ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাগলা ঘোড়া থামান

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পাগলা ঘোড়া থামান

ঈদ-উল-আযহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। তবে সাধারণ মানুষের জন্য আদৌ কোন সুসংবাদ অপেক্ষা করে নেই দৈনন্দিন বাজারে। পাইকারি ও খুচরা- সর্বত্রই লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিবিধ পণ্যের দামের উল্লম্ফন প্রবণতা। গত কয়েক বছর ধরে সব রকম চালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বৃষ্টি, বর্ষা ও বন্যার প্রকোপে আকস্মিক বেড়ে গেছে চালের দাম। বেশি বেড়েছে সরু ও উন্নতমানের চালের দাম। ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল-আযহা, পূজা-পার্বণ উপলক্ষে সুগন্ধি চালের চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। উন্নতমানের কিছু চাল রফতানিও হয় বিদেশে। সে অবস্থায় চাহিদা বাড়ায় এ চালের দাম কিছুটা বাড়া স্বাভাবিক ও সঙ্গত। তবে গরিব, বন্যাদুর্গত ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় নিলে মোটা চালের দাম বাড়া সমীচীন নয়, সমর্থনযোগ্যও নয়। সরকার অবশ্য কাবিখা, টাবিখা, ছিন্নমূল ও ভিজিএফ কার্ডধারীদের সাশ্রয়ী ও স্বল্পমূল্যে চালসহ কয়েকটি নিত্যপণ্য দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকে সামাজিক খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায়। ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির সিদ্ধান্তও রয়েছে। এর বাইরে প্রবল অস্থিরতা ও উল্লম্ফন লক্ষ্য করা যাচ্ছে চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল ও লবণের ক্ষেত্রে। সত্যি বলতে কী, গত ঈদ-উল-ফিতরের আগে থেকেই একেবারে যেন পরিকল্পনা করে চিনির দাম নিয়ে কারসাজিতে নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। ট্যারিফ কমিশন হিসাব করে দেখেছে আমদানি ব্যয়, পরিশোধন খরচ, শুল্ক, ভ্যাট ইত্যাদি পরিশোধ করে প্রতি কেজি চিনির খরচ পড়ে ৫০-৫২ টাকা। অথচ বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়। অনুরূপ অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে ভোজ্যতেল, ডাল ও লবণের ক্ষেত্রেও। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম কমতির দিকে। অথচ আমাদের দেশে ঠিক এর উল্টো। কোন কারণ ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ৮ শতাংশ। জাত ও মানভেদে সব রকম ডালের দাম ২৮ শতাংশ এবং লবণের দাম ৪৮ শতাংশ। কোরবানির ঈদে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বিপুল পরিমাণ লবণের চাহিদা থাকলেও, আকস্মিক লবণের দামের এই দ্বিগুণ মূল্যবৃদ্ধি মেনে নেয়া যায় না। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে দেড় লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমা সত্ত্বেও দেশীয় বাজারে কেন অযৌক্তিকভাবে এসব পণ্যের দাম বাড়ল, তার কারণ অনুসন্ধান করে দেখতে হবে কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকদের। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নানা কারণের মধ্যে অন্যতম দুর্বল বাজার মনিটরিং, অসাধু আমদানিকারক, উৎপাদক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, অকার্যকর টিসিবি সর্বোপরি ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে আদৌ কোন সমন্বয় না থাকা। যে কারণে ভোক্তা ও ক্রেতা স্বার্থ অধিকার ও সংরক্ষণ বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট তথা মুুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী চক্রের বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফা লুটে নেয়ার কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার, মেট্রো চেম্বারসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো খুবই শক্তিশালী এবং সরকারের ওপর তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিও অস্বীকার করা যায় না। জাতীয় সংসদেও ব্যবসায়ীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে ভোক্তা ও ক্রেতা স্বার্থ একরকম উপেক্ষিত ও অনালোচিত থাকছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে লাভ-ক্ষতি-মুনাফা ইত্যাদি থাকবেই। তবে এসবই হতে হবে নীতি-নৈতিকতা, সততা ও নিয়মকানুনের আওতায়, যে ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে।
×