ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

লবণের দাম

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

লবণের দাম

লবণ নিয়ে তেলেসমাতি কায়-কারবার শুরু হয়েছে। বিষয়টি অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত। লবণ এমন একটি খাদ্যবস্তু যা প্রতি বেলায় প্রয়োজন। দেশের বহু গরিব মানুষ দু’মুঠো ভাত খেয়ে থাকে একটি পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচের সঙ্গে খানিকটা লবণ সহযোগে। বলা বাহুল্য, প্রতিটি রান্নায় লবণের দরকার হয়। তবে শুধু খাবার হিসেবেই নয়, লবণের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। সার উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে দ্রব্যটি। বিশেষ করে কোরবানির মৌসুমে পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার জন্য বিপুল পরিমাণে লবণ লাগে। এই সুযোগটিকেই অসাধু ব্যবসায়ীরা কাজে লাগায়। সিন্ডিকেট গড়ে তুলে লবণের দাম বাড়িয়ে দেয়। এবার লবণের দাম প্রায় আকাশে তুলে দিয়েছে তারা। তাই লবণের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা, অর্থাৎ ন্যায্য দামে মানুষের লবণ কেনা নিশ্চিত করার পাশাপাশি লোভী অসাধু চক্রের ব্যূহ ভেঙ্গে দেয়ার সমান্তরালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়েছে। লবণের দাম বাড়ার প্রভাব পড়বে চামড়া শিল্পে, চামড়া সংরক্ষণের খরচও অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। জানুয়ারিতে লবণের দাম হঠাৎ ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০ টাকা হলে সরবরাহে ঘাটতি ও আমদানিতে বাধার কথা বলেছিলেন ব্যবসায়ীরা। আট মাসে লবণের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, আগামী তিন মাসের আগে লবণ চাষীরা বাজারে লবণ সরবরাহ করতে পারবেন না। এমনিতে লবণ চাষীদের স্বার্থে দেশে লবণ আমদানি নিষিদ্ধ। বিশেষ অবস্থায় সম্প্রতি সরকার দেড় লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। লবণ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিন লাখ টন লবণ আমদানি করা হলে তা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বুধবার বৈঠকে জানানো হয় সাত দিনের মধ্যে দাম কমানো না হলে লবণ আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়া হতে পারে। ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। দেশে লবণের চাহিদা ১৬ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। প্রাপ্ত হিসাবে এ বছর উৎপাদন হয় ১৫ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন কম হলেই বাজার এমন অস্বাভাবিক হয়ে যাবে, এটা কোন যুক্তির কথা নয়। অপরিশোধিত লবণের সঙ্কট ও দাম বাড়ার কথা বলে লবণকল মালিকরা সরকারকে লবণের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে চাপ দিয়েছেন। কিন্তু লবণ চাষীরা বলছেন, এবার মৌসুমে উৎপাদন ভালই হয়েছে। তবে এটাও অস্বীকার করা যাবে না যে, ভারি বৃষ্টির কারণে গতবারের মতো এবারও লবণ চাষে কিছুটা ঘাটতি পড়েছে। এই সুযোগে মজুদদাররা চাষীদের থেকে সস্তায় কেনা লবণ বেশি দামে বাজারে ছাড়ছেন। দীর্ঘকাল লবণের দাম এতটা বাড়তে পারেনি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনের খরচ ৬০ থেকে ৭০ পয়সা। আমাদের দেশে চাষীদের খরচ হয় প্রায় চার টাকা। কারণ নিজস্ব জমি না থাকায় আমাদের চাষীদের প্রভাবশালীদের কাছ থেকে সরকারী জমি ভাড়া নিয়ে লবণ চাষ করতে হয়। লবণ চাষীদের সমস্যার সমাধানকল্পে সরকারের অবশ্যই করণীয় রয়েছে। এ ছাড়া মজুদ লবণ বাজারে ছাড়তে মজুদদারদের বাধ্য করা দরকার। লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং জোরদার করার বিকল্প নেই।
×