকে সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজিতে অস্থির লবণের বাজার। দাম নিয়ন্ত্রণে ওই সময় সরকার দেড় লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়। এতেও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় আরও এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। আশা করা হচ্ছিল, আড়াই লাখ টন লবণ দেশে প্রবেশ করলে বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও আমদানিকৃত ক্রুড লবণ দেশে পৌঁছায়নি। বলা হচ্ছে আমদানিকৃত লবণ এখনও দেশে পৌঁছায়নি। ফলে দাম কমছে না লবণের। এখন দ্বিগুণেরও বেশি মূল্য দিয়ে ভোক্তাদের অত্যাবশ্যকীয় এ পণ্যটি কিনতে হচ্ছে। দেশে লবণের চাহিদা, উৎপাদন এবং ঘাটতির তথ্য নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি দেশে লবণের সঙ্কট রয়েছে। আর সরকারের পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে বলা হয়েছে, চাহিদার চেয়ে বেশি লবণের যোগান রয়েছে। আরও বলা হয়েছে ঘাটতি থাকলে আমদানি করার অনুমতি দেবে সরকার, দিয়েছেও। কিন্তু তারপরও খোলাবাজারে লবণের দাম বেড়েই চলেছে। টিসিবির তথ্যমতে, প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলো গত এক বছরের ব্যবধানে লবণের দাম বাড়িয়েছে গড়ে ৫১ দশমিক ১৬ শতাংশ। মানে কয়েক দফা বেড়েছে লবণের দাম। চলতি বছরে দেশে লবণের চাহিদা ছিল ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টন। এর বিপরীতে দেশে উৎপাদন হয়েছে ১৫ লাখ ৫৫ হাজার টন। ঘাটতি ছিল ১ লাখ ৩ হাজার টন। কিন্তু এর বিপরীতে সরকার লবণ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে আড়াই লাখ টন। আরও এক লাখ টন আমদানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফলে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ দেড় লাখ টন বেশি। আগের কিছু লবণও বাজারে রয়েছে। তারপর কেন এই মূল্য বৃদ্ধি? দীর্ঘ সময় চলে গেলেও এর মূল রহস্য কর্তৃপক্ষ উদ্ঘাটন করতে পারেনি। এটা কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা কিনা সেই প্রশ্ন করাই যায়। সাদা চোখে তাকালে বলা যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য লবণ এখন সিন্ডিকেটের কবলে চলে গেছে। এই সিন্ডিকেটই পরিকল্পনা করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। কারণ চাহিদার তুলনায় আমদানি ও সরবরাহ দুটিই বেশি। তাই এই মুহূর্তে দাম বাড়ার কোন কারণ দৃশ্যমান নয়। মুখরোচক সব ধরনের খাবারেই লবণ অপরিহার্য। তাই লবণের দাম বাড়লে এর প্রভাব সব জায়গায় পড়বেÑ এটাই স্বাভাবিক। লবণের দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত তুলে ধরছেন। দাম বাড়ার জন্য সরবরাহে ঘাটতি এবং আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা বলছেন তারা। এমনকি আমদানির বিষয়ে সরকার নমনীয় না হলে দাম আরও বাড়তে পারে বলেও শঙ্কার কথা বলছেন তারা। এবার কোরবানির ঈদের সময় অপরিশোধিত লবণের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছিল। সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে পরিশোধিত লবণের দামও। সেই ধারাবাহিকতা এখনও রয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, দেশে এমন কী সঙ্কট হয়েছে যার জন্য হঠাৎ করে লবণের দাম বাড়বে? বলা হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাব এর অন্যতম কারণ। এই সুযোগে যে যেভাবে পারছে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। লবণকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে সরকার। তাই মূল্য কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে বলে আমরা মনে করি। এটা করা সম্ভব হলে লবণের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য সরকার আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারবে। নিয়ন্ত্রণ এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে। আগে লবণের দাম বৃদ্ধির কারণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানা দরকার। এই মুহূর্তে মন্ত্রণালয়ের কঠোর হওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। আমদানিকৃত লবণ যাতে দ্রুত দেশে আনা যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। লবণের দাম যে কোনভাবে সহনীয় পর্যায়ে আনা হোক।
×