ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটেনের নতুন নেতা

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৫ জুলাই ২০১৬

ব্রিটেনের নতুন নেতা

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিলেন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান হিসেবে সদ্য নির্বাচিত তেরেসা মে। মার্গারেট থ্যাচারের পর ব্রিটেনের নারী প্রধানমন্ত্রী হলেন তিনি। অনেকটা অপ্রত্যাশিত ও নাটকীয়ভাবেই তিনি এই দুটি পদে আসীন হলেন। পদত্যাগী ডেভিড ক্যামেরন সরকারের তিনি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যতটা সহজে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, দেশ পরিচালনা তার জন্য ততটাই কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। দুটি বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে তাকে এই দায়িত্ব নিতে হয়েছে। দলের মধ্যে ইইউতে থাকা না থাকা নিয়ে যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে; তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তাকে। ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর অর্থনৈতিক যে ক্ষতি হবে, তা সামালও দিতে হবে তাকে। আর গণরায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবধারিতভাবেই ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। যার বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল তার। শপথ নেয়ার পর এখন তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ব্রেক্সিট সফল করা, যুক্তরাজ্যের ঐক্যবদ্ধ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং এমন একটি রাজনীতি ও অর্থনীতি নিশ্চিত করা, যা সকলের সুবিধা দেবে। উল্লেখ্য, নয়া প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, ইইউ থেকে বিচ্ছেদ মানে বিচ্ছেদ। যুক্তরাজ্য কোনভাবে ইইউর সদস্য থাকবে না এবং স্বার্থের সবটুকু নিশ্চিত করেই যুক্তরাজ্য ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণ করবে। তেরেসার পূর্বসূরি ক্যামেরনকে ছয় বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করার পর বিদায় নিতে হলো। গত ২৩ জুনের গণভোটের ফলাফল তাকে বাধ্য করেছে পদ থেকে সরে যেতে। ব্রিটেনের ছিয়াত্তরতম প্রধানমন্ত্রী এবং রানী এলিজাবেথের শাসনামলের ত্রয়োদশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা ২০১০ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। শক্ত, কর্মঠ, নিজেকে জাহির না করে সফলভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া একজন হিসেবে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন। ব্যক্তি জীবনকে আড়ালেই রাখতে ভালবাসেন নিঃসন্তান তেরেসা। আধুনিক রাজনীতিকদের মতো কখনোই তাকে প্রচারের আলোর নিচে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। অক্সফোর্ডের এই শিক্ষার্থী রাজনীতিতে আসেন ২০০৭ সালে। থ্যাচার ও তেরেসা দু’জনেই একই দলের সদস্য হলেও পার্থক্য রয়েছে তাদের মধ্যে। থ্যাচার ছিলেন ইইউর ঘোরবিরোধী। আর ইইউতে থেকে যেতে চাইছিলেন তেরেসা। দুর্ভাগ্য এখন তাকেই দিতে হবে ব্রেক্সিটের নেতৃত্ব। তবে তার আগের অবস্থান যাই হোক, এখন তাকেই বলতে হচ্ছে ব্রেক্সিট মানে ব্রেক্সিটই। ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার পর ব্রিটেনকে নানা সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হবে। অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একটা অংশের যে অবস্থান, তা নিরসন করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। ভবিষ্যতের কঠিন ও অনিশ্চিত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমরে দেশকে চালিয়ে নিতে শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রদানের পরীক্ষায় তাকে অবতীর্র্ণ হতে হয়েছে। এখন ইইউ ত্যাগ করার আলোচনায় ব্রিটেনের জন্য সর্বোত্তম সুবিধা যেমন আদায় করতে হবে, তেমনি বিশ্বে ব্রিটেনের জন্য নতুন ভূমিকাও স্থির করতে হবে। গণভোট নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে যে বিভেদ তৈরি হয়েছে, তা নির্ধারণ করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার মতো দুরূহ কাজটিও তাকে করতে হবে। দেশের ভবিষ্যত নিয়ে এক শক্তিশালী নতুন ইতিবাচক দূরদৃষ্টি নিয়ে কাজ করতে না পারলে তা ব্রিটেনের জন্যও বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ব্রিটেনের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী, স্থিতিশীল সরকার যা কমনওয়েলথের সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আশা করে। তেরেসা মে সে ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও সফলতার পরিচয় দেবেন বলে আশাবাদী আমরা। ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাই আমরাও।
×